দেশজুড়ে

৪০০ কোটি টাকা আয়ের রাস্তাটিই জোড়াতালির

দীর্ঘ ১২ বছর ধরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম হিলি স্থলবন্দরের প্রধান সড়কটি সংস্কার করা হয়নি। কয়েক বছর ধরে ইটপাথর দিয়ে দায়সারা জোড়াতালি দিয়ে চলাচলের উপযোগী করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সড়কের বিভিন্ন জায়গা খানাখন্দে ভরে গেছে। ফলে বিভিন্ন সময় ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। অথচ এই সড়কটি ব্যবহার করে সরকার বছরে ৪শ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হিলি বন্দরের পানামা পোর্টের সামনে থেকে চারমাথা হয়ে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পর্যন্ত রাস্তাটি সর্বশেষ ২০১০ সালে সংস্কার করা হয়। প্রতিদিন ওই সড়কটি দিয়ে তিন থেকে চারশ ভারতীয় ট্রাক পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এছাড়াও দেশীয় ট্রাক ও দূরপাল্লার যান চলাচলের মূল সড়ক এটিই।

সরেজমিনে হিলি বন্দর ঘুরে দেখা গেছে, বন্দরের প্রধান সড়কটি ইমিগ্রেশনের সামনে থেকে চারমাথা হয়ে পানামা পোর্টের গেট পর্যন্ত পাকা রাস্তার ওপর ইট ফেলা হয়েছে। চারমাথা থেকে উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটকের সামনে দিয়ে রাজধানী মোড় পর্যন্ত একইভাবে বিছানো হয়েছে ইট। এর ওপর দিয়ে ভারত থেকে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো পাথর, পেঁয়াজসহ নানা ভারী পণ্য নিয়ে চলাচল করছে।

জানতে চাইলে হিলি তিনমাথা মোড়ের বাসিন্দা মন্টু মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, বন্দরের প্রধান সড়কটি আমাদের গলার কাঁটা হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে প্রচুর ধূলা বালি আর বর্ষা মৌসুমে পানিতে শহরের মানুষের ভোগান্তি পৌঁছায় চরমে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার কাজ শুরু হবে বলে শোনা গেলেও এখনও না হওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ।

Advertisement

হিলি কাস্টমের তথ্য বলছে, ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের প্রথম ৭ মাসে (জানুয়ারি) পর্যন্ত হিলি কাস্টমসে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ১৭৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থ বছরের (২০২১-২০২২) জানুয়ারি মাস পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৩৮ কোটি টাকা।

এছাড়া ২০২০-২১ অর্থ বছরে (জুন থেকে জুন) রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৩১২ কোটি টাকা, আদায় হয়েছিল প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থ বছরের প্রথম ৭ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৩৮ কোটি টাকা। জানুয়ারি মাসে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৩ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৪৩ কোটি টাকা।

জানা গেছে, হিলি-জয়পুরহাট সড়কের শান্তিমোড়, রাজধানী মোড়, হিলি-দিনাজপুর সড়কের ফকিরপাড়া, হিলি-ঘোড়াঘাট সড়কের ডাঙ্গাপাড়া, জালালপুরসহ অনেক স্থানে ছোট বড় অসংখ্য গর্ত হয়েছে।

এছাড়াও হাকিমপুরের হিলি চারমাথা পোর্ট থেকে দক্ষিণে রাজধানী মোড় প্রধান সড়ক দিয়ে কোচ, বাসসহ পণ্যবাহী ট্রাকগুলো দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের জয়পুরহাট, বগুড়া, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিরাজগঞ্জ, ঢাকা সিলেট ও চট্টগ্রামে যাতায়াত করে। বর্ষকালে এসব খাদে পানি থাকলে বোঝা যায় না এর অবস্থা। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকায় ভয় আর ভীতি নিয়ে চলাফেরা করছে সব ধরনের যানবাহনসহ পথচারীরা। শুষ্ক মৌসুমে কষ্ট করে চলাচল করতে পারলেও বর্ষা মৌসুমে মানুষের ভোগান্তি পৌঁছায় চরমে।

Advertisement

হিলি বাজারের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক সুজা মিয়া বলেন, বাজারের অধিকাংশ রাস্তাগুলোর অবস্থা বেহাল। যাত্রীপরিবহনে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়। অনেক সময় যাত্রীরা রাস্তায় ঝাকুনির ভয়ে অটোতে উঠতে চায়না। ব্যাটারির চার্জ কমে যায়। দিনদিন আমাদের আয় রোজগার কমে যাচ্ছে।

সম্প্রতি হিলির জীর্ণ রাস্তাটি দ্রুত সংস্কারসহ চার দফা দাবি জানিয়ে হিলি হাকিমপুর নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জেলা প্রসাশক ও রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে দিনাজপুরসহ বিভিন্ন দপ্তরকে আহ্বান করা হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর কার্যলয় থেকে গতবছর জুন মাসে প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সবুর স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয় হিলি মহিলা কলেজ থেকে ইমিগ্রেশন শূন্যরেখা পর্যন্ত রাস্তাটি ফোরলেন করার জন্য হাকিমপুর উপজেলার ৩.৯০৫ একর বা ১.৫৮১ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। তবে দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও এখনো জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়নি। জানতে চাইলে হিলি-হাকিমপুর নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমরা হিলি স্থলবন্দরের প্রধান সড়কগুলো দ্রুত সংস্কারের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ বলেন, হিলি স্থলবন্দর থেকে প্রতিবছর সরকারের লক্ষ্যমাত্রার অধিক রাজস্ব আদায় হয়। সেদিক দিয়ে বন্দরের সড়কগুলোতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। স্থলবন্দরের প্রধান সড়কটি সরু ও খানাখন্দে ভরা হওয়ায় পণ্য আমদানি-রপ্তানির ট্রাকসহ মানুষের চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে। বন্দরের সড়কগুলো সংস্কার করলে ভারতীয় ট্রাক আরও বেশি দেশে প্রবেশ করবে। এতে রাজস্ব আরও বেশি আদায় হবে।

জানতে চাইলে দিনাজপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী কামরুল হাসান সরকার জানান, হিলি স্থলবন্দরের চেকপোস্ট গেট থেকে শুরু করে জয়পুরহাট অংশ পর্যন্ত সড়কটি আগে ৪৮ ফুট ধরে নির্মাণকাজের টেন্ডার হয়েছে। জয়পুরহাট অংশের কাজ প্রায় শেষের পথে। আমাদের অংশে ফোরলেন হবে। এটির ওয়ার্ক ওর্ডার হয়তো খুব দ্রুত হয়ে যাবে। এছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। হিলি থেকে ঘোড়াঘাট পর্যন্ত সড়কটির প্রজেক্ট একনেকে পাসের অপেক্ষায় রয়েছে।

এফএ/এমএস