মূল সড়ক থেকে স্টেডিয়ামে ঢোকার পথেই চোখে পড়ে লাক্কাতুরা টি স্টেট। দুইটি পাতা একটি কুড়ির শহরের অন্যতম প্রধান চা বাগান এই লাক্কাতুরা। যার এক পাশে অবস্থিত ব্রিটিশ স্থাপত্যশৈলীসমৃদ্ধ সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। এই মাঠের প্রবেশপথে চা বাগানের সৌন্দর্যে বিমোহিত হতে বাধ্য যে কেউ।
Advertisement
স্টেডিয়ামের বাইরে যেমন সবুজে ঘেরা প্রকৃতি, তেমনি ভেতরেও আছে গ্রিন গ্যালারি। যেখানে প্রথাগত চেয়ারের বদলে সবুজ ঘাসের ওপরেই বানানো হয়েছে গ্যালারি। অনেকটা বাইরের দেশগুলোর মতোই। ব্রিটিশ স্থাপত্যশৈলীর ভবনের সঙ্গে এই সবুজ গ্যালারি মাঠের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে বহুগুণে।
শুধু যে বাহ্যিক সৌন্দর্যেই সবাইকে মুগ্ধ করে লাক্কাতুরার এই স্টেডিয়াম, তা কিন্তু নয়। মাঠের খেলায়ও থাকে প্রাণ, ট্রু স্পোর্টিং উইকেটে দুই দলের লড়াই হয় সমানে সমান। যার প্রমাণ মিলেছে ২০২০ সালে হওয়া সবশেষ আন্তর্জাতিক সিরিজ কিংবা তারও আগের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেটে।
কিন্তু আক্ষেপের বিষয় হলো, সম্প্রতি সিলেটের এই বিভাগীয় স্টেডিয়ামেও দেখা যাচ্ছে রানখরা। ব্যাটিংবান্ধব উইকেটের বদলে বোলাররা বিশেষ করে স্পিনাররা আধিপত্য বিস্তার করছে লাক্কাতুরার এই মাঠে। যা দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য একরাশ হতাশার খবরই বটে।
Advertisement
হঠাৎ এই মাঠ নিয়ে কেনো এতো আলোচনা? কারণ সোমবার থেকে লাক্কাতুরার এই মাঠেই শুরু হচ্ছে বিপিএলের তিন দিনের সিলেট পর্ব। ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা ঘুরে আগামী তিন দিন এই সিলেটেই হবে বিপিএলের পরবর্তী ছয়টি ম্যাচ। কিন্তু এই পর্ব শুরুর আগে উঠছে প্রশ্ন, এবার রানোৎসব হবে তো লাক্কাতুরায়?
ঐতিহাসিকভাবেই মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রান হয় তুলনামূলক কম। এর বিপরীত চিত্রই দেখা যায় চট্টগ্রাম ও সিলেটের মাঠে। বিপিএলের চলতি আসরেই যেমন চট্টগ্রাম পর্বের আট ম্যাচে প্রথম ইনিংসে গড়ে রান হয়েছে ১৬৫ করে। দলগুলো ১৭০ ছাড়ানো ইনিংস খেলেছে ছয়বার।
সেই ধারাবাহিকতায় সকলের প্রত্যাশা চট্টগ্রামের মতো এবার সিলেট পর্বেও হবে রানোৎসব। অন্তত বিপিএলের সবশেষ আসরের অভিজ্ঞতা থেকে এমনটাই চাওয়া সবার। যেখানে তিন দিনের ছয় ম্যাচে প্রথম ইনিংসে রান হয়েছিল ১৫৯ গড়ে। দলগুলো ১৬০ ছাড়িয়েছিল পাঁচবার।
কিন্তু এবার কি সেই চিত্র দেখা যাবে সিলেটে? সাম্প্রতিক অবস্থা বিবেচনা করলে আশাবাদী হওয়ার সুযোগ নেই একদমই। বিপিএল শুরুর ঠিক আগে লাক্কাতুরার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম ও এর পাশের একাডেমি মাঠে হয়েছে ওয়ানডে ফরম্যাটের ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপ।
Advertisement
টুর্নামেন্টের ফাইনালসহ চারটি ম্যাচ হয়েছে বিপিএলের ভেন্যু সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। যেখানে প্রথম ইনিংসের গড় সংগ্রহ ছিল মাত্র ১৮৮ রান। চার ম্যাচের মাত্র একটিতে দেখা মিলেছে ২০০ ছাড়ানো স্কোরের। এমনকি ১৭৭ রান করেও ম্যাচ জেতার ঘটনাও ঘটেছে এই মাঠে।
সেই ম্যাচগুলোতে দেখা গেছে, খুবই নিচু ছিল এই মাঠের বাউন্স। স্পিনারদের বিপক্ষে ব্যাট চালানোই ছিল দায়। যে কারণে মোসাদ্দেক সৈকত, নাহিদুল ইসলাম, হাসান মুরাদ, নাসুম আহমেদরা রান খরচ করেছেন ওভারপ্রতি তিনেরও কম। এমনকি খণ্ডকালীন স্পিনার আফিফ হোসেন ধ্রুবও এক ম্যাচে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট।
এই টুর্নামেন্টের খেলাগুলো দেখে উইকেটে বাড়তি টার্নের কথা স্বীকার করেছিলেন বিসিবির ক্রিকেট অপারেশনস কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসও। তবে তিনি মোটা দাগে উইকেটকে খারাপ বলতে রাজি ছিলেন না। কিন্তু গুঞ্জন আছে, মূলত উইকেটের এমন আচরণের কারণেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে আসন্ন সিরিজের কোনো ম্যাচ রাখা হয়নি সিলেটে।
এখন কথা উঠতে পারে, ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপ ছিল ওয়ানডে ফরম্যাটের আর বিপিএলে হবে কুড়ি ওভারের ক্রিকেট। কিন্তু উইকেট তো সেই একই। মাসখানেক সময়ের মধ্যে নিশ্চয়ই আমূল বদলে ফেলা সম্ভব নয় কোনো মাঠের উইকেট। আর উইকেটে যদি থাকে স্পিনারদের জন্য বাড়তি সহায়তা, তাহলে সাগরিকার বদলে ফের মিরপুরের ফ্লেভারের ক্রিকেটই হয়তো দেখা যাবে এবার লাক্কাতুরা বিপিএলে।
সোমবার সিলেট পর্বের প্রথম দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে খুলনা টাইগার্সের মুখোমুখি হবে টেবিলের তলানিতে থাকা স্বাগতিক সিলেট সানরাইজার্স। পরের দুইদিনও রাখা হয়েছে সিলেটের দুইটি ম্যাচ। ধুঁকতে থাকা দলটির ঘরের মাঠে ঘুরে দাঁড়াতে ভালো উইকেটের বিকল্প নেই। কিন্তু সেটি আদৌ মিলবে কি না, তা-ই এখন বড় প্রশ্ন।
এসএএস/আইএইচএস