মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মী নিয়োগে পাম বাগান খাতে সাত হাজার ৫০০ আবেদন করেছেন নিয়োগ কর্তারা। গত ২৮ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাড়ে ৭ হাজার আবেদন পেয়েছে বলে বাংলাদেশের মানব সম্পদমন্ত্রলয়ের একটি সূত্রে জনা গেছে।
Advertisement
১৫ জানুয়ারি অনলাইনে আবেদন করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। প্লান্টেশন খাতে বিশেষ ছাড়ে ৩২ হাজার বিদেশি কর্মী কোটায় নিয়োগের জন্য ২৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় আবেদন।
মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম. সারাভানান বলেছেন, এর মধ্যে কিছু আবেদন বাতিল করা হবে কারণ কিছু নিয়োগকর্তা আবেদন করার যোগ্য ছিল না। তারা মূলত বেসরকারি কোম্পানি। আবেদনপত্র নিয়োগকর্তাকেই পূরণ করতে হবে।
মানসম্পদমন্ত্রী শনিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশি কর্মী নিয়োগের জন্য আবেদন করতে পারবে না। সারাভানান বলেছেন, মন্ত্রণালয় প্ল্যান্টেশন খাত ছাড়াও অন্যান্য সেক্টরের নিয়োগকর্তাদের কাছ থেকেও আবেদন পেয়েছে। আবেদনের তারিখ ঘোষণা দেওয়ার পর এই আবেদনগুলো নিয়োগকর্তারা জমা করেছেন।
Advertisement
এদিকে বিদেশি কর্মী নিতে নিয়োগকর্তাদের চাহিদাপত্র বা মূল ভিসা অনুমোদন দেওয়া শুরু করেছে মালয়েশিয়া। বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) ৩ হাজার মেয়াদোত্তীর্ণ মূল ভিসা নতুন করে অনুমোদন দিয়েছে দেশটি।
এর আগে ২০১৮ সালে বাংলাদেশের বেশ কিছু ভিসা ইস্যু হওয়ার পরও শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ায় সেগুলোর কর্মী যাওয়া স্থগিত হয়ে যায়। পরে সেই মূল ভিসাগুলোর মেয়াদ শেষ হয়। এখন নতুন করে মেয়াদ শেষ হওয়া ভিসাগুলো ইস্যু করছে মালয়েশিয়া সরকার। দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
অন্যদিকে, ২৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে নতুন কর্মী নেওয়ার আবেদন। প্ল্যান্টেশন খাতে বিদেশি কর্মী নিতে সরকারের কাছে আবেদন করছেন দেশটির নিয়োগদাতারা। নতুন এই আবেদন শিগগিরই যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেওয়ার কার্যক্রম চলছে। এছাড়া ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে অন্যসব খাতের জন্য বিদেশি কর্মী নিয়োগের আবেদন করতে পারবেন নিয়োগদাতারা।
এর মধ্যেই আগের ভিসাগুলো নতুন করে অনুমোদনও দিচ্ছে মালয়েশিয়া। মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসাগুলোর অধিকাংশই উৎপাদন খাতের। আর প্রথমদিন অনুমোদন পাওয়া তিন হাজার ভিসা বাংলাদেশের দুটি রিক্রুটিং এজেন্সির বলে জানা গেছে।
Advertisement
এদিকে, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে এখন পর্যন্ত কারিগরি বিষয়গুলো চূড়ান্ত করতে পারেনি বাংলাদেশ। এমনকি দেশটিতে যেতে কর্মীদের কত টাকা খরচ করতে হবে বা অভিবাসন ব্যয় কতো হবে, তা এখনো ঠিক করতে পারেনি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
গেলো বছরের ১৯ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ার সঙ্গে শ্রমবাজার সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ। সমঝোতা স্মারক অনুযায়ি কর্মী নেওয়ার বিমান ভাড়াসহ মালয়েশিয়া অংশের যাবর্তীয় খরচ বহন করবে নিয়োগদাতা। আর বাংলাদেশে পাসপোর্ট করা, মেডিকেল, কল্যাণ বোর্ড সদস্য ফিসহ আনুষঙ্গিক খরচ বহন করবেন কর্মী।
সেই সঙ্গে রয়েছে রিক্রুটিং এজেন্সির সার্ভিস চার্জ। এসব মিলিয়ে বাংলাদেশ অংশে একটি সম্ভাব্য খরচ নির্ধারণ করা হবে বলে সমঝোতা সইয়ের পরই জানিয়েছিল প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। ২১ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছিল, শিগগিরই খরচ নির্ধারণসহ অন্যান্য পদ্ধতি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। কিন্তু এখনও এ বিষয়ে কোনো ঘোষণা দেয়নি মন্ত্রণালয়।
বিদেশে কর্মী পাঠানোর কারিগরি সব বিষয়ের দায়িত্ব জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো-বিএমইটির। প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক শহীদুল আলম বলেন, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী সব সময় বলে আসছেন কর্মীদের স্বার্থ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হবে। অনেক চেষ্টার পর সেই অনুযায়ীই মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলেছে।
এটি মান্ত্রণালয় তথা সরকারের বড় সফলতা। এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা রাখতে কর্মীদের দেশটিতে যাওয়ার খরচ নির্ধারণেও খুবই চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি শাখা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। আশা করা যায় শিগগিরই মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সম্পূর্ণ পদ্ধতি এবং খরচ সম্পর্কে মন্ত্রী একটি সিদ্ধান্ত জানাবেন।
তিন বছরের বেশি সময় বন্ধ থাকায় মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের সংখ্যাও বেশ। তবে, কর্মী পাঠানোর পদ্ধতি ও খরচ এখনো ঠিক না হওয়ায় অনিশ্চয়তায় রয়েছেন অনেকে। কর্মপরিবেশ ও বেতন ভালো থাকায় এবং বাংলাদেশের সঙ্গে আবহাওয়া ও সংস্কৃতির মিল থাকায় বিদেশগামী কর্মীদের প্রথম পছন্দের দেশ মালয়েশিয়া। কিন্তু সমঝোতা স্মারক সইয়ের এতদিন পরেও দেশটিতে যাওয়ার বিষয়ে পরিষ্কার ও বিস্তারিত তথ্য জানতে না পেরে ক্ষোভ ও হতাশার কথা জানিয়েছেন অনেক কর্মী। তারা আশা করছেন, দ্রুত যেন মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়া শুরু হয়।
এমআরএম/জেআইএম