দিনাজপুরের রেললাইনে দিন দিন বাড়ছে দুর্ঘটনা। গত দুই মাসে জেলায় ছোট বড় নিয়ে পাঁচটি ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন তিনজন এবং আহত হয়েছেন ট্রেনচালকন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ট্রেনের বগি। অরক্ষিত রেলগেট, রেলক্রসিংয়ে গেটম্যানদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও দুর্বল রেললইনের কারণে এমন দুর্ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
Advertisement
সর্বশেষ ২ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুরের বিরামপুরে মহাসড়কের ওপর রেলগেটে বেরিয়ার না থাকায় দড়ি টানিয়ে গেট বন্ধ করা হয়। রশি দেখতে না পেয়ে লাইনের ওপর উঠে যায় এক প্রাইভেটকার। একই সময় কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনটি রেলগেটটি অতিক্রম করছিল। এ সময় ট্রেনের ধাক্কায় প্রাইভেটকারের তিন যাত্রী ঘটনাস্থলেই মারা যান।
চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার যশাই রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় যাত্রীবিহীন দোলনচাঁপা এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে বালুবোঝাই একটি ড্রাম ট্রাকের সংঘর্ষ হয়। সঙ্গে সঙ্গে ট্রেনের ইঞ্জিন ও চারটি বগি রেললাইনের পার্শ্ববর্তী ক্ষেতে উল্টে যায়। এতে দুমড়ে মুচড়ে যায় ড্রাম ট্রাকটি। ঘটনায় ট্রেন চালক আব্দুর রশিদ সরকার গুরুতর আহত হন। ১৩ ঘণ্টা পর শুরু হয় ট্রেন চলাচল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেদিন ওই রেলক্রসিংয়ে গেটম্যান মনিরুজ্জামান ছিলেন না।
Advertisement
একই দিন বিকেলে হিলি উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া এলাকায় রেললাইন ভেঙে পড়ায় ঢাকার সঙ্গে পঞ্চগড়, নীলফামারী ও ঠাকুরগাঁয়ের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করতে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা সময় লেগে যায়।
৫ ডিসেম্বর দিনাজপুরের পার্বতীপুরে সারবাহী ওয়াগান ট্রেনের কাপলিং ছিঁড়ে যাওয়ায় লাইনচ্যুত হয়ে যায় তিনটি ওয়াগন। দুমড়ে মুচড়ে যায় রেললাইন। ভেঙে যায় অর্ধশত স্লিপার। এতে ১২ ঘণ্টা পার্বতীপুর-দিনাজপুর ও পার্বতীপুর-নীলফামারী রেলপথে চলাচল বন্ধ ছিল।
গত ২ ডিসেম্বর দিনাজপুরের পার্বতীপুর রেল জংশনে প্রবেশের সময় লালমনিরহাটগামী কমিউটার ট্রেনের একটি বগি লাইনচ্যুত হয়। দুপুর ১টার দিকে স্টেশনের উত্তর লেভেল ক্রসিং গেটে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে রংপুর-লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম মিটারগেজ সেকশনে আন্তঃনগরসহ সব ধরনের ট্রেন তিন ঘণ্টা বন্ধ ছিল।
এ পাঁচটি ট্রেন দুর্ঘটনা বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। তবে অনেক ছোট খাটো দুর্ঘটনা সংবাদপত্রের নজরে আসেনি।
Advertisement
নাম জানাতে অনিচ্ছুক রেলওয়ের লালমনিরহাট ডিভিশনের একজন কর্মকর্তা পাঁচ দুর্ঘটনার বিষয় নিশ্চিত করে বলেন, দুর্ঘটনাগুলো বেশিরভাগ ঘটছে অরক্ষিত রেলগেট, রেলক্রসিংয়ে গেটম্যানদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও দুর্বল রেললাইনের কারণে। রেলওয়ের গেটম্যানরা সতর্ক হলে অনেক দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
এমদাদুল হক মিলন/এসজে/এএসএম