ক্যাম্পাস

কে হচ্ছেন জাবির নতুন উপাচার্য

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ও টানা দুই মেয়াদে নারী উপাচার্য হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) দায়িত্ব পালন করেছেন অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। তার মেয়াদকাল শেষ হচ্ছে আগামী ২ মার্চ। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় মেয়াদে কোনো উপাচার্য থাকার নজির নাই বিধায় জাবির কয়েকজন প্রভাবশালী শিক্ষক উপাচার্য হতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।

Advertisement

১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশের ১১(১) এর ধারা অনুযায়ী, আচার্য সিনেট কর্তৃক মনোনীত তিন ব্যক্তির একটি প্যানেল থেকে অধ্যাদেশের নির্ধারিত নিয়ম ও শর্তাবলী মেনে একজনকে চার বছরের জন্য উপাচার্য নিযুক্ত করবেন। আচার্য যোগ্য মনে করলে পূর্ববর্তী উপাচার্যকে সর্বোচ্চ চার বছরের জন্য পুনরায় দায়িত্ব দিতে পারেন। অধ্যাদেশের কোনো ধারাতেই কোনো ব্যক্তিকে তৃতীয়বার উপাচার্যের দায়িত্ব পালনের বিধান এবং ইতিহাসে এ ধরনের নজির নেই। সে মোতাবেক আগামী ২ মার্চ জাবির উপাচার্য পদ শূন্য হচ্ছে। ফলে জাবির ১৯তম উপাচার্য হতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক তোড়জোড় শুরু করেছেন। তাদের মধ্যে আট শিক্ষকের নাম।

সূত্র জানায়, উপাচার্য হতে চেষ্টা চালাচ্ছেন জাবির অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ও সম্প্রতি উপ-উপাচার্যের (প্রশাসন) দায়িত্ব শেষ করা অধ্যাপক মো. আমির হোসেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজাবিজ্ঞান অনুষদের ডিন, আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’-এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।

তবে তার বিরুদ্ধে ২০০৪-০৫ সেশনের ভর্তি পরীক্ষায় অনৈতিক উপায়ে নিজের ভাগ্নেকে জাবিতে ভর্তির সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সেই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি বিষয়টির সত্যত্যা পেলে সেই ছাত্রের ভর্তি বাতিল করে। তবে এ ঘটনায় অধ্যাপক আমির হোসেনের কোনো শাস্তি হয়নি।

Advertisement

এছাড়াও তিনি বামপন্থী ছাত্ররাজনীতি ও শিক্ষক রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে তিনি আওয়ামীপন্থী শিক্ষক রাজনীতিতে যোগ দেন।

উপাচার্য হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন পরিসংখ্যান বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক এম এ মতিন। তিনি বিভাগের সভাপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) এবং ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি জাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের মহাসচিবের দায়িত্বও পালন করেছেন।

বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালনকালে তিনি জাবি শিক্ষক সমিতির সংবিধান প্রণয়ন, চাকরিবিধি ও সিনেটের কার্যবিধি প্রণয়ণের মত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। এছাড়া শিক্ষার্থীবান্ধব বিভিন্ন উদ্যেগ গ্রহণ করেছিলেন অধ্যাপক মতিন। সৎ, নিষ্ঠাবান ও সর্বজনশ্রদ্ধেয় শিক্ষক হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে।

সম্প্রতি উপ-উপাচার্যের (প্রশাসন) দায়িত্ব পাওয়া ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হকও উপাচার্য হতে দৌড়ঝাপ চালাচ্ছেন। এর আগে তিনি সমাজাবিজ্ঞান ও আইন অনুষদের ডিন ও কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ ও প্রায় অফিসে অনুপস্থিত থাকেন বলে জানা গেছে।

Advertisement

এছাড়া তার বিরুদ্ধেও পূর্বে বামপন্থী ও বিএনপিপন্থী রাজনীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এক সময় তিনি আওয়ামী লীগ বিরোধী প্লাটফর্ম লেখক শিবিরের হয়ে কাজ করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ২০০২ সালে অনুষ্ঠিত সমাজাবিজ্ঞান অনুষদের ডিন পদে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের ব্যানারে সাদা দলের হয়ে নির্বাচন করেছিলেন। তৎকালীন বিএনপিপন্থী উপাচার্য খন্দকার মোস্তাহিদুর রহমানের সময় অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে জয়লাভও করেছিলেন অধ্যাপক মনজুরুল। সম্প্রতি তিনি প্রভাবশালী এক নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে উপ-উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান। একই মাধ্যমকে কাজে লাগিয়েই পুনরায় উপাচার্য হতে চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানা যায়।

উপাচার্য হতে চেষ্টা চালাচ্ছেন গাণিতিক ও পদার্থ বিদ্যাবিষয়ক অনুষদের ডিন ও পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার। তিনি নিজ স্বার্থে দল পরিবর্তনকারী হিসেবে শিক্ষক মহলে পরিচিত। বর্তমান উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় তিনি উপাচার্যবিরোধী আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠনের ব্যানারে আন্দোলন করেন। তবে পরে উপাচার্যের বলয়ে যোগ দেন। অধ্যাপক অজিতের বারংবার দলবদলের কারণে সরকার ও প্রশাসন বেশ বিব্রত বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

উপাচার্য হওয়ার দৌড়ে সম্প্রতি দায়িত্বপ্রাপ্ত কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতারও পিছিয়ে নেই। এর আগে তিনি সমাজাবিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন। উচ্চ পদস্থ আমলাদের মাধ্যমে তিনিও তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

এছাড়া পদার্থবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ও বর্তমান উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মো. নুরুল আলম, নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও জাবির সাবেক শিক্ষক ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক এম. আবুল কাশেম মজুমদার এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরীর নামও সম্ভাব্য উপাচার্যের তালিকায় রয়েছে বলা জানা যায়।

এদিকে, বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামও তার মেয়াদকাল বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করছেন বলে জানা যাচ্ছে।

নতুন উপাচার্য কেমন হবে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. মোতাহার হোসেন বলেন, উপাচার্যের উপর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক বিষয় নির্ভর করে। আমরা চাই উপাচার্য হিসেবে যিনি আসবেন তিনি শিক্ষা-গবেষণাবান্ধব, শিক্ষার্থী বান্ধব হবেন।

বর্তমান উপাচার্য তৃতীয় মেয়াদে থাকার সম্ভাবনার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, এক মেয়াদের বেশি উপাচার্য থাকার দরকার নেই। জাবির উপাচার্য পদে তৃতীয় মেয়াদে থাকবে কি না, সেটা সরকার জানে। তবে তৃতীয় মেয়াদে উপাচার্য হওয়ার নিয়ম আমার জানা নেই।

উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামপন্থী এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা চাই অধ্যাদেশের নিয়ম অনুসরণ করে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন হোক। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে। ফলে নতুন উপাচার্যের গ্রহণযোগ্যতাও বাড়বে। কিন্তু বর্তমান উপাচার্য আবারও থাকতে চায়। যার কারণে আমরা প্রকাশ্যে কোনো দাবি জানাতে পারছি না। যেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের জন্য অকল্যাণকর।

এএইচ/এএসএম