এ যেন মেঘ না চাইতে বৃষ্টি! ইউক্রেন সংকটের কারণে রাশিয়া যেকোনো সময় ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে। আর সে কারণে রাশিয়ার বিকল্প খুঁজতে মরিয়া ইউরোপের দেশগুলো। এটিই এখন দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষ জাহাজ নির্মাতাদের জন্য সুখবর নিয়ে আসছে। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ট্যাংকারের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্ডার পাচ্ছে তারা।
Advertisement
ডেইউ শিপবিল্ডিং অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) জানিয়েছে, এটি ইউরোপ থেকে মোট ১ দশমিক ৮৪ ট্রিলিয়ন অর্থাৎ দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্ডার পেয়েছে। এই অর্ডারের মধ্যে একটি গ্রিক সামুদ্রিক শিপারের জন্য দুটি এলএনজি জাহাজ এবং অন্য ক্লায়েন্টের জন্য ছয়টি কন্টেইনারবাহী জাহাজ নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ব্রিটিশ মার্কেট ইন্টেলিজেন্স কোম্পানি ক্লার্কসন রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, গতবছর ৮৩টি এলএনজি জাহাজের অর্ডার দেওয়া হয়েছিল। যার মধ্যে ১৫টি পায় এই কোম্পানিটি। চলতি বছরও ডেইউ এরই মধ্যে পাঁচটি এলএনজি শিপের অর্ডার পেয়েছে।
কোরিয়া শিপবিল্ডিং এবং অফশোর ইঞ্জিনিয়ারিং - যা হুন্দাই হেভি ইন্ডাস্ট্রিজের সদস্য হিসেবে গণ্য এবং স্যামসাং হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ ২০২১ সালে যথাক্রমে ৩২ এবং ২২টি এলএনজি জাহাজের অর্ডার জিতে নেয়। ক্লার্কসন রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী দক্ষিণ কোরিয়ার তিনটি বৃহত্তম জাহাজ নির্মাণ কোম্পানি গত বছর ৮৩ শতাংশ অর্ডার জিতেছে।
Advertisement
দেশটির সরকারি তথ্য বলছে যে, দক্ষিণ কোরিয়ায় মূল্য অনুসারে জাহাজের অর্ডার আগের বছরের থেকে দুই দশমিক তিনগুণ বেড়ে ২০২১ সালে ৪৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। এটি ২০১৯ সালের চেয়ে ৯৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং গত আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
ইউরোপে জ্বালানি সংকটের কারণে এলএনজি জাহাজের চাহিদা বেড়েছে। যদিও এটি বরাবর পেছনের সারিতে ছিল।
ইউরোপ মূলত পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানি করে। কিন্তু সম্প্রতি ইউক্রেন ইস্যুতে মস্কো গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। ভবিষ্যতে সরবরাহ বন্ধই করে দিতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছে ইউরোপীয় দেশগুলো।
ইউরোপ মধ্যপ্রাচ্য বা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করে রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা কমাতে চায়। ফলে এটি করার জন্য এলএনজি ট্যাংকার প্রয়োজন। ইউরোপীয় সংশ্লিষ্টরা এই ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এলএনজির অর্ডার বাড়িয়েছে।
Advertisement
বিশ্বের প্রাকৃতিক গ্যাসের ১৭ শতাংশ উৎপাদন করে রাশিয়া। আর এই গ্যাসের জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল ইউরোপীয় দেশগুলো। ইউরোপীয় ইউনিয়নের তথ্য বলছে, ১৯৭০ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে ইউরোপ প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি শুরু করে। সম্প্রতি কয়েক বছর ধরে সেই নির্ভরতা আরও বেড়েছে। বছরে এখন ৪০ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাস ইউরোপে সরবরাহ করে রাশিয়া। কিন্তু রাশিয়া দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির অধীনে প্রায় অর্ধেক গ্যাস সরবরাহ করে আসছে। ফলে অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতার কারণে ইউরোপীয় দেশগুলোতে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে প্রায় ছয় বা সাত গুণ বেড়েছে।
সূত্র: নিক্কেই এশিয়া
এসএনআর/জিকেএস