সম্প্রতি ঠাকুরগাঁওয়ের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে শ্বশুরের আল্ট্রাসনোগ্রাম করাতে নিয়ে যান তারেক হাসান নামে এক যুবক। আল্ট্রাসনোগ্রাম শেষে ডাক্তার তাকে জানায়, আপনার শ্বশুরের গল ব্লাডার নেই। এই রোগী বেশিদিন বাঁচবে না। ডাক্তারের কথা শুনে চিন্তায় পড়ে যান তারেক হাসান ও তার শ্বশুর। এ খবর শুনে বাড়িতেও ইতোমধ্যে কান্নাকাটি শুরু। পরে তারা উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুরে যান। সেখানে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পুনরায় শ্বশুরের আল্ট্রাসনোগ্রাম করান তারেক। রিপোর্ট দেখে সেখানকার ডাক্তার জানায়, রোগীর কোনো সমস্যায় নেই। পরে এ খবরটি জানা জানি হলে ওই ডাক্তার তারেক হাসানের হাত ধরে মাফ চেয়ে বিষয়টি মিমাংসা করেন। শুধু তারেক হাসান না, তার মতো অসংখ্য রোগীর স্বজনকে ঠাকুরগাঁওয়ের ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো থেকে ভুল রিপোর্ট দেয়া হচ্ছে। আর এই ভুল চিকিৎসার পেছনে দৌঁড়াতে গিয়ে রোগী যেমন মৃত্যুর দিকে ঝুঁকছে তেমনি আর্থিকভাবেই তারা নিঃস্ব হচ্ছে।অভিযোগ রয়েছে ঠাকুরগাঁওয়ে নিয়ম না মেনেই যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এগুলোর বেশিরভাগেই প্রশিক্ষিত কোনো টেকনিশিয়ান নেই। হাতে গোনা কয়েকজন লোক নিয়ে যেখানে সেখানে গড়ে উঠা এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার মূলত ব্যবহার হচ্ছে ডাক্তারের চেম্বার হিসেবে। রোগী দেখার পর ডাক্তারের সঙ্গে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পূর্ব চুক্তি অনুযায়ী কোনো রোগ বালাই ছাড়াই রোগী বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা দিয়ে থাকেন ডাক্তার। যা ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারেই করতে হবে বাধ্যতামূলক।ঠাকুরগাঁওয়ের বেশির ভাগ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ঘুরে দেখা গেছে, রোগ নির্ণয়ের যন্ত্র থাকলেও এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেই কোনো টেকনিশিয়ান। তাই কোনো রকমে কাজ শেখার পর এখানে টেস্টের পরীক্ষা নিজেই করছেন ম্যানেজারসহ অন্যান্য কর্মচারীরা।ডায়াগনস্টিক সেন্টার সমিতির সূত্র মতে, ঠাকুরগাও সদরে রয়েছে প্রায় ৩৫টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। কিন্তু এর বিপরীতে টেস্ট করানোর জন্য দক্ষ কোনো টেকনিশিয়ান তো নেই, আবার নেই কোনো ডাক্তারও। ঠাকুরগাঁও শহরে সাধারণত, আলট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি, আরবিএস, সিবিসি, সিরাম কিটিনিনসহ বিভিন্ন টেস্ট করানো যায়। কিন্তু এসকল টেস্ট করানোর জন্য অভিজ্ঞ ডাক্তার ঠাকুরগাঁওয়ে নেই। কেবল ৮-৯ জন ডাক্তার আছেন যারা এসকল টেস্ট করান। তাও তারা আবার সবসময় থাকেন না। শহরের টিকাপাড়ার বাসিন্দা এস এম মহসীন জানান, আমার ভাগনি গর্ভবতী। সন্ধ্যা ৭টায় খুব ব্যথা হওয়ায় আল্ট্রাসনোগ্রাম করার জন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাই। কিন্তু কোনো ডায়াগস্টিক সেন্টারে ডাক্তার পেলাম না।ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার সমিতির সভাপতি ও এহিয়া ক্লিনিকের মালিক হাবিব হোসেন জানান, যদি কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডিপ্লোমা টেনিশিয়ান না থাকে তাহলে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিলে আমরা প্রশাসনকে সহযোগিতা করবো। ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন নজরুল ইসলাম জানান, আমরা মাসে একবার করে প্রত্যেক ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শন করি। কোনো সেন্টারে ডিপ্লোমা টেকনিশিয়ান না থাকলে আমরা সেসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেব।রবিউল এহ্সান রিপন/এমএএস/পিআর
Advertisement