মতামত

সরকারি নিয়ন্ত্রণে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল

দীর্ঘদিন ধরেই ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলো একটি শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসার দাবি ছিল। অবশেষে সেই দাবি পূরণ হতে চলেছে।  আইনের মাধ্যমে সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসছে দেশের ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। খসড়া আইনে শিক্ষার্থীদের বেতন-টিউশনসহ সকল ফি সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড নির্ধারণ করবে। এছাড়া আইন লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত ফি নিলে শাস্তির বিধানও রাখা হয়েছে খসড়া আইনটিতে। প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বেতন ও অন্যান্য ফি নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদন নিতে হবে। আইন লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করলে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড ও এক বছরের কারাদণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর আলোকে এই শিক্ষা আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। খসড়া আইনটি চূড়ান্ত হলে শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই এর দ্বারা উপকৃত হবেন বলে আশা করা যায়।  এতদিন ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে ভর্তি, বেতন, টিউশন ফি নির্ধারণে কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ নিজেদের ইচ্ছেমতো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি আদায় করতো। একেক স্কুলের বেতন কাঠামো একেক রকম। সমন্বয় নেই স্কুলগুলোর কারিকুলামেও। ইচ্ছেমত সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়। এছাড়া  দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কেও তেমন কোনো কারিকুলাম নেই।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার এক সাম্প্রতিক বক্তৃতায় বলেছেন-‘বাংলা মাধ্যমের পাশাপাশি ইংরেজি মাধ্যমের পড়াশোনায়ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কারণ আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের বিজয় আমাদের জন্য গর্বের। বাঙালি যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছে। এই বিজয়ের ইতিহাস পড়লে শিশুরা আত্মবিশ্বাসী হয়ে গড়ে উঠবে। আর আজকের শিশুরাই আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার। তাই তাদের আত্মবিশ্বাসী হওয়াও প্রয়োজন।’ এ ব্যাপারে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত টিউশন ফির অভিযোগ অতি পুরনো। সত্যি বলতে কি প্রাথমিক থেকে শুরু করে শিক্ষা গ্রহণের প্রায় প্রতিটি স্তরেই উচ্চমূল্যে কিনতে হচ্ছে শিক্ষাসেবা! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, কোচিংয়ের দৌরাত্ম্যসহ স্কুলের ক্লাস নিয়েও এমন পরিস্থিতিও সৃষ্টি হয়েছে যেখানে শিক্ষার্থীরা ক্লাসের চেয়ে কোচিংয়ে বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। শিক্ষাকে পণ্য বানানোর এই অপচেষ্টা মেনে নেওয়া যায় না। অনেক প্রতিষ্ঠানের মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। এ ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। কথা এই যে, শুধু আইন করলেই হবে না। সেটি যাতে বাস্তবায়িত হয় তাও দেখতে হবে। নতুন আইনের মধ্য দিয়ে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে একটি শৃঙ্খলা ফিরে আসুক- এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এইচআর/পিআর

Advertisement