মতামত

শত্রুর সঙ্গে কেন এই মৈত্রী?

সম্প্রতি রেজা কিবরিয়ার কিছু বক্তব্য ও কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। এর আগে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করায় ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছিলেন তিনি। যে দলকে পিতার হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করেছিলেন, এখন সেই বিএনপির প্রতি তিনি সহানুভূতিশীল বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদসূত্র ও বক্তব্যে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, তিনি সরকার বিরোধিতার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন আরোপ, জনশক্তি রপ্তানিতে বাধা সৃষ্টি ও জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বন্ধ করা সহ জনগণের স্বার্থবিরোধী নানামুখী অপতৎপরায় লিপ্ত।

Advertisement

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে - কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের সর্বশেষ সম্পূরক চার্জশিটকে তিনি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উল্লেখ করেছেন! ক্ষমতা লাভের মোহে অন্ধ হয়ে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য একজন মানুষ কতটা বিবেকহীন ও আদর্শচ্যুত হতে পারে- তার অন্যতম উদাহরণ রেজা কিবরিয়া।

ফিরে দেখা- শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যাকাণ্ড:২৭ জানুয়ারি, ২০০৫; হবিগঞ্জের বৈদ্যের বাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আয়োজিত জনসভায় বক্তৃতা শেষ করে বের হওয়ার সময় সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা শাহ এএমএস কিবরিয়ার উপর আর্জেস গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা এ সংবাদ জানা মাত্র চিকিৎসার জন্য তাকে দ্রুত ঢাকায় আনতে তৎকালীন সরকারের কাছে কয়েকবার হেলিকপ্টার প্রেরণের আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু হেলিকপ্টার দেয়া হয় নি!

চিকিৎসার জন্য জনাব কিবরিয়াকে প্রথমে হবিগঞ্জ, তারপর মাধবপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রশাসনের অসহযোগিতা, ডাক্তারের অনুপস্থিতি, সর্বোপরি চিকিৎসা বঞ্চিত হয়ে তাকে যখন ঢাকার বারডেমে আনা হয়, তখন তিনি মৃত। এ হামলায় তিনি ছাড়াও তাঁর ভাইয়ের ছেলে শিল্পপতি শাহ মঞ্জুর হুদা, আওয়ামী লীগ কর্মী আবুল হোসেন, সিদ্দিক আলী ও আব্দুর রহিম নিহত হন, আহত হন অর্ধশতাধিক।

Advertisement

বর্ণাঢ্য ও কর্মময় জীবনে সাফল্যের শিখরে উঠতে পেরেছেন- এমন ব্যক্তিদের অন্যতম অর্থনীতিবিদ, কূটনীতিবিদ এবং রাজনীতিবিদ শাহ এএমএস কিবরিয়া। মৃদুভাষী, পরোপকারী ও সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। অবসর গ্রহণের পর দেশসেবার ব্রত নিয়ে রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে, শেখ হাসিনা তাঁর যোগ্যতা, মেধা ও সততার মূল্যায়ন করেছিলেন। তাকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত করা হয়।

১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর শেখ হাসিনা তাকে টেকনোক্রেট কোটায় অর্থমন্ত্রী নিযুক্ত করেছিলেন। পরবর্তীতে ২০০১ সালের নির্বাচনে বৈরি পরিস্থিতিতেও বিপুল ভোটে জয়ী হন জনাব কিবরিয়া। ধারণা করা হয় - উজ্জ্বল ভাবমূর্তি, জনপ্রিয়তা ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শক্তিশালী অবস্থানের কারণে বিএনপির প্রতিহিংসার শিকার হন কিবরিয়া।

কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের বিচার:কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগসহ সারাদেশের জনগণ বিচারের দাবিতে সোচ্চার হন। ২০০৫ সালের ১৯ মার্চ এবং ২০ এপ্রিল হত্যাকাণ্ডে দায়েরকৃত দুটি মামলার চার্জশিট দেয়া হয়। উভয় চার্জশিটে শহীদ জিয়া স্মৃতি ও গবেষণা পরিষদের সভাপতি এবং জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম, শহীদ জিয়া স্মৃতি ও গবেষণা পরিষদ জেলা সভাপতি সাহেদ আলী, লস্করপুর ইউনিয়ন সভাপতি জয়নাল আবেদীন মোমিন, বিএনপির লস্করপুর ইউনিয়ন সভাপতি জমির আলী, বিএনপি কর্মী জয়নাল আবেদীন জালাল, আয়াত আলী, তাজুল ইসলাম, কাজল মিয়া, মহিবুর রহমান ও জেলা ছাত্রদলের তৎকালীন সহ-দফতর সম্পাদক সেলিম আহমদকে অভিযুক্ত করা হয়। [ সূত্র: ৩ আগস্ট, ২০০৭, দ্যা ডেইলি স্টার]

এই হত্যাকাণ্ড যে তৎকালীন সরকারি দল তথা বিএনপির নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততায় ঘটেছে তা বহু চেষ্টা করেও চার্জশিটেও আড়াল করা যায় নি। তবে মূল হোতাদের বাদ দিয়ে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দায়ী করায় কিবরিয়া পরিবারের পক্ষ থেকে নারাজি দেয়া হয়। এক পর্যায়ে মামলা ক্লোজ করে দেয়া হয়।

Advertisement

তারেক ও বাবরকে দায়ী করে পুনঃতদন্তের দাবি:১/১১ এর পটপরিবর্তনের পর কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত কেন হবে না - এই মর্মে রিটের পরিপ্রেক্ষিতে কেস রিওপেন হয়। আসমা কিবরিয়া বলেন, বিএনপির শীর্ষ নেতাগণ কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডে জড়িত। [সূত্র ৮ অক্টোবর, ২০০৭, দৈনিক জনকণ্ঠ]

কিবরিয়া পরিবারের পক্ষ থেকে মূলত তারেক রহমান ও লুৎফুজ্জামান বাবরকে দায়ী করা হয়েছিল। ২০১২ সালে দেয়া চার্জশিট নিয়েও কিবরিয়া পরিবারের পক্ষ থেকে কিছুটা আপত্তি জানানো হয়। তবে ২০১৪ সালের নভেম্বরে দেয়া সর্বশেষ সম্পূরক চার্জশিটে খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, হুজি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান, সিলেটের বিএনপি দলীয় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জের মেয়র জিকে গউছসহ জড়িত বিএনপি নেতাদের নাম আসায় সন্তোষ প্রকাশ করা হয়।

সম্পূরক চার্জশিট সম্পর্কে দেয়া এক বিবৃতিতে আসমা কিবরিয়া বলছিলেন, “আজ ১০ বছর পর নতুন একটি চার্জশিট দেওয়া হয়েছে, যাতে কয়েকটি নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নাম রয়েছে। ১০ বছর পর সম্পূর্ণ না হলেও মোটামুটি গ্রহণযোগ্য নতুন চার্জশিট দেখে যেতে পারলাম।" [সূত্র: বিডিনিউজ ডিসেম্বর ২১, ২০১৪]

রেজা কিবরিয়া যখন কিবরিয়া-পুত্র:কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের পর উপনির্বাচনে আসমা কিবরিয়া ও রেজা কিবরিয়াকে নির্বাচন করার জন্য শেখ হাসিনা অনুরোধ জানিয়েছিলেন। আসমা কিবরিয়া রাজনীতিতে সম্পৃক্ত না হয়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে কাজ করার কথা জানান। শাহ এএমএস কিবরিয়ার সম্পাদনায় প্রকাশিত মৃদুভাষণ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব নেয়া রেজা কিবরিয়ার ভাষ্য ছিল, "দেশের জন্য করেও জনাব কিবরিয়ার যে পরিণতি হয়েছে তাতে আমি আর রাজনীতিতে জড়াবো না।"

২০০৫ সালে রেজা কিবরিয়া বলেছিলেন, "বিএনপি-জামায়াত সরকারের উপর আমাদের কোনো আস্থা নেই। আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী হত্যার বিচার বা তদন্ত হয় নি। এই সরকারের কাছে আমরা কিছু প্রত্যাশা করি না।" [সূত্র: ৩১ জানুয়ারি, ২০০৫। দ্যা ডেইলি স্টার]

২০০৬ সালের ৯ জুলাই কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের জন্য বিএনপিকে দায়ী করে মার্কিন দূতাবাসের কাছে আন্তর্জাতিকভাবে যৌথ তদন্তের দাবি করেন রেজা কিবরিয়া।

রেজা কিবরিয়া কর্তৃক দেশে সামরিক হস্তক্ষেপের আহ্বান:২০০৬ সালের ৩ আগস্ট মার্কিন রাষ্ট্রদূত রিচার্ড বুচারের সঙ্গে ৪০ মিনিটের বৈঠকে রেজা কিবরিয়া রাজনৈতিক অচলাবস্থার উত্তরণে সামরিক হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। তিনি আরও জানান, দেশের শীর্ষ ধনীদের ২০ জনই ক্ষমতাসীন রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত না থাকার ব্যাপারে জোর দেন রেজা। তবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সরকার ও কিবরিয়া হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে নীতিগত সাদৃশ্য রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।

[সূত্র: উইকিলিকস, ক্যাবল 06DHAKA4974]২০০৯ সালের ৭ জানুয়ারি রেজা কিবরিয়া মার্কিন রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টির সঙ্গে সাক্ষাত করে আওয়ামী লীগের আমলে বিচার হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডে তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবর ও ২০০৫ সালে হবিগঞ্জে দায়িত্বরত জেলা প্রশাসক এমদাদুল হকের সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ করেন।[সূত্র: উইকিলিকস, ক্যাবল 09DHAKA34]

সন্তান থেকে রাজনীতিবিদে রূপান্তর:২০০৫ সালে রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার অনিচ্ছা প্রকাশ করা রেজা কিবরিয়া, ২০০৬ সালে রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেন। ইতোমধ্যে কিবরিয়া সাহেবের আসনে নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণ হয়, যদিও সকলেই কিবরিয়া পরিবারের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন।

নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়ার আভাস পেয়ে ২০০৬ সালে তিনি মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আপত্তি তোলেন। পরবর্তীতে যোগাযোগ করেন ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে। /১১ পরবর্তী সময়ে দুই নেত্রী মুক্ত রাজনীতি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগে সক্রিয় হন রেজা। ফলশ্রুতিতে ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে চেষ্টা করেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হন রেজা কিবরিয়া।

আওয়ামী লীগের স্থান পেতে ব্যর্থ হয়ে উচ্চাভিলাষী রেজা অনেকটা আগ্রাসী হয়ে ওঠেন। জামায়াতের সাবেক নেতা মুজিবুর রহমান মনজুর এবি পার্টির কর্মসূচিতে কয়েকবার অতিথি হয়েছিলেন। ২০১৮ সালে সবাইকে হতবাক করে পিতার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত দলের মার্কা তথা ধানের শীষ মার্কা নিয়ে নির্বাচন করেন। জনগণের সাথে সম্পৃক্ততা না থাকায় পরাজিত হন তিনি। তবে ড. কামাল হোসেন তাকে গণফোরামের সম্পাদক নির্বাচিত করেন। এ নিয়ে দলে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হলেও শেষ পর্যন্ত কামাল হোসেনকে উপেক্ষা করে গণফোরাম ত্যাগ করেন রেজা।

সর্বশেষ নুরুল হকের নুরুর গঠন করা দল গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক হন রেজা কিবরিয়া। গণ অধিকারের প্রধান হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন বিতর্কিত বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডে তার যে রূপ ফুটে উঠেছে, তা সুস্পষ্টভাবে একজন স্বার্থপর, ক্ষমতালিপ্সু ও দেশদ্রোহীর প্রতিকৃতি।

কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন:গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক মনোনীত হওয়ায় পর থেকে রেজা কিবরিয়া ক্ষমতায় আরোহনের স্বপ্ন দেখছেন। তিনি স্বপ্ন দেখতেই পারেন। কিন্তু সরকার গঠনের বা জনপ্রতিনিধি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তিনি বাংলাদেশের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের পক্ষে দূতিয়ালি করছেন। 'আরও নিষেধাজ্ঞা আসছে' বলে বক্তব্য দিয়েছেন। জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ ও প্রবাসীদের কর্মহীন হওয়ার এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশন থেকে নিষেধাজ্ঞার হুমকিও দিচ্ছেন। গার্মেন্টস খাত ধ্বংস হওয়ার কথা বলছেন।

দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, এসবকে তিনি যুক্তিযুক্ত মনে করছেন সরকার বিরোধী কর্মসূচির অংশ হিসেবে! তিনি নিজেকে বিরোধী দল হিসেবে গণ্য করে যদি ভবিষ্যতে সরকারে যাওয়ার কথা বলেন, সেক্ষেত্রে তার কিছু প্রশ্নের জবাব দেয়া উচিত:

১. তিনি বিএনপির প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডে দেয়া সর্বশেষ চার্জশিটকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে - কিবরিয়া সাহেব কি অরাজনৈতিক ব্যক্তি ছিলেন? তিনি কি অরাজনৈতিক সভায় নিহত হয়েছিলেন? তার সঙ্গে যারা নিহত হন তারা কি অরাজনৈতিক? সর্বোপরি কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডটিই কি অরাজনৈতিক? অরাজনৈতিক হলে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালেই মূল হোতাদের আড়াল করে বিএনপি ও যুবদলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের আসামী করা হয়েছিল কেন?

২. সর্বশেষ চার্জশিটে আপত্তি থাকলে ২০১৪ সালে আসমা কিবরিয়া কেন সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন? ২০০৫ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত রেজা কিবরিয়া কেন বিএনপির শীর্ষ নেতাদের হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করেছেন? কেন তিনি মার্কিন দূতাবাসে তারেক রহমান ও লুৎফুজ্জামান বাবরকে এ হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত করেছিলেন?

৩. বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, রেমিটেন্স, জনশক্তি রপ্তানি এবং নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে কোন স্বার্থে তিনি নেতিবাচক প্রচারণায় জড়িত? তিনি বার বার বিভিন্ন দেশ ও গোষ্ঠীকে বাংলাদেশের উপর চাপ সৃষ্টির আহ্বান করছেন কেন? এতে কি সরকারের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হবে নাকি সাধারণ জনগণের? ক্ষতি যদি সাধারণ জনগণের হয় তাহলে তার রাজনীতি কি করে গণমুখী হয়?

৪. তিনি কেন জনগণের শক্তিতে আস্থা না রেখে নেতিবাচক ও ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিচ্ছেন? তিনি কেন জনতার পরিবর্তে বিদেশি প্রভুদের প্রতি নির্ভরশীল হচ্ছেন?

৫. রেজা কিবরিয়া যদি দেশপ্রেমিক হন, তাহলে দেশদ্রোহী কে? রেজা যদি নীতিবান হন, তাহলে নীতিহীন কে? আদর্শ বিবর্জিত, ক্ষমতালিপ্সু চরিত্র ছাড়া তিনি তার আর কোনো পরিচিতি রেখেছেন কি? আর এমন চরিত্রের একজন কি নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্য হতে পারে?

যে দল জনাব কিবরিয়ার উপর হামলা চালিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করতে চিকিৎসা সেবা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল, মামলা ক্লোজ করে দিয়েছিল, ক্ষমতার লোভে কিবরিয়া-পুত্র যখন সেই দলের মার্কা নিয়ে নির্বাচনে নেমেছিলেন, তখনই জাতির কাছে রেজা কিবরিয়ার স্বরূপ প্রকাশ পেয়েছিল। তখন তিনি মূলত অসম্মান করেছিলেন মেধাবী ও বর্ষীয়ান নেতা শাহ এএমএস কিবরিয়াকে।

নুরুল হক সম্ভবত দলের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে রেজা কিবরিয়াকে দলের আহ্বায়ক নির্বাচন করেছে। ধারণা করি- নবগঠিত এ দলের ভাঙ্গন নিশ্চিত। রেজা কিবরিয়া কবে, কিভাবে ও কোথায় নুরু ও তার সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীদের রাজনীতি ও কূটনীতির মারপ্যাঁচে ফেলে নিজের আখের গোছাবে, তা হয়তো তারাও জানতে পারবে না। ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ না হলেও ক্ষুদ্র এ দলটির সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে অন্যদের যে জিরো করে দিবেন, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই করতে হবে না।

লেখক: রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষক।

এইচআর/জেআইএম