করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই। অনেকে সুস্থ হয়ে উঠছেন আবার অনেকের মৃত্যুও হচ্ছে। বর্তমানে করোনার নতুর ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। এর উপসর্গ মৃদু হলেও সতর্ক থাকতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ ওমিক্রনকে হালকাভাবে নিলে চলবে না।
Advertisement
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওমিক্রন কম সক্রিয় হলেও অনেক বেশি সংক্রামক। খুব দ্রুত এটি ছড়াচ্ছে। শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক সবাই আক্রান্ত হচ্ছেন এতে। তাই চিকিৎসকরা বলছেন, কেউই যেন ওমিক্রনকে হালকাভাবে না নেন। উপসর্গ মৃদু হলেও সচেতন থাকা জরুরি।
সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, ৬৬ শতাংশ করেনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীরাই বেশি ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েছেন। আর এ কারণেই উপসর্গ তাদের শরীরে মৃদুভাবে দেখা দিয়েছে। বর্তমানে করোনা রোগীরা ভাবছেন, আক্রান্ত হলেও বিশেষ কোনো শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না।
এ ধারণা একদমই ভুল। কারণ সবার শরীরের অবস্থা ভিন্ন। যদিও ক্লান্তি, জ্বর, গলা ব্যথা, বমি, কাশি, বিভিন্ন পেশীতে ব্যথা থাকছে সবারই। এমনকি অনেকের কানে শুনতেও সমস্যা হচ্ছে কিংবা গলার স্বরেও পরিবর্তন আসছে।
Advertisement
আবার করোনা নেগেটিভ হলেও অসুস্থতা থেকে যাচ্ছে। যাকে চিকিৎসকরা ‘লং কোভিড’ বলে চিহ্নিত করেছেন। অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন ঘ্রাণজনিত সমস্যা ‘প্যারসমিয়া’তে। উপসর্গ মৃদু হলেও তার রেশ থেকে যাচ্ছে বহু দিন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, ওমিক্রনকে প্রাথমিকভাবে সাধারণ শীতকালীন ঠান্ডা লাগা ভেবে এড়িয়ে গেলে চূড়ান্ত ভুল হবে। কারণ ওমিক্রনে মৃত্যুর আশঙ্কাও যথেষ্ট।
এর পাশাপাশি করোনামুক্তির পর লং কোভিড শরীরে একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম। কোভিড থেকে সেরে ওঠার এক মাস পরেও ফের যে কোনো শারীরিক সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে।
সম্প্রতি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের করা গবেষণায় জানা গেছে, করোনা থেকে সেরে ওঠার পর অনেকেরই সাময়িকভাবে স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাচ্ছে। যাকে বলা হচ্ছে ব্রেন ফগ।
Advertisement
মস্তিষ্কের কুয়াশা যদিও কোনো বৈজ্ঞানিক শব্দ নয় তবে, চিন্তাভাবনা ধীর হয়ে যাওয়ার বিষয়টি বা অস্পষ্ট সবকিছু বোঝাতে বিজ্ঞানীরা ব্যবহার করেছেন এ শব্দটি।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের করা নেতৃত্বে করা এই গবেষণায় অংশ নেয় লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ ও লিসেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিকাল ও ডেটা গবেষকরা। যারা লং কোভিডে ভুগছেন এমন ২০০০ মানুষের ১২ মাসের তথ্য সংগ্রহ করেছেন।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও এই গবেষণার প্রধান তদন্তকারী এনআইএইচআর অক্সফোর্ড হেলথ বিআরসি সিনিয়র রিসার্চ ফেলো, ম্যাক্সিম ট্যাকুয়েট বলেছেন, ‘কোভিড সংক্রমণের পর ‘মস্তিষ্কের কুয়াশায়’ ভুগছেন এমন বেশ কয়েকজন রোগীর সঙ্গে আমি দেখা করেছি। তারা জানিয়েছেন বিষয়টি কতটা কষ্টের।’
এমনই এক রোগী হলেন লেসলি। ৬০ বছর বয়সী এই নারী করোনা মুক্তির পর দীর্ঘ ১৪ মাস ধরে ব্রেইন ফগে ভুগছেন। তিনি বলেন, ‘আমি সব কিছুই ভুলে যাই। কোনো বিষয় দীর্ঘক্ষণ মনে রাখতে পারি না। আমি বরাবরই একজন মাল্টিটাস্কার। অথচ এখন কোনো কাজেই মনোযোগ দিতে পারি না।’
তিনি আরও জানান, ‘মস্তিষ্কের কুয়াশা যেন আমার সব আনন্দ কেড়ে নিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়গুলো এখন আমি লিখে রাখি। কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও কমে গেছে। একটি বিষয় নিয়ে ভাবতে গেলে অন্যটি আর মনে পড়ে না। যেন আমি এখন নির্বিকার।’
লং কোভিড নিয়ে ওএনএসের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২১ সারের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে ১.৩ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ লং কোভিডের উপসর্গ নিয়ে বাস করছিলেন।
বিশ্বব্যাপী কোভিডের প্রায় ৩০০ মিলিয়ন কেস আছে। যার মধ্যে বেশিরভাগই ভুগছেন ব্রেইন ফগ বা মস্তিষ্কের কুয়াশায়। যা একজন ব্যক্তির জীবনের উপর ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
গবেষণার তথ্য মতে, করোনা আক্রান্ত হওয়ার ৬-৯ মাস পর স্মৃতিশক্তি হ্রাস, ক্লান্তি ও দুর্বলতার মতো সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।
সূত্র: এমকিউ মেন্টাল হেলথ/নিউ সায়েন্টিস্ট
জেএমএস/এএসএম