ওসি প্রদীপ গংকে শিক্ষিত ও আত্মস্বীকৃত খুনি বলে দাবি করেছেন মেজর সিনহা হত্যা মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সাবেক সরকারি কৌঁসুলি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর।
Advertisement
তিনি বলেন, ‘মেজর সিনহাকে হত্যা করার পর সেই খুনকে জায়েজ করতে তিনটি মামলা করা হয়। ওই তিন মামলাতেই ওরা স্বীকার করে নিয়েছে ওরা খুনি।’
অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আরও বলেন, মেজর সিনহাকে হত্যার পর টেকনাফ থানায় নন্দ দুলাল বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। সেই মামলার এজাহার অনুযায়ী ওসি প্রদীপের নির্দেশে বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের আইসি লিয়াকত ও নন্দদুলাল সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে শামলাপুরের এপিবিএন চেকপোস্টে যান। সেখানেই কথিত বন্দুকযুদ্ধে মেজর সিনহা নিহত হন। এখন কথা হচ্ছে, এপিবিএনের চেকপোস্টে পুলিশের কাজ কী? ওদের এজাহার থেকেই প্রমাণিত হয় ওরা আত্মস্বীকৃত খুনি।
সাফাই স্বাক্ষীর বিষয়ে বাদীর আইনজীবী আরও বলেন, একটি মামলার ৬৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। আর কতজনের সাক্ষ্য নিতে হবে? এছাড়া আদালত দুইদিন ধরে আসামিদের সাফাই সাক্ষীর কথা বলেছেন। কিন্তু আসামি পক্ষ তাতে সাড়া দেয়নি। মূলত প্রদীপ গং যে খুনি এটা জেলাবাসী জানে। ওরা খারাপ তাই ওদের পক্ষে সাক্ষ্য দিতে কেউ রাজি হয়নি।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, সাফাই সাক্ষী আসামি নিজেও দিতে পারে কিন্তু ওরা সেটাও করেনি।
অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আরও বলেন, মামলার সাক্ষী, জেরা, চার্জশিট থেকে শতভাগ প্রমানিত হয়েছে আসামিরা সিনহা হত্যার সঙ্গে যুক্ত। আসামিদের মধ্যে দুজনের ফাঁসিসহ অন্যান্য আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হবে বলে আমি আশা করছি।
তবে মামলার রায় কী হচ্ছে তা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আজ বিকেল পর্যন্ত। দুপুর ২টার পর সিনহা হত্যা মামলার কার্যক্রম শুরুর কথা রয়েছে।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা। পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এ কর্মকর্তা।
Advertisement
হত্যাকাণ্ডের চারদিন পর ৫ আগস্ট সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে হত্যা মামলা করেন। মামলায় টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ নয়জনকে আসামি করা হয়।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে। ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয় দুই নম্বর আসামি। মামলার তিন নম্বর আসামি বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে কর্মরত উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত। আদালত মামলাটির তদন্তভার দেন কক্সবাজারের র্যাব-১৫কে।
ওই বছরের (২০২০ সালের) ৭ আগস্ট মামলার আসামি সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তদন্তে নেমে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় তিন বাসিন্দা, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য ও ওসি প্রদীপের দেহরক্ষীসহ আরও সাতজনকে গ্রেফতার করে র্যাব। এরপর গত বছরের (২০২১ সালের) ২৪ জুন মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি কনস্টেবল সাগর দেবের আদালতে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আলোচিত এই মামলার ১৫ আসামির সবাই আইনের আওতায় আসে।
এ মামলায় চার মাসের বেশি সময় তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ৮৩ জন সাক্ষীসহ অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ১৫ জনকে আসামি করে দায়ের করা অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি পরিকল্পিত ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলায় অভিযুক্ত ১৫ আসামি হলেন, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, প্রদীপের দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত, বরখাস্ত কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মামুন, বরখাস্ত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, বরখাস্ত কনস্টেবল সাগর দেব, বরখাস্ত এপিবিএনের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান, বরখাস্ত কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ। এছাড়া রয়েছেন টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
দীর্ঘ শুনানি, সাক্ষীদের জবানবন্দি, জেরা ও আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শেষে গত ১২ জানুয়ারি রায়ের জন্য ৩১ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন বিচারক।
এফএ/জিকেএস