জাতীয়

মুসল্লিদের ইজতেমামুখী ঢল

বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিচ্ছেন লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি। শুক্রবার ভোর থেকে আম বয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে টঙ্গীর তুরাগ তীরে শুরু হচ্ছে তাবলিগ জামাতের ৫১তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। দেশ বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লির স্রোত এখন টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানমুখী। ইজতেমায় অংশ নিতে নৌকা, বাস, ট্রাক, স্কুটার, লেগুনাসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে যে যেভাবে পারছেন সেভাবেই জড়ো হচ্ছেন টঙ্গীর তুরাগ তীরে। বুধবার রাত থেকেই দেশ-বিদেশের মুসল্লিরা জামাতবদ্ধ হয়ে দলে দলে ইজতেমা মাঠের নির্ধারিত স্থানে (খিত্তায়) প্রয়োজনীয় মালামাল ও ব্যাগ নিয়ে অবস্থান করছেন। ৩ দিনব্যাপি বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব রোববার (১০ জানুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। আজ শুক্রবার দেশের সর্ব বৃহৎ জুম্মার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে ইজতেমা ময়দানে। এতে প্রায় ১০ লাখ মুসল্লি এক জামাতে শরিক হয়ে জুম্মার নামাজ আদায় করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাজধানী ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন উপজেলা এবং আশপাশের জেলা থেকে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি এ বৃহৎ জুম্মার নামাজে শরিক হবেন। ইতোমধ্যে অনেকে টঙ্গী ও আশপাশের এলাকায় আত্মীয় স্বজনের বাসায় অবস্থান নিচ্ছেন।ইজতেমা মাঠের মুরব্বিরা জানান, তাবলীগ জামাতের উদ্যোগে প্রতি বছর বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। মাঠের সব কাজ করা হচ্ছে পরামর্শের মাধ্যমে। এখানে বিদ্যুৎ, পানি, প্যান্ডেল তৈরি, গ্যাস সরবরাহ প্রতিটি কাজই আলাদা আলাদা গ্রুপের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। বিশ্বের প্রায় সব মুসলিম দেশ থেকেই তাবলীগ জামাতের অনুসারী মুসলমানরা অংশ নেন। তারা এখানে তাবলীগ জামাতের শীর্ষ আলেমদের বয়ান শোনেন এবং ইসলামের দাওয়াতী কাজ বিশ্বব্যাপি পৌঁছে দেয়ার জন্য জামাতবদ্ধ হয়ে বেরিয়ে যান।ইজতেমার প্রথম পর্বে ২৭ খিত্তায় ১৭ জেলার মুসল্লি :এবারের প্রথম দফায় ইজতেমায় ১৭ জেলার মুসল্লির জন্য ময়দানকে ২৭ খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। ক্রমবর্ধমান মুসল্লিদের কথা বিবেচেনা করে গেল চার বছর ধরে দু’দফায় বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের দ্বিতীয় দফা শুরু হবে ১৫ জানুয়ারি এবং ১৭ জানুয়ারি আখেরি মেনাজাতের মধ্যমে শেষ হবে বিশ্ব ইজতেমা।  বিশ্ব ইজতেমার মুরুব্বী গিয়াস উদ্দিন জানান, বুধবার থেকে দেশি-বিদেশি মুসল্লিরা ময়দানে এসে ইজতেমায় যোগ দেয়া শুরু করেন। বিদেশীরা ইজতেমা ময়দানের উত্তর-পশ্চিম পাশে তাদের জন্য উন্নত তাবুতে এসে অবস্থান নিচ্ছেন। বুধবার সকাল দুপুর পর্যন্ত শতাধিক বিদেশি মেহমান এসে সেখানে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের পাশাপাশি একই সময়ে দেশের ১৭টি জেলা থেকে কয়েক হাজার মুসল্লি এসে ময়দানে নির্ধারিত খিত্তায় এসে হাজির হয়েছেন। তিনি আরও জানান, আল্লাহর অশেষ রহমতে সভাপতিহীন বিশ্ব ইজতেমার এতো বড় আয়োজন প্রতি বছরই অত্যন্ত সু-শৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করা হয়। এজন্য আমাদের কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়। পুরো ইজতেমা ময়দানকে মুরুব্বীদের পরামর্শে সাজানো হয়। ময়দানে জেলাওয়ারি মুসল্লিদের অবস্থান, রান্না-বান্না করার স্থান, টয়লেট, অজুখানা, গোসলখানা সবই সুনিদিষ্ট করা থাকে। তাদের মধ্যে প্রথম ধাপে অংশ নেবে ঢাকা জেলা ১ থেকে ৬ নং খিত্তায়, শেরপুর ৭ নং খিত্তা, নারায়ণগঞ্জ ৮ ও ১১ নং খিত্তা, নীলফামারী ৯ নং খিত্তা, সিরাজগঞ্জ ১০ নং খিত্তা, নাটোর ১২ নং খিত্তা, গাইবান্ধা ১৩ নং খিত্তা, লক্ষ্মীপুর ১৪ ও ১৫ নং খিত্তা, সিলেট ১৬ ও ১৭ নং খিত্তা, চট্টগ্রাম ১৮ ও ১৯ নং খিত্তা, নড়াইল ২০ নং খিত্তা, মাদারীপুর ২১ নং খিত্তা, ভোলা ২২ ও ২৩ নং খিত্তা, মাগুরা ২৪ নং খিত্তা, পটুয়াখালী ২৫ নং খিত্তা, ঝালকাঠি ২৬ নং খিত্তা এবং পঞ্চগড় ২৭ নং খিত্তায় মুসল্লিরা অবস্থান নেবেন।নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১২ সহস্রাধিক সদস্য :ইজতেমার নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকছে প্রায় ১২ হাজার পুলিশ ও র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। পাঁচটি স্তরের এ নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে ইজতেমা ঢেকে রাখা হবে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেন ঘটতে না পারে সে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে। পুলিশ ও র্যাবের কন্ট্রোল রুম থেকে নিরাপত্তার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং পর্যাপ্ত সংখ্যক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাও ব্যবহার করা হচ্ছে। নিরাপদ যাতায়াত ও সুষ্ঠুভাবে যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে প্রতিদিন ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ ব্যবস্থার দায়িত্বে থাকছে ঢাকা মহানগর পুলিশ, ঢাকা ও গাজীপুর জেলা পুলিশ।এছাড়া মাঠের উত্তর-পশ্চিম পাশে নির্মিত বিদেশি নিবাসে বিদেশি মুসল্লিরা থাকবেন। ইজতেমা ময়দানের পশ্চিম পাশে মুসল্লিদের পারাপারের জন্য তুরাগ নদীর উপর ৮টি স্থানে ৮টি ভাসমান সেতু স্থাপন করেছে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড।স্বাস্থ্য বিভাগের নানা উদ্যোগ, ছুটি বাতিল :বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা দিতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। ৭ জানুয়ারি থেকে ইজতেমা চলাকালীন পর্যন্ত জেলার কর্মরত স্বাস্থ্য বিভাগের সকল চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের আরএমও ডা. মো. পারভেজ হোসেন বলেন, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট টঙ্গী সরকারি হাসপাতালকে একশ’ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়া জরুরি চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে হৃদরোগ বিভাগ, অর্থপ্যাডিক ও ট্রমা সেন্টার এবং অ্যাজমা ও বক্ষব্যাধি ইউনিট খোলা হয়েছে। হাসপাতালে ১৪টি অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যাডবাই থাকবে। ইজতেমা মাঠ সংলগ্ন মন্নু গেইট, বাটা গেইট, এটলাস হোন্ডা গেইট এবং বিদেশি নিবাস এলাকায় চারটি ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করে মুসল্লিদের চিকিৎসা দেয়া হবে। ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ১৫টি স্যানিটেশন টিম এবার ইজতেমা মাঠের আশপাশ এলাকার হোটেল ও রেস্টুরেন্ট যাতে মান সম্মত খাবার পরিবেশন করে সে লক্ষ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন। এছাড়া ইজতেমা শুরুর আগের দিন ৭ জানুয়ারি থেকে ইজতেমা চলাকালীন পর্যন্ত জেলার কর্মরত স্বাস্থ্য বিভাগের সকল চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।র‌্যাবের কার্যক্রম :বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের সার্বিক নিরাপত্তা ও নজরদারির সুবিধার্থে সমগ্র ইজতেমা ময়দারকে ঘিরে থাকছে র‌্যাবের অবজারভেশন পোস্ট। নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে নিছিদ্র করার লক্ষ্যে র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে র‌্যাবের পর্যাপ্ত সংখ্যক সদস্য ২৪ ঘণ্টা বিশ্ব ইজতেমা মাঠে পর্যায়ক্রমে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া একটি প্রধান নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, পর্যাপ্ত সিসিটিভির মাধ্যমে সার্বক্ষণিকভাবে মনিটরিং করা হবে। ইজতেমার অভ্যন্তরে ছদ্মবেশে ও বিশেষ পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি ও অভ্যন্তরীণ টহলের মাধ্যমে স্থল ফোর্স, নৌ টহলের পাশাপাশি, হেলিকপ্টারযোগে পর্যায়ক্রমে টহল প্রদানের মাধ্যমে নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ ও যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনারোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হবে। র্যাবের বোম্ব স্কোয়াড এবং স্ট্রাইকিং ফোস সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত রাখা হবে। মুসল্লিদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য সার্বক্ষণিকভাবে র্যাবের মেডিকেল টিম দায়িত্ব পালন করবে। সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ :ইজতেমা এলাকায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। উত্তরা, টঙ্গী সুপার গ্রিড ও টঙ্গী নিউ গ্রিডকে মূল ১৩২ কেভি সোর্স হিসেবে নির্বাচন করা হবে যাতে যেকোন একটি গ্রিড অকেজো হলেও সামগ্রিক বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত না হয়। ইজতেমা এলাকায় ৪টি স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর এবং ৫টি ট্রলি-মাউন্টেড ট্রান্সফরমারও সংরক্ষণ করা হবে। ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম :ফায়ার সার্ভিসের টঙ্গীর স্টেশন অফিসার মোর্শেদ আলম জানান, ইজতেমাস্থলে তাদের একটি কন্ট্রোল রুমও স্থপন করা হয়েছে। যেখানে সার্বক্ষণিক কর্মকর্তাসহ ফায়ারম্যানরা থাকবেন। ময়দানের প্রতি খিত্তায় ফায়ার এস্টিংগুইসারসহ ফায়ারম্যান, গুদাম ঘর ও বিদেশি মেহমানখানা এলাকায় ৩টি পানিবাহী গাড়ি, ৩ সদস্যের ডুবুরি ইউনিট, ১টি স্ট্যান্ডবাই লাইটিং ইউনিট এবং ৫টি অ্যাম্বুলেন্স থাকবে।  তিনি আরও বলেন, ইজতেমা মাঠের ধুলোবালি নিয়ন্ত্রণে তাদের উদ্যোগে ইজতেমা মাঠের আশেপাশের এলাকায় পানি ছিটানো হবে।প্রতিদিন তিন কোটি লিটার বিশুদ্ধ পানি :জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের টঙ্গী অঞ্চল সূত্র জানায়, এজতেমা মাঠে স্থাপিত উৎপাদন নলকূপের মাধ্যমে প্রতিদিন তিন কোটি লিটারেরও বেশি বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের সকল পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। অজু-গোসলের হাউজ ও টয়লেটসহ প্রয়োজনী স্থানে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়াও পাকা দালানে প্রায় ৬ হাজারের মতো টয়লেট ইউনিট রয়েছে। এদের মধ্যে নষ্ট ও ক্ষতিগ্রস্ত অজু-গোসলখানা এবং টয়লেটগুলো ইতোমধ্যে সংস্কার করা হয়েছে।ধর্মমন্ত্রীর ইজতেমা ময়দান পরিদর্শন :ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পের উদ্বোধন করেছেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। দুপুরে মাঠের পার্শ্বে মেডিকেল ক্যাম্পের উদ্ভোধন করে সকল ওষুধ কোম্পানিকে স্বাস্থ্যসেবায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান মন্ত্রী। হামদার্দ ল্যাবরেটরিজ (ওয়াকফ) বাংলাদেশ বোর্ড অব ট্রাস্ট্রির চেয়ারম্যান জাতীয় অধ্যাপক ড. এম আর খানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী সভায় আরও বক্তব্য রাখেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম আলম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, সিভিল সার্জন ডা. আলী হায়দার খান, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্যাহ খান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, ওয়াকফ প্রশাসক ফয়েজ আহমেদ ভূঁইয়া প্রমুখ।ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প :ইজতেমা ময়দানে ইবনে সিনা, টঙ্গী ওষুধ ব্যাবসায়ী সমিতি, আবেদা মেমোরিয়াল প্রাইভেট হাসপাতাল লিমিটেড, সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজিস্ট হসপিটাল, যমুনা ব্যাংক ফাউন্ডেশন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্বাস্থ্য অধিদফতর চিকিৎসা কেন্দ্র, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনসহ ৫৪ ফ্রি মেডিকেল বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবার জন্য ক্যাম্প খুলেছে।  পুলিশের ব্রিফিং :ইজতেমায় আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে টঙ্গীর টেশিস কারখানার দক্ষিণে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার পুলিশের এক ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (ট্রেনিং) মইনুল রহমান চৌধুরী, অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম) শফিকুল ইসলাম, গাজীপুরের পুলিশ সুপার মো. হারুন অর রশিদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিদেশি মেহমান : প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে প্রায় শতাধিক দেশের বিদেশি মুসল্লি আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে টঙ্গীর ইজতেমা আয়োজক কমিটির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিশ্বের অন্তত ১৪০টি দেশের প্রায় ২০ হাজার বিদেশি মেহমান এবারের ইজতেমা ময়দানে অংশগ্রহণ করবেন। তবে বিদেশি মেহমানদের মধ্যে যারা বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে চার চিল্লায় ছিলেন তাদের বেশির ভাগই ইজতেমা উপলক্ষে বাংলাদেশের পথে রয়েছেন। তারা আজকের মধ্যে ইজতেমা ময়দানে তাদের জন্য নির্ধারিত তাঁবুতে অবস্থান নিবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় শতাধিক বিদেশি মেহমান এসেছেন। এবার যেসব দেশের মুসল্লিরা ইজতেমায় যোগ দিচ্ছেন এর মধ্যে পাকিস্তান, ভারত, কাতার, দুবাই, ইরান ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আফ্রিকার মুসলিম দেশসমূহ থেকে মুসল্লিরা অংশ নেবেন। টঙ্গীর বাসা বাড়িতে মেহমানদের আনাগোনা :বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করতে বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে শত শত মেহমান টঙ্গী এলাকায় তাদের আত্মীয় স্বজনদের বাসায় এসে উঠেছেন। এতে গৃহিনীদের ওপর বাড়তি কাজের চাপ বেড়ে গেছে। তাতেও গৃহিনীরা খুশি। স্বজনদের সাথে খোলামেলা ধর্মীয় আলাপচারিতায় তাদেরকে মশগুল থাকতে দেখা গেছে।যানবাহন চলাচল ও পার্কিং :বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লিদের নিরাপদ যাতায়াত এবং সুষ্ঠুভাবে যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে পুলিশ বিভাগ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। গাজীপুর ট্রাফিক পুলিশের সিনিয়র এএসপি মো. শাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু রাখতে এবার নজরদারি তিন গুণ বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে মোট ৬০টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। সঙ্গে থাকছে আইপি ক্যামেরাও। দুই পর্বে মোট দেড় হাজার ট্রাফিক পুলিশ তিন শিফটে দিনে ও রাতে ২৪ ঘণ্টা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করবেন।তিনি বলেন, দু’পর্বের বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে মুসল্লিদর নিরাপদ যাতায়াত ও সুষ্ঠুভাবে যানবাহন চলাচলের জন্য ৯ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১০ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা এবং ১৬ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১৭ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ধৌর ব্রিজ থেকে আব্দুল্লাহপুর হয়ে প্রগতি সরণি এবং টঙ্গী ব্রিজ থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত (বিমানযাত্রী, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স ব্যতীত) সব যানবাহন বন্ধ থাকবে।এছাড়া ঘোড়াশাল থেকে পূবাইল-কালীগঞ্জ হয়ে আগত যানবাহন টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশনের আগে মরকুন (কে-২ ফ্যাক্টরি) পর্যন্ত চলাচল করতে পারবে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক থেকে ঘোড়াশাল হয়ে ঢাকাগামী যানবাহন কাঁচপুর/যাত্রাবাড়ী সড়ক ব্যবহার করবে। ইজতেমায় গমনেচ্ছুক মুসল্লি, উত্তরার অধিবাসী, বিমানযাত্রী, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া অন্য সব যানবাহন চালকদের বিমান বন্দর সড়কের পরিবর্তে মিরপুর-সাভার সড়ক ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। ঢাকা মহনগরের যেসব মুসল্লি পায়ে হেঁটে ইজতেমা স্থলে যাবেন তাদের শাহজালাল বিমানবন্দর গোল চত্বর আজমপুর-আব্দুল্লাহপুর হয়ে টঙ্গী ব্রিজ পরিহার করে তুরাগ নদীর ওপর নির্মিত বেইলি ব্রিজ অথবা কামারপাড়া ব্রিজ ব্যবহার করতে হবে।মুসল্লিদের যানবাহন পার্কিংয়ের স্থান :ঢাকা বিভাগ (ঢাকা ও গাজীপুর জেলা ব্যতীত) সোনারগাঁও সড়ক ও জনপথ সড়কের আগ থেকে পশ্চিম প্রান্ত। ঢাকা জেলা (ঢাকা মহানগর ব্যতীত) আশুলিয়া কলেজ এবং আশুলিয়া স্কুল মাঠ। ঢাকা মহানগর এলাকা সাধারণ পার্কিং-১ নিকুঞ্জ-১ আবাসিক এলাকার খালি জায়গা। সাধারণ পার্কিং ২- উত্তরা ৬নং সেক্টর ও রাজউক কলেজের আশপাশের খালি জায়গা। গাজীপুর জেলা- টঙ্গীর কে-২ অথবা নেভি সিগারেট কারখানা সংলগ্ন এলাকা, কাদেরিয়া টেক্সটাইল মিল প্রাঙ্গণ ও সংলগ্ন এলাকা, মেঘনা টেক্সটাইল মিল সংলগ্ন রাস্তার উভয় পাশে, সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি মাঠ, গাজীপুর সদরে চান্দনা চৌরাস্ত ট্রাক টার্মিনাল, চান্দনা হাইস্কুল মাঠ, ভাওয়াল বদরে আলম কলেজের মাঠ।চট্টগ্রাম বিভাগ- উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের গাউছুল আজম ও গরীবে নেওয়াজ রোডের উভয় পাশে। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ- উত্তরা ১০ নং সেক্টরের খালি জায়গা এবং কামারপাড়া হাউজিং মাঠ। খুলনা বিভাগ- উত্তরা ১০ ও ১১ নং সেক্টর সড়কের উভয় পাশে। বরিশাল বিভাগ- উত্তরা ১৮ নং সেক্টরের খালি জায়গায়, সিলেট বিভাগ- উত্তরা ১২ নং সেক্টর এবং বরিশাল বিভাগ- ধৌর ব্রিজ ক্রসিং সংলগ্ন এলাকা।জেলা প্রশাসকের বক্তব্য :গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম আলম বলেন, জেলা প্রশাসন গাজীপুর বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক কর্মকাণ্ড সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বিভাগের কাজের সমন্বয় করে থাকে। বিদেশি মেহমানগণের আবাসস্থল নির্মাণের নির্মিত্তে টিন সরবরাহ, বিভিন্ন দফতরের কন্ট্রোলরুমের স্থান নির্ধারণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকার পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা বিভাগীয় প্রশাসনের দিক নির্দেশনায় বিভিন্ন কার্যাদি তদারকি করে থকে। সর্বোপরি বিশ্ব ইজতেমার সকল দিক জেলা প্রশাসন পর্যবেক্ষণ করে। পুলিশ সুপারের বক্তব্য :গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ পিপিএম বলেন, বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য দুই পর্বে প্রায় ১২ হাজার নিরাপত্তা কর্মী কাজ করবে। এর মধ্যে রয়েছে জেলা পুলিশ, আর্ম পুলিশ ব্যাটালিয়ন, শিল্প পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, মেট্রো পুলিশ ও সাদা পোশাকে পুলিশ। যে কোন ধরনের নাশকতা প্রতিরোধে পুলিশ সব সময় তৎপর রয়েছে। বিশ্ব ইজতেমার মুসল্লিদের নিরাপত্তায় আইন শৃৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ করা এবাদতের মতোই মনে করতে হবে। তিনি আরও বলেন, অবরোধের কোনো প্রভাব ইজতেমায় পড়বে না।আমিনুল ইসলাম/এসএস/এমএস

Advertisement