‘পেস ব্যাটারি অব টিম বাংলাদেশ’- গত বছরের ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ড সফরে থাকাকালীন এবাদত হোসেন চৌধুরীর ফেসবুক পেজের একটি ছবির ক্যাপশন ছিলো এটি। সেই ছবিতে এবাদতের সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল অবস্থায় দেখা যায় বাংলাদেশ টেস্ট দলের বাকি পাঁচ পেসার তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, সৈয়দ খালেদ আহমেদ, আবু জায়েদ রাহী ও শহিদুল ইসলামকে।
Advertisement
শুধু হাসি মুখে ছবি তুলে ফেসবুকে দেওয়ার মধ্যেই শেষ নয় এবাদত-তাসকিন-শরিফুলদের বন্ধন। টেস্ট ক্রিকেটে জুটি বেঁধে বোলিংয়ের জন্য নিজেদের মধ্যে যে বোঝাপড়াটা প্রয়োজন, সেই চর্চাটা ধারাবাহিক রাখতে আলাদা একটি গ্রুপও খুলেছে বাংলাদেশের টেস্ট দলের পেসাররা। নিজেদের ব্যাপারে ইতিবাচক কথা বলার জন্য সেই গ্রুপের নাম রাখা হয়েছে ‘পজিটিভ মাইন্ডসেট’ তথা ইতিবাচক মানসিকতা।
বিদেশের মাটিতে ভালো করতে, বিশেষ করে নিয়মিত টেস্ট জিততে স্কিলফুল পেস ব্যাটারি থাকা কতটা উপকারী এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ ভারতীয় ক্রিকেট দল। গত কয়েক বছরে তাদের বিদেশের মাটিতেও ভালো করার অন্যতম কারণ জাসপ্রিত বুমরাহ, ইশান্ত শর্মা, উমেশ যাদব, মোহাম্মদ শামি, মোহাম্মদ সিরাজ কিংবা হালের শার্দুল ঠাকুর, নবদ্বীপ সাইনিদের নিয়ে গড়া পেস আক্রমণ।
ঠিক ভারতের মতো না হলেও, সাম্প্রতিক সময়ে পেস বোলিংয়ের গুরুত্বটা বুঝতে পারছে বাংলাদেশ দলও। সবশেষ নিউজিল্যান্ড সফরে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের নায়কও ডানহাতি পেসার এবাদত হোসেন। সেই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেট নিয়ে অবদান রাখেন আরেক পেসার শরিফুল। দ্বিতীয় ইনিংসে এবাদের ৬ উইকেটের পাশাপাশি তাসকিন করেন ৩ শিকার। সবমিলিয়ে পেসাররাই রেখেছিলেন মুখ্য অবদান।
Advertisement
এক ম্যাচ জিতিয়েই আবার বিশ্বমানের পেস বোলিং দল হয়ে যায়নি বাংলাদেশ। সেটি জানা আছে কিউই বধের নায়ক এবাদতেরও। তবে বিশ্বমানের পেস শক্তির দল হওয়ার জন্য যে বন্ধন বা জুটি বেঁধে বোলিংয়ের দক্ষতা প্রয়োজন সেটি রপ্ত করতেই মূলত টাইগাররা পেসাররা এক হয়েছে খুলেছেন আলাদা গ্রুপ, যেখানে আলোচনা হয় নিজেদের বোলিংয়ের নানান দিক নিয়ে।
ইংল্যান্ডের জেমস অ্যান্ডারসন-স্টুয়ার্ট ব্রড, কিংবা অস্ট্রেলিয়া জশ হ্যাজলউড-প্যাট কামিনসরা যেমন জুটি বেঁধে আক্রমণ সাজিয়ে প্রতিপক্ষ শিবিরে ত্রাস ছড়ান, সেই পথে হাঁটার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন এবাদত-তাসকিনরা, শিগগিরই ফল পেতে আশাবাদী তারা।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের বিপিএলের মাঝেই এ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন এবাদত। রোববার এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে বিপিএলের দল মিনিস্টার ঢাকার অনুশীলন শুরুর আগে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হওয়া এবাদতকে বেশিরভাগ প্রশ্ন করা হয় মূলত জাতীয় টেস্ট দল নিয়েই। সেখানে ব্রড-অ্যান্ডারসনদের মতো বোলিং করার ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেছেন এবাদত।
তিনি বলেছেন, ‘উনারা (ব্রড-অ্যান্ডারসন বা হ্যাজলউড-কামিনস) অনেক অভিজ্ঞ এবং অনেকদিন ধরে টেস্ট ক্রিকেট খেলছেন। আর আমরা মাত্র শুরু করেছি। আমি ১০-১১টা টেস্ট খেলেছি, তাসকিন-শরিফুলও মাত্র শুরু করেছে। আমরাও চেষ্টা করছি যে, ঐরকম জুটি হয়ে খেলবো, বোলিং পার্টনারশিপ করবো। অ্যান্ডারসন-ব্রড যেভাবে শুরু করে, দলকে জেতায়, অবদান রাখে... আমরাও ঐরকম চেষ্টা করছি।‘
Advertisement
এবাদত আরও যোগ করেন, ‘এগুলো আসলে সময়ের ব্যাপার। সবচেয়ে বড় জিনিস হচ্ছে, আপনাকে দেখতে হবে সৎ চেষ্টাটা কীরকম। আমরা কতটুকু চেষ্টা করতেছি। আপনি বাইরে থেকে খুব সুন্দর দেখতে পারবেন, কে কেমন চেষ্টা করছে। আমরা সবাই চেষ্টা করছি যে সত্যিকারের শ্রমটা দিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব টেস্ট ক্রিকেটে উন্নতি করবো, পেস ডিপার্টমেন্টকে উন্নতি করতে পারবো।‘
ব্রড-অ্যান্ডারসনদের মতো জুটি গড়ে বোলিংয়ের জন্য এবাদতের সঙ্গে জুটি বাঁধার বোলার বাংলাদেশ দলে কে আছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে সিলেটের এই পেসার বলেন, ‘আমরা বর্তমানে টেস্টে যে ছয়জন বোলার আছি... তাসকিন, আমি, শরিফুল, রাহি, খালেদ, শহিদুল। নিউজিল্যান্ডে তাসকিন-শরিফুল যেমন শুরু করে দিয়েছে, এরকম যদি আমরা প্রত্যেক টেস্টে করতে পারি... আমরা যদি বছরে ১০টা টেস্ট খেলতে পারি তাহলে ওখান থেকে শেখার বিষয়টা খুব তাড়াতাড়ি হবে।‘
এসময় পেসারদের নিজেদের আলাদা গ্রুপের বিষয়টি উল্লেখ করে এবাদত বলেন, ‘আমরা যে ছয়জন ফাস্ট বোলার আছি, তারা একটা গ্রুপ খুলেছি। সেখানে আমরা প্রতিদিন একটু একটু কথা বলি। শুধুমাত্র ইতিবাচক কথা হয় সেখানে। সেই গ্রুপের নামই দিয়েছি পজিটিভ মাইন্ডসেট। সেখানে প্রতিদিনই কথাবার্তা হয় কীভাবে আমরা উন্নতি করবো।‘
নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টার কোনো কমতি নেই জানিয়ে এবাদত বলেন, ‘আসলে আমরা সত্যিকারেই চেষ্টা করছি সবাই। বিশেষ করে আমরা ফাস্ট বোলার যারা আছি, তারা কীভাবে একসঙ্গে কাজ করবো… সবাই একসঙ্গে থেকে একজন আরেকজনের ভালো হওয়ার দিকে কাজ করছি। ইনশাআল্লাহ্ কয়েক বছরের মধ্যে আমরা ঐভাবে পার্টনারশিপ বোলিং শুরু করবো।‘
এত আশার কথার ভিড়েও হতাশার একটি বিষয়েও আলোকপাত করেন এবাদত। বরাবরই টেস্ট ক্রিকেটে অনিয়মিত এক দল বাংলাদেশ। প্রায়ই দেখা যায় দুইটি টেস্ট সিরিজের মাঝে পড়ে যায় লম্বা বিরতি। এখন বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের কারণে কিছু সুনির্দিষ্ট সিরিজ পাচ্ছে বাংলাদেশ। অন্যথ্যায় প্রায়ই লাল বলের ক্রিকেটে লম্বা বিরতির নজির বেশ কয়েকটিই আছে বাংলাদেশের।
এ বিষয়ে নিজের হতাশা প্রকাশ করে এবাদত বলেছেন, ‘আরেকটা বিষয় হলো, নিউজিল্যান্ডে আমরা মাত্র দুইটা টেস্ট খেলে এসেছি। এরপর আবার দক্ষিণ আফ্রিকায় আমাদের (টেস্ট) ম্যাচ আছে। কিন্তু মাঝে এরকম একটা বিরতি পড়ে গেলে ধারাটা নষ্ট হয়ে যায়। টানা যদি আমরা টেস্টের ওপর থাকি, তখন দেখা যাচ্ছে আমাদের পার্টনারশিপ বোলিংটা ধারাবাহিক থাকবে।‘
এসএএস/এমএমআর/জেআইএম