অভাব-অনটনের সঙ্গে লড়াই করে চলছে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার দুর্গম মাইরংপাড়ার বিনিতা ত্রিপুরার সংসার। স্বামী অন্যের জমিতে দিনমজুরি করেন। একজনের আয়ে পাঁচজনের চাহিদা মেটানো দায়। তাই সবজি বিক্রি করে সংসারের খরচ জোগাচ্ছেন বিনিতাও। তার বাড়তি আয়ে অভাবের সংসারে এখন হাসি ফুটেছে।
Advertisement
বিনিতা ত্রিপুরাই নন, পাহাড়ি জুমের শাক-সবজি আর মৌসুমি ফলমূল বিক্রি করে সংসারের হাল ধরেছেন বাইল্যাছড়ি রাবার বাগান এলাকার মেনুকা ত্রিপুরা, মাইসছড়ির আনেউ মারমা, কমলাকান্ত কার্বারীপাড়া মালতী চাকমা ও কামিনী মেম্বার পাড়ার হরবালা ত্রিপুরার মতো অনেক নারী।
শুধু মাটিরাঙ্গা নয়, খাগড়াছড়ির মধুপুর, স্বনির্ভর, পানছড়ি, দীঘিনালা, গুইমারা ও মহালছড়ির সিঙ্গিনালাসহ প্রায় ছোট-বড় সব বাজার ও রাস্তার পাশে পাহাড়ের দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে দুপুরের পর থেকে শত শত নারী জুমের সবজি নিয়ে আসেন। বিকেলে এসব জায়গায় গেলে দেখা মিলবে বাঁশ কড়ুল, মারফা, কাঁচামরিচ, কচু শাক, কচুর মুখি, কলার থোড়, আলু শাক, কলমি শাক, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, লাউ শাক, পুঁই শাক, চিচিঙা, কাঁচা ও পাকা পেঁপে, কাঁচকলা, জাম্বুরা, কাঁচা কাঁঠালসহ তাজা শাক-সবজির পসরা সাজিয়ে বসে আছেন অসংখ্য নারী। আছেন দু-একজন পুরুষও। তাদের বেচাকেনা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। অফিস ফেরত লোকজন আর স্থানীয়রা কেনেন এসব তাজা সবজি।
বিনিতা ত্রিপুরা বলেন, গত কয়েক বছর ধরে মাটিরাঙ্গা কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনের প্রধান সড়কের পাশে সবজি বিক্রি করছি। প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মতো লাভ হয়। এ টাকায় আমার সংসারের অভাব অনটন কমেছে। বাড়তি আয়ে ভালোই চলছে তাদের অভাব-অনটনের সংসার।
Advertisement
অসুস্থ স্বামী আর চার ছেলে-মেয়ের সংসারের হাল ধরেছেন বাইল্যাছড়ি রাবার বাগান এলাকার মেনুকা ত্রিপুরা। নিজের বাড়ির আঙিনায় উৎপাদিত সবজি আর প্রতিবেশীদের বাড়ি থেকে সবজি ও মৌসুমি ফল সংগ্রহ করে মাটিরাঙ্গা বাজারে বিক্রি করেন তিনি। সবজি বিক্রির টাকাতেই চলে স্বামীর চিকিৎসাসহ সংসারের সব খরচ।
খোলা আকাশের নিচে রাস্তার পাশে সবজি বিক্রি করতে কষ্ট হয় জানিয়ে সবজি বিক্রেতা পুষ্পবালা ত্রিপুরা বলেন, সবজি বিক্রি করে আমাদের সংসার চললেও কষ্ট দেখার কেউ নেই। খোলা আকাশের নিচে বসে রোদ-বৃষ্টির মধ্যে সবজি বিক্রি কষ্টকর। শুষ্ক মৌসুমে কোনোরকম চললেও বর্ষাকালে ভোগান্তির শেষ থাকে না। বসার জন্য ছাউনি করে দিলে খুব ভালো হয়।
প্রায়ই অফিস শেষে তাজা সবজি কিনে বাড়ি ফিরেন মুকুল চাকমা ও রিপা চাকমা। তারা বলেন, সারাদিন অফিস শেষে নিজের বাড়িতে ফেরার পর বাজার করতে ভালো লাগে না। তাই বাড়ি ফেরার পথে জুমের টাটকা শাক-সবজি কিনে নিয়ে যাই। বাজারের তুলনায় তাদের সবজির দামও একটু কম থাকে। পাশাপাশি সবকিছুই টাটকা পাওয়া যায়।
সবজি বিক্রি করে সংসারের হাল ধরা এসব নারীদের ‘সংগ্রামী’ উল্লেখ করে স্থানীয় এনজিও কর্মী শ্যামল বিকাশ চাকমা বলেন, এসব নারীরা অলস সময় না কাটিয়ে সামান্য পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করে পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাই আমাদেরও উচিত এসব সংগ্রামীদের পাশে দাঁড়ানো।
Advertisement
সমাজকর্মী ও গুইমারা উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ঝর্ণা ত্রিপুরা জাগো নিউজকে বলেন, পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীরাও এখন সবজি বিক্রি করে পরিবারের আর্থিক সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি স্বাবলম্বী হচ্ছে। সব বাধাকে পেছনে ফেলে তারা নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তাহলে পাহাড়ের নারীরা কেন পিছিয়ে থাকবে।
মাটিরাঙ্গা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হেমেন্দ্র ত্রিপুরা জাগো নিউজকে বলেন, খাগড়াছড়ির বিভিন্ন হাট-বাজারে গেলেই বোঝা যায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীরা পিছিয়ে নেই। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সবজি ও ফলমূল বিক্রি করে সংসারের হাল ধরছে। শত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও পাহাড়রে নারীদের এগিয়ে চলা অত্যন্ত ইতিবাচক।
এসজে/জিকেএস