কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার চন্ডিপাশা ইউনিয়নের ষাইটকাহন গ্রাম। সেখানে একসময়ের অনাবাদি জমিতে এখন চোখে পড়বে বিদেশি ফল আনারের বাগান। বাগানের গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে সুস্বাদু আনারের ফুল আর ফল।
Advertisement
জেলায় প্রথমবারের মতো আনার চাষ করে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন ষাইটকাহন গ্রামের কলেজ পড়ুয়া যুবক আনোয়ার হোসেন ফয়সাল। তিনি ষাইটকাহন গ্রামের রায়হান উদ্দিনের ছেলে।
ইউটিউব দেখে আনারের চাষ করে সফলতা পেয়েছেন পাকুন্দিয়া ডিগ্রি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ফয়সাল। এরই মধ্যে তার বাগানের গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে উন্নত জাতের আনাদের ফুল ও ফল।
ফয়সালের সফলতার গল্প এখন এলাকাবসীর মুখে মুখে। তার দেখাদেখি আনার চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন এলাকাবাসী। এদিকে পুরো জেলায় আনার চাষের উদ্যোগের কথা জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
Advertisement
লেখাপড়ার পাশাপাশি কৃষিকাজে বরাবরই আগ্রহ ছিলো ওই গ্রামের প্রবাসী রায়গান উদ্দিনের ছেলে ফয়সালের। ইউটিউব দেখে আনার চাষে আগ্রহী হয় ফয়সাল। বাড়ির পাশে পৈত্রিক অনাবাদি এক একর জমিতে ১৫০টি ভারতীয় সুপার বাগুয়া জাতের আনারের চারা দিয়ে শুরু করেন স্বপ্নের প্রকল্প। এরপর আর তাকে পেছনে তাকাতে হয়নি।
মাত্র ৬ মাসের ব্যবধানে প্রতিটি গাছে শোভা পাচ্ছে দৃষ্টিনন্দন আনারের ফল আর ফল।
কঠোর পরিশ্রম আর একাগ্রতায় সফলতার দ্বারপ্রান্তে ফয়সাল। আর তিন মাস পর থেকেই শুরু হবে ফল সংগ্রহ। বাগান তৈরিতে তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে। গাছ পরিপূর্ণ হলে প্রতি বছর বড় অংকের টাকা আয় করতে পারবেন বলে আশা করছেন ফয়সাল।
ফয়সাল জানান, কৃষি কাজের প্রতি আমার আগ্রহ ছিল। লেখাপড়ার পাশাপাশি কিছু একটা করার ইচ্ছে ছিল অনেক দিন ধরে। ইউটিউবে আনার চাষ দেখে আমার ভালো লাগে। তাই স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় বাবার পতিত ৩৫ একর জমিতে আনার চাষ শুরু করি। ১৫০টি গাছ রোপণ করি ৬ মাস আগে।
Advertisement
এখন প্রতিটি গাছে ফুল এবং ফল ধরেছে। তিনি জানান, আর ৬ মাস পরই আনার বিক্রি সম্ভব হবে। বছরে তিনবার আনার তোলা যাবে। এ পর্যন্ত তার সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে। উৎপাদন শুরু হলে প্রতি বছর ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকার আনার বিক্রি করা যাবে বলে আশা করছেন ফয়সাল। গাছের বয়স এক বছর হলে ফয়সালের বাগান থেকে বছরে পাওয়া যাবে প্রায় দুই টন আনার। যার বাজার মূল্য ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকা।
ফয়সালের সফলতায় মুগ্ধ সবাই। প্রতিদিন আশপাশের লোকজন আসছেন আনার বাগান দেখতে। তার দেখাদেখি আনার চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন অনেকে।
চন্ডিপাশা গ্রামের হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা আনার বিদেশি ফল হিসেবে জানতাম। এটা যে আমাদের দেশের ক্ষেতে আবাদ করা যায় সেটি জানা ছিল না। এখন ফয়সালের বাগান দেখে আমরাও আনার চাষ করার চেষ্টা করব।
জেলায় প্রথম শুরু হওয়া আনার চাষে নানাভাবে সহযোগিতা করছে কৃষি বিভাগ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. ছাইফুল আলম বলেন, ফয়সাল অসম্ভবকে সম্ভব করেছে।
তার বাগানে আনার পুষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে ফলন ভালো হবে। তবে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। আমরা জেলার অন্যান্য উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে আনার চাষের বিষয়টি বিবেচনা করছি।
নূর মোহাম্মদ/এমএমএফ/জেআইএম