ডিজিটাল যুগে স্মার্টফোন লক-আনলক করতে, তালা খুলতে, গাড়ি স্টার্ট দিতেও লাগে টিপসই। গুরুত্বপূর্ণ সব দলিলে টিপসই লাগবেই।
Advertisement
ধরুন, আপনি ফোনের সিম কিনতে গিয়েছেন কিংবা রেজিষ্ট্রি অফিসে জমির দলিল করাবেন। রেজিষ্ট্রি অফিসের খাতায় সই করেছেন। তবে তাতে কাজ হলো না।
অফিসের সরকারি ‘সরকার’ সাহেব আপনার বুড়ো আঙুলটা চেপে ধরবেন। কিন্তু কেন? টিপসই তো আদিকালের স্টাইল, এই ডিজিটাল যুগেও কেন এর প্রয়োজন?
আসলে পুরোনো আমলের রীতি হিসেবে নয়, বরং বিভিন্ন নথিপত্রে টিপসই ব্যবহার হওয়ার উদ্দেশ্য ভিন্ন। মানুষ শনাক্ত করার অব্যর্থ এক উপায় হলো টিপসই। বিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষের আঙুলে বিশেষ প্যাটার্নের দাগ থাকে।
Advertisement
প্রত্যেক মানুষের আঙুলের রেখামালা ভিন্ন হয়। কারও সঙ্গে কারও মিল নেই। আঙুলের চামড়ার ওপরে সারিবদ্ধ রেখাগুলো কিছুটা উঁচু হয়ে থাকে।
চামড়ার বাইরের দৃশ্যমান অংশ বা অ্যাপিডারমিস। যদি কোনো কারণে আঙুলের অ্যাপিডারমিস কেটে ছিঁড়ে যায়, তাহলে আবার একই প্যাটার্নের রেখা সংবলিত অ্যাপিডারমিস আপন মনে তৈরি হয়ে যায়।
তবে গভীর ক্ষত হয়ে যদি প্যাপিলি নষ্ট হয়, তাহলে আঙুলের রেখা আর তৈরি হয় না। গবেষকরা পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্তে এসেছেন, আঙুলের এই রেখাগুলোর প্যাটার্ন সাধারণত ৫ ধরনের হয়ে থাকে।
তবে প্রত্যেকটি ধরনেরই ভিন্ন বিন্যাস আঙুলের ছাপ কাগজের নিয়ে, পরে পরীক্ষা করে টিপসইকারীকে চিহ্নিত করা সম্ভব।
Advertisement
এজন্য পাসপোর্ট ও এনআইডি ইত্যাদি বিশেষ বিশেষ নিরাপত্তা ক্ষেত্রে টিপসই রাখার রেওয়াজ প্রচলিত রয়েছে। থানায় আসামিদের টিপসই রাখা হয় একই উদ্দেশ্যে।
অবশ্য পায়ের আঙুলেও নির্দিষ্ট প্যাটার্নের রেখা থাকে। তবে সুবিধাজনক বলে হাতের আঙুলের টিপসই রাখার রেওয়াজ এখনো প্রচলিত রয়েছে।
ফিঙ্গার প্রিন্ট বিশেষজ্ঞরা টিপসই এর মধ্যে সম্প্রতি কতিপয় নির্দিষ্ট বংশগত ধরন খুঁজে পেয়েছেন। তবে অপরাধী ধরতে এসব তেমন কাজে আসে না।
কিছু পরিবারের ক্ষেত্রে অবশ্য নির্দিষ্ট ধরনের পরিচিতির সন্ধান পাওয়া সম্ভব হয়। তবে এর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে হাতের রেখাগুলোর বৈশিষ্ট্য বা টিপসই।
বিচিত্র ব্যাপার হলো, যমজ ভাইবোনের হাতের ছাপের মধ্যে মিলের চেয়ে অমিলই বেশি দেখা যায়। মেয়েদের হাতের টিপসই সাধারণত ছোট থাকে।
বিশেষজ্ঞরাও বিষয়টি অস্বীকার করতে চান না। তারা টিপসইকে অজানা কোনো লিঙ্গের ধরে নিয়ে ছাপটা পরীক্ষা করেন। যুক্তরাজ্যের ফিঙ্গার প্রিন্ট ব্যুরোতে রাখা টিপসই সাধারণত অনেক ছোট করে রাখা হয়।
যুক্তরাজ্যের ফিঙ্গার প্রিন্ট ব্যুরো টিপসই এর সামঞ্জস্যপূর্ণ ১৫টি বৈশিষ্ট খুঁজে পেয়েছেন। তাদের মতে, প্রত্যেক মানুষের হাতের আঙ্গুলের ছাপ বা ফিঙ্গার প্রিন্ট দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তির সঙ্গে কখনো মিলে না।
তবে হ্যাঁ। আধুনিক প্রযুক্তি এসেছে, কোনো ব্যক্তি ইচ্ছা করলেই প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে তার ফিঙ্গার প্রিন্ট বদল করে ফেলতে পারেন।
লেখক: গবেষক, এম.ফিল স্কলার, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
জেএমএস/এমএস