আন্তর্জাতিক

ত্রিপুরায় বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধীদের ক্ষোভ

ত্রিপুরা প্রতিনিধি

Advertisement

ভারতের ত্রিপুরায় রাজ্য সরকার অর্থাৎ বিজেপি শাসিত জোট সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীরা ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সিপিআইএম-এর রাজ্য সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরী অভিযোগ করেছেন, সম্পূর্ণ দিশাহীন এবং দুর্নীতিগ্রস্থ একটি সরকার চলছে ত্রিপুরায়। শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) তিনি বলেন, শুরু থেকেই দিশা ছিলো না এই সরকারের। আর এখন? সম্পূর্ণই দিশাহীন অবস্থা।

গত বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) সিপিআইএম রাজ্য কমিটির এক ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয় সেসব বিষয় নিয়েই বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন দলের রাজ্য কমিটির এই সম্পাদক। রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিজেপি শাসিত জোট সরকারের প্রতিদিনের কাজে দিশাহীনতার একাধিক উদাহরণ রয়েছে।

সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক বলেন, জোট সরকারের সাড়ে তিন বছরেরও বেশি সময়ে বিদ্যুৎ, গ্রামোন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্রসহ সবগুলো দফতরেই অবাধে দুর্নীতি চলছে। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা খরচ করেও সরকারের ব্যর্থতা আড়াল করা সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে প্রধানমন্ত্রীকেই এখন ঢাল করা হচ্ছে বলে তীর্যক মন্তব্য করেন তিনি।

Advertisement

টিএসইসিএল-এর (ত্রিপুরা স্টেট ইলেক্ট্রিসিটি কর্পোরেশন লিমিটেড) বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী। তিনি বলেন, একজন দুর্নীতিবাজকে দিয়ে চালানো হচ্ছে এই টিএসইসিএল। তিনি আরও বলেন, এমন কোনও সংবাদপত্র নেই যেখানে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে খবর হয়নি। অথচ সরকার তাকে সরাতে পারছে না।

গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের বিরুদ্ধেও তিনি নানা গড়মিলের অভিযোগ আনেন। কেন্দ্রীয় সরকারের পোর্টাল অনুযায়ী, বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে রাজ্যের এক-চুতর্থাংশ ক্ষেত্রেও অডিট হয়নি। রাজ্যের সোস্যাল অডিট কর্মকর্তার প্রাথমিক অভিমত বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এতে ১৮৩ কোটি টাকার গরমিল নজরে আসে। কিন্তু তারপরও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে না।

সরকারি ঘর নিয়ে তিনি বলেন, মাত্র কয়েক দিন আগেই পিএমএওয়াই প্রকল্পে ঘর নিয়ে কত বড়াই করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রকৃত অর্থে যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে দেখা গেছে, প্রতিটি মহকুমায় প্রধানমন্ত্রী আবাসের সুবিধা পাইয়ে দিতে সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে গড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, এই টাকা না দিলে সুবিধাভোগীদের দ্বিতীয় কিস্তির টাকা দেওয়া হবে না।

টিএসআর নিয়োগেও ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদককের। তার কথায়, এতে একজন মণ্ডল সভাপতির নামও উঠে এসেছে। এছাড়াও যিনি অভিযোগ করেছেন তিনি নিজেও শাসক দলের এক নেত্রী। এক্ষেত্রে নেই কোনো এফআইআর, হয়নি কোনো তদন্তও।

Advertisement

ধান কেনার বিষয়টি নিয়েও সরকারকে তুলোধোনা করেন সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক। তিনি বলেন, গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে অকাল বর্ষণে প্রচুর পরিমাণে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কৃষকদের। অর্ধেকের চেয়েও বেশি ক্ষেত্রে কৃষকদের ফসল পুরোপুরিভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এক্ষেত্রে কৃষকদের স্বার্থে সরকার কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি, শুধু সার্কুলার জারি করেই খালাস হয়েছে।

মাত্র ৯ থেকে ১০ মাসের শাসনেই স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠে আসছে এডিসির বিরুদ্ধে। ইঞ্জিনিয়ারসহ অন্যান্য পদে চাকরি নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ রয়েছে এডিসি এলাকায়। মূলত চেয়ারম্যান, মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য, কার্যনির্বাহী সদস্যদের পরিবারের বাইরে কেউই চাকরির সুযোগ পাচ্ছেন না এখন।

রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার বিষয়ে তিনি বলেন, গত ৫০ দিনে ২৩ জন খুন হয়েছেন ত্রিপুরা রাজ্যে। আত্মহত্যা করেছেন আরও ৪৭ জন। অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা রয়েছে ৩২ টি। এছাড়াও গণধষর্ণের ঘটনা রয়েছে আরও ৫টি। শ্লীলতাহানির ঘটনা রয়েছে ১১টি। অপহরণ হয়েছেন চারজন।

টিটিএন/এমএস