আইন-আদালত

তমা-হিশামের পাল্টাপাল্টি মারধরের অভিযোগ, মামলা তুলতে আপসনামায় সই

২০১৯ সালের মে মাসে হুট করেই বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী অভিনেত্রী তমা মির্জা। গাঁটছড়া বাঁধেন হিশাম চিশতীর সঙ্গে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক হিশাম পেশায় ব্যবসায়ী। রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত। বিয়ের বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরে। স্বামী-স্ত্রী একে অপরের বিরুদ্ধে আনেন মারধরের অভিযোগ। পরস্পরের বিরুদ্ধে থানায় মামলাও করেন। ঝামেলা গড়ায় আদালত পর্যন্ত। তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি।

Advertisement

এরপর স্বামীকে ছেড়ে একা থাকতে শুরু করেন তমা। খবরটি ছিল গোপন। ২০২১ সালের মে মাসে দুই পরিবারের সদস্য আলোচনায় বসেন। মামলা তুলে নিতে আপসনামায় সই করেন তমা ও হিশাম। দুই পরিবারের সদস্যদের সম্মতি ও উপস্থিতিতেই আপসনামায় সই করেন তারা। তবে তাতে সংসার জোড়া লাগেনি। এর ক’মাস পরই সেপ্টেম্বরের ৭ তারিখে আইনজীবীর মাধ্যমে তমাকে ডিভোর্সের নোটিশ পাঠান হিশাম।

এ বিষয়ে তমা মির্জা জাগো নিউজকে বলেন, আমরা উভয়ে পরিবারের সঙ্গে বসে মামলা চালাবো না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দুজন দুজনের বিরুদ্ধে মামলা না চালানোর সিদ্ধান্তের পরই আপসনামায় সই করেছি।

হিশাম চিশতী বলেন, বিয়ের পর থেকে বেশকিছু ঝামেলা তৈরি হয়েছে। যা মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে। আমি আর এসব সহ্য করতে পারছি না। আমার পরিবার আছে, পারিবারিক সম্মান আছে। সবকিছু বিবেচনা করে ২০২১ সালের ৩ মে সাক্ষীদের সামনে রেখে আপসনামায় সইয়ের মাধ্যমে আমরা দুজনই সব মামলা উঠিয়ে নেই।

Advertisement

এদিকে আপসনামায় সই করলেও স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের বিরুদ্ধে করা মামলা দুটি এখনো তদন্তাধীন বলে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন বাড্ডা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু সাঈদ।

২০২০ সালের ৫ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর বাড্ডা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং যৌতুকের জন্য মারধরসহ হুমকি দেওয়ার অভিযোগ এনে স্বামী হিশাম চিশতীর বিরুদ্ধে মামলা করেন চিত্রনায়িকা তমা মির্জা। এর পরদিনই (৬ ডিসেম্বর) স্ত্রী তমাসহ চারজনের বিরুদ্ধে হিশাম চিশতী বাদী হয়ে পাল্টা মামলা করেন। দুটি মামলাই তদন্ত করছে বাড্ডা থানার পুলিশ।

তমা মির্জা মামলার অভিযোগে বলেন, ২০২০ সালের ৫ ডিসেম্বর রাত ৩টার দিকে হিশাম আমার বাসায় আসে। আমাকে মারধর করলে চিৎকারে পাশের রুম থেকে বাবা-মা এলে হিশাম তাদেরও মারধর করে। ঘরে থাকা ফুলদানি দিয়ে আমার মায়ের পিঠে ও মাথায় এবং আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। এতে বাবা-মাসহ আমি আহত হই। এরপর হিশাম আমাকেসহ আমার বাবা-মাকে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে বলতে থাকে যে, প্রাণে মেরে ফেলবে এবং তার কাছে থাকা আমার ব্যক্তিগত মুহূর্তের অনেক ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করে সামাজিকভাবে হেয় করবে। পরবর্তীসময়ে আমিসহ আমার বাবা-মা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেই।

তবে হিশাম চিশতীর করা মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, হিশামের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় ২০ লাখ টাকা ধার হিসেবে নেন তমা। সেই টাকা ফেরত চাইলে তমা কালক্ষেপণ শুরু করেন। ২৯ সেপ্টেম্বর হিশাম কানাডা থেকে দেশে এসে তমাকে তার নিজের বাসায় এসে থাকতে বলেন। কিন্তু তিনি নানা অজুহাতে স্বামীর বাসায় না গিয়ে বাবার বাসায় থাকেন। এরপর হিশাম শ্বশুরবাড়ি গেলে তার সঙ্গে তমাসহ বাড়ির সবাই খারাপ আচরণ শুরু করেন। এক পর্যায়ে গত ৫ ডিসেম্বর রাত ৩টার দিকে তমা মির্জার বাবার বাড্ডার বাসায় যেতে বলা হয় হিশামকে। সেখানে নানা বিষয়ে আলোচনার পর ধার নেওয়া ২০ লাখ টাকা ফেরত চাইলে বাসার সদস্যদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় হিশামের।

Advertisement

এজাহারে আরও বলা হয়, একপর্যায়ে শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে হিশামের ওপর আক্রমণ করেন। ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে তাকে খুন করার চেষ্টা করা হয়। এছাড়া লোহার চেয়ার দিয়ে আঘাত করলে ডান হাতে গুরুতর আঘাত পেয়ে মেঝেতে পড়ে যান হিশাম। তিনি চিৎকার শুরু করলে বাসার নিচের দারোয়ান ও আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।

২০১৯ সালের ৭ মে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক হিশাম চিশতীকে বিয়ে করেন ঢাকাই নায়িকা তমা মির্জা। বর্তমানে তমা দেশে থাকলেও হিশামের অবস্থান কানাডায়।

২০১০ সালে এমবি মানিক পরিচালিত ‘বলো না তুমি আমার’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে রুপালি পর্দায় অভিষেক ঘটে তমা মির্জার। ‘নদীজন’ ছবির পার্শ্ব-অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে নেন তিনি। এরপর থেকে নিয়মিতই কাজ করে যাচ্ছেন তমা। সবশেষ গেল বছর রায়হান রাফির ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’ ওয়েব ফিল্ম দিয়ে আলোচনায় আসেন এ চিত্রনায়িকা।

জেএ/এমকেআর/এএ/এমএস