হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) র্যাগিং প্রতিরোধ এবং প্রতিকারের লক্ষ্যে ৯টি ধারার একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে র্যাগিংয়ের ধরন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি বহিষ্কার করা হয়েছে।
Advertisement
শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. ইমরান পারভেজ জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে যদি র্যাগিংয়ের অভিযোগ ওঠে এবং তা প্রমাণিত হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান আইন অনুযায়ী ও র্যাগিংয়ের ধরণ অনুযায়ী বিভিন্ন শাস্তিসহ তার ছাত্রত্ব বাতিল করা হতে পারে। এছাড়াও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, এই নীতিমালা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের র্যাগিং থেকে বিরত রাখতে তৈরি করা হয়েছে এবং নীতিমালা অনুযায়ী কেউ র্যাগিংয়ে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ হবে।
Advertisement
নীতিমালাটিতে শিক্ষার্থী, র্যাগিং, অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াড, কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক, অভিভাবক, কমিউনিটি, শাস্তি এসবের সংজ্ঞা দেওয়া হয়। নীতিমালা অনুসারে কাউকে উদ্দেশ্য করে এমন কিছু বলা বা লেখা, যা খারাপ কোনো কিছুর প্রতি ইঙ্গিত বহন করে, উপহাস করা, খারাপ নামে সম্বোধন করা বা ডাকা, অশালীন শব্দ ব্যবহার করা, গালিগালাজ করা, হুমকি দেওয়া ইত্যাদিকে মৌখিক র্যাগিং বলা হয়েছে।
কাউকে কোনো কিছু দিয়ে আঘাত করা, হাত নিয়ে চড়-থাপ্পর মারা, লাথি মারা, ধাক্কা মারা, খোঁচা দেওয়া, থুথু মারা, বেঁধে রাখা, কোনো বিশেষ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে বা বসিয়ে বা বিশেষ অবস্থায় থাকতে নির্দেশ দেওয়া অথবা বাধ্য করা, কারও কোনো জিনিসপত্র জোর করে নিয়ে যাওয়া বা ভেঙে ফেলা, মুখ দিয়ে অশালীন বা অসৌজন্যমূলক অঙ্গভঙ্গি করাকে শারীরিক র্যাগিং বলা হয়েছে।
সামাজিক মর্যাদা, একক বা দলগত বন্ধুত্ব বা পারস্পরিক সম্পর্ক, ধর্মীয় পরিচিতি বা বংশগত অহংকারবোধ থেকে কোন শিক্ষার্থীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা বা তা করতে প্ররোচিত করা বা কারো সাথে বন্ধুত্ব করতে বারণ করা, কারো সম্পর্কে গুজব ছড়ানো, প্রকাশ্যে কাউকে অপমান করা, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র বা জাত নিয়ে কোনো কথা বলা ইত্যাদিকে সামাজিক র্যাগিং বলা হয়েছে।
এছাড়া ওই নীতিমালায় সাইবার র্যাগিং, সেক্সুয়াল র্যাগিং ও জাতিগত র্যাগিং সম্পর্কেও বলা হয়েছে।
Advertisement
বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে, আবাসিক হল বা মেসে কোনো ধরনে র্যাগিংয়ের ঘটনা সংগঠিত হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা খতিয়ে দেখবে এবং বিষয়টি লিপিবদ্ধ করবে। এ ক্ষেত্রে ঘটনার ধরন ও স্থান বিবেচনায় নিয়ে ‘অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াড অব হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর’এর মূল কমিটি সংশ্লিষ্ট উপ-কমিটিকে দায়িত্ব দেবে। কমিটি তা যথার্থ প্রক্রিয়ায় তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিল করলে সে অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, র্যাগিংয়ের জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হলো, তদন্তে র্যাগিং প্রমাণিত হলে এর ধরণ অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ র্যাগিংকারীকে বিভিন্ন শাস্তি দিতে পারবেন। যেমন, সতর্কতা, বিভিন্ন মেয়াদে শিক্ষা কার্যক্রম হতে সাময়িক বহিষ্কার, স্থায়ী বহিষ্কার, আবাসিক হল হতে সাময়িক বহিষ্কার, স্থায়ী বহিষ্কার ইত্যাদি আরোপ করতে পারবেন এবং ঘটনার গুরুত্ব সাপেক্ষে প্রচলিত ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী বরাবর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রেরণ করা হবে। এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং সংগঠিত হয় কি না তা নিয়মিত মনিটরিং করা হবে বলে জানানো হয়।
র্যাগিং প্রতিরোধে ‘অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াড অব হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারারকে আহ্বায়ক করে মূল কমিটি গঠন করা হয়েছে। মূল কমিটিতে আরও থাকবেন আহ্বায়ক (ডিন কাউন্সিল), আহ্বায়ক (হলসুপার কাউন্সিল), প্রক্টর, পরিচালক (ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগ), সকল সহকারী প্রক্টর এবং সকল সহকারী পরিচালক(ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগ)।
এছাড়া অনুষদওয়ারী ও আবাসিকসহ (হলওয়ারী ও মেস) আরও উপ-কমিটি গঠন করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. ইয়াছিন প্রধান জাগো নিউজকে বলেন, ক্যাম্পাসে র্যাগিং বন্ধে প্রক্টোরিয়াল বডি সবসময় তৎপর রয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে ক্যাম্পাসে প্রচারণা করা হবে। র্যাগিং বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এরই মধ্যে সচেতনতামূলক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ যদি কারও দ্বারা র্যাগিংয়ের শিকার হয়, তাহলে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করতে পারবে এবং যদি সে অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী স্বচ্ছ শাস্তি বহিষ্কারসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসজে/এএসএম