বর্তমান বিশ্বে সম্ভাবনাময় পেশাগুলোর মধ্যে কল সেন্টার সার্ভিস অন্যতম। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো এ খাতের পেশাজীবীরা যথার্থ স্বীকৃতি পাননি। তবে এবার এ স্বীকৃতির পথকে সুগম করে দিলো নতুন এক উপন্যাস, নাম ‘কল সেন্টারের অপরাজিতা’। রাহিতুল ইসলামের এ উপন্যাসে উঠে এসেছে কল সেন্টার কর্মীদের পেশাগত জীবনের সংগ্রাম এবং সব ধরনের প্রতিকূলতা পেরিয়ে দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার অদম্য প্রত্যয়ের গল্প।
Advertisement
বাংলাদেশে কল সেন্টারের কাজের ব্যাপকতা যেমন অনেক; তেমনই এর উপযোগিতাও দিন দিন বাড়ছে। আধুনিক জীবনযাত্রা এ সেবা ছাড়া অচল। আজকের দিনে মানুষ যাতে ২৪ ঘণ্টাই সেবা পেতে পারে, সে জন্য কল সেন্টারের বিকল্প নেই। নানা প্রতিষ্ঠান সীমিত আকারে নিজেদের কর্মী দিয়ে কল সেন্টার পরিচলানা করলেও দিন দিন আলাদা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
এসব প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের সেবা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন কল সেন্টারের সঙ্গে চুক্তি করে। বিশেষভাবে মোবাইল কোম্পানিগুলো এবং ব্যাংকের সেবার ক্ষেত্রে কল সেন্টার অপরিহার্য। যেহেতু এ সেবাগুলো মানুষের ২৪ ঘণ্টাই দরকার, এখানে সার্বক্ষণিক সেবা দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষিত জনবল লাগবেই।
এ ছাড়া উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশ সরকারও চালু করেছে জরুরি সেবার নম্বর ৯৯৯। সারাদেশ থেকে ২৪ ঘণ্টাই এখানে নানারকম সাহায্যের জন্য ফোনকল আসে। সেগুলো গ্রহণ করা এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করে কল সেন্টার। কল সেন্টার ছাড়া এ সেবা দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তবে সাধারণ মানুষের পেশাটি সম্পর্কে তেমন ধারণা না থাকায় এ পেশার লোকজন নানা বিড়ম্বনায় পড়েন। ‘কল সেন্টারের অপরাজিতা’ উপন্যাসের মূল চরিত্রের নাম অপরাজিতা। এ অপরাজিতা পরাজয় মানে না। আর সব কল সেন্টারের পেশাজীবীদের মতো তাকেও নানা সময় নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। মধ্যবিত্ত পরিবারের অপরাজিতা তার পেশাকে ভালোবাসে। নিজেকে অন্যান্য পেশার লোকের চেয়ে কম যোগ্যতাসম্পন্ন মনে করে না। অন্যায়ের সঙ্গে আপস করে না। পিতৃহীন সংসারে এক ভাই আর মাকে নিয়ে তার বসবাস। সংসার চালাতে তার ভূমিকাও কম নয়।
Advertisement
আমাদের সমাজে মেয়েদের চাকরি করা নিয়ে বাজে কথা শুনতে হয় প্রায়ই। তার ওপরে যদি হয় এমন পেশা, যেখানে রাতেও কাজ করতে হয়। তাহলে তো কথাই নেই। আত্মীয়-স্বজনও দু’কথা শুনিয়ে দিতে ছাড়ে না। কিন্তু অপরাজিতা এসব গায়ে মাখে না। তার সামনে পেশাগত চ্যালেঞ্জ যেমন আছে, তেমনি সংসারের চ্যালেঞ্জও কম নয়। অল্প বয়সে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় অবিবাহিতা অপরাজিতা। একেকটি চ্যালেঞ্জ একেক রকম। নারী হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে সেসব চ্যালেঞ্জ উতরে যেতে নানা পদক্ষেপ নিতে হয়। তার মনোবল দৃঢ়। সে কীভাবে জীবনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে, তা নিয়েই উপন্যাস। ‘কল সেন্টারের অপরাজিতা’ লেখক রাহিতুল ইসলামের ১১তম উপন্যাস। এর আগেও দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের না-বলা গল্পগুলো তার লেখনীতে তুলে ধরেছেন। তার গল্প-উপন্যাসগুলোর মাধ্যমে পাঠককে জানিয়ে থাকেন তথ্যপ্রযুক্তি জগতের জানা-অজানা কথা। তার চিন্তার সবটা জুড়েই আছে দেশের আইসিটি খাত।
তার লেখা ‘আউটসোর্সিং ও ভালোবাসার গল্প’, ‘কেমন আছে ফ্রিল্যান্সার নাদিয়া?’, ‘চরের মাস্টার কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার’, ‘ভালোবাসার হাটবাজার’, ‘কীভাবে গড়বেন ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার’, ‘হ্যালো ডাক্তার আপা’, ‘ফ্রিল্যান্সার সুমনের দিনরাত’ বইগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
তার আউটসোর্সিং ও ভালোবাসার গল্প এবং চরের মাস্টার কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার অবলম্বনে নির্মিত শর্টফিল্মও ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে তরুণদের মাঝে। এ ছাড়াও আউটসোর্সিং ও ভালোবাসার গল্প বইটি ‘Freelancing and A Tale of Love’ নামে ইংরেজিতে অনুবাদ হয়েছে। এ উপন্যাসের জন্য তিনি পেয়েছেন ‘জাতীয় ফ্রিল্যান্সিং অ্যাওয়ার্ড ২০১৯’। এ উপন্যাস দেশের ফ্রিল্যান্সারদের জাতীয় স্বীকৃতি ত্বরান্বিত করেছে। এবার পালা কল সেন্টারের পেশাজীবীদের।
প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘কল সেন্টারের অপরাজিতা’। মূল্য ২০০ টাকা। উপন্যাসটি প্রথমা ডটকম ও রকমারি ডটকমে পাওয়া যাবে।
Advertisement
এসইউ/জিকেএস