বিশ্বে দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ পামওয়েল উৎপাদনকারী দেশ মালয়েশিয়া। এ খাতে শ্রমিক সংকট থাকায় বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের ভাবিয়ে তুলেছে। ২৭ জানুয়ারি সাউথ চায়না মর্নিংপোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উৎপাদন বৃদ্ধি গত বছর পাঁচ বছরে সর্বনিম্নে নেমে এসেছে।
Advertisement
চাষিরা বলছেন, এর প্রধান কারণ শ্রমিক ঘাটতি। চাষিরা স্থানীয়দের দিয়ে কাজ করতে না পারায় বিদেশি শ্রমিকের প্রয়োজন। কোম্পানিগুলো ফসল কাটাতে স্বয়ংক্রিয়তা এবং যান্ত্রিকীকরণ ব্যবহার করে সংকটকে সহজ করার উপায় খুঁজছে পাম তেল মালিকরা।
২০২০ সাল থেকে শ্রমিক সংকট উত্তরণে বাগানের বাইরে সে সময় টানানো হয়েছে নিয়োগ বিজ্ঞাপন। এতে শ্রমিকদের বিনামূল্যে আবাসন, খাবার পানি সরবরাহের প্রস্তাবও দেওয়া হয়। কোনো কোনো প্রদেশে ট্রাক্টর চালানো থেকে সবরকম সুযোগ-সুবিধা দিয়ে শ্রমিকদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা চালালেও কাজ হয়নি।
সে সময় স্থানীয় শ্রমিক নিয়োগের চেষ্টা চললেও এক্ষেত্রে আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় কর্তৃপক্ষ মালয়েশিয়ান নাগরিক যারা বিভিন্ন জেলে বন্দি রয়েছে তাদের এই খাতে কাজে লাগানোর প্রস্তাবও দেওয়া হয়, তাতেও কাজ হয়নি। ফলে পাম অয়েল উৎপাদন ও ফল সংগ্রহ করা ব্যাপকহারে ব্যাহত হচ্ছে।
Advertisement
এদিকে শ্রমিক সংকট উওরণে মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মী নিয়োগে সম্প্রতি অনলাইন আবেদনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। ২৮ জানুয়ারি থেকে প্ল্যান্টেশন খাতে অবেদন করতে বলা হয়েছে। এছাড়া বৃক্ষরোপণ খাতসহ অন্যান্য খাতে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করা যাবে
এর আগে গত ১০ জানুয়ারি দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রী সারাভানান নিয়োগকর্তাদের উদ্দেশে বলেছেন, যারা বিদেশি কর্মী নিয়োগ করতে চান, তারা প্রকৃত প্রয়োজনের ভিত্তিতে আবেদন জমা দিতে পারবেন। নিয়োগকর্তাদের আবেদন প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে এবং প্রতারকদের প্রতারণা এড়াতে মধ্যস্থতাকারী বা তৃতীয় পক্ষে মাধ্যমে কোনো অর্থ লেনদেন করতে নিষেধ করেছেন মানব সম্পদমন্ত্রী।
১৫ জানুয়ারি মানব সম্পদমন্ত্রী স্বাক্ষরিত এক নোটিশে বলা হয়েছে- দেশটিতে বৃক্ষরোপণ খাতে শ্রমিক ঘাটতি কমাতে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৩২ হাজার বিদেশি শ্রমিক আনার জন্য সরকার বিশেষ অনুমোদন দিয়েছে।
গত বছরের ১০ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভার বৈঠকে বৃক্ষরোপণ খাত ছাড়া অন্য সব সেক্টরে বিদেশি কর্মী নিয়োগের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে অনুমোদিত খাতগুলো হলো- কৃষি, উৎপাদন, পরিষেবা, খনি এবং খনন, নির্মাণ এবং গৃহকর্মী।
Advertisement
ক্রমবর্ধমান দামের প্রতিক্রিয়ায় সরবরাহ বাড়ানোর অক্ষমতা পাম তেলকে রেকর্ড উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার মূল কারণ। শীর্ষ উৎপাদক ইন্দোনেশিয়ার উৎপাদন বৃদ্ধিও মন্থর। এটি বিশ্বব্যাপী খাদ্য মূল্যস্ফীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ দুটি দেশই বিশ্ব সরবরাহের ৮০ শতাংশের বেশি এবং খাদ্য থেকে শুরু করে ডিটারজেন্ট এবং জ্বালানি পর্যন্ত ভোজ্য তেলের ব্যবহার প্রসারিত হচ্ছে।
বাজারে আসা পাম তেলের পরিমাণ কমবেশি স্থির এবং খুব বেশি বাড়বে না, বলেছেন, পরামর্শক সংস্থা এলএমসি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রধান, জুলিয়ান কনওয়ে ম্যাকগিল। কিন্তু বিশ্বে খাদ্যের জন্য আরও উদ্ভিজ তেলের প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের সেই ফলন বাড়াতে হবে।
কিন্তু এই খাতের সঙ্গে যারা জড়িত তারা এ প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা মনে করছেন পামওয়েল খাতে যে কষ্টকর কাজ তা অনেকটা নোংরা ও বিপজ্জনক। ফলে মালয়েশিয়ানরা এসব কাজ করতে চায় না। কারণ, তারা একে খুব কঠিন কাজ বলে মনে করেন।
মালয়েশিয়ার এস্টেটে ফসল কাটার কাজগুলো বেশিরভাগই বিদেশি শ্রমিকদের দ্বারা নেওয়া হয় যা শ্রমশক্তির প্রায় ৮৫ শতাংশ। ম্যাকগিল বলছিলেন, মালয়েশিয়ায় বৃক্ষরোপণের কাজের ক্ষেত্রে একটি চিত্র সমস্যা রয়েছে। স্থানীয়রা এটি করতে চায় না কারণ তারা এটিকে অবমাননাকর মনে করে।
মহামারি সময়ে সরকার নতুন বিদেশি কর্মীদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে অভিবাসী নিয়োগের উপর স্থগিতাদেশ বাড়ালে শ্রমিকের ঘাটতি আরও খারাপ হয়। টাটকা-ফলের গুচ্ছ ফলন গত বছর তিন দশকের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে এসেছে, যা ২০১৬ সালের পর থেকে পাম তেলের উৎপাদনকে ঠেলে দিয়েছে সর্বনিম্ন।
মালয়েশিয়ান পাম অয়েল অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নির্বাহী নাগিব ওয়াহাব বলেন, মহামারি আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে, এলাকা অনুসারে ৪০ শতাংশ বাগানে ‘গত দুই বছর ধরে কেনো কর্মী নেই।’ পর্যাপ্ত শ্রমিক না থাকায়, রোপণকারীরা ফসল কাটার রাউন্ড কমাতে এবং পাকা ফল গাছে পচে গেছে। প্ল্যান্টেশন কোম্পানিগুলো সম্ভাব্য রাজস্বের একটি বড় অংশ হারিয়েছে।
মালয়েশিয়ার প্ল্যান্টেশন ইন্ডাস্ট্রিজ এবং কমোডিটি মিনিস্ট্রি গত বছর প্রায় ৩.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতির আনুমানিক অনুমান করেছে এবং বলেছে, আগস্ট পর্যন্ত ফসল কাটার এবং ফল বাছাইকারীদের ঘাটতি ২৫,০০০-এর বেশি।
এদিকে ১৪.৩ মিলিয়ন ইউএস ডলারের বিপরিতে ৬০ মিলিয়ন রিঙ্গিত কনসোর্টিয়াম, প্রাথমিক তহবিল বরাদ্দ করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনসহ বিশ্বের কাছে নেট আউট করে দিচ্ছে, প্রযুক্তি বিকাশে যা পরবর্তীতে বৃক্ষরোপণে বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর হবে পাঁচ বছর।
এমআরএম/জেআইএম