‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ অবলম্বনে নির্মিত ‘একটি দেশের জন্য গান’ বা ‘সংস ফর এ কান্ট্রি’ প্রামাণ্যচিত্রটিকে সর্বসাধারণের মাঝে প্রদর্শনের জন্য অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ফিল্ম সেন্সর বোর্ড। লেখক ও সাংবাদিক শামীম আল আমিন প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করেছেন।
Advertisement
গত ১৭ জানুয়ারি সেন্সরবোর্ডের সনদপত্র পায় ‘একটি দেশের জন্য গান’। দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তিতে প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মিত হয়েছে ‘ফ্রেন্ডস অব ফ্রিডম’ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে।
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক এবং ফ্লোরিডায় প্রামাণ্যচিত্রটির চারটি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি প্রদর্শনীতে দর্শকের বিপুল ভালোবাসা পেয়েছে ‘একটি দেশের জন্য গান’।
এ বিষয়ে নির্মাতা শামীম আল আমিন জানিয়েছেন, এবার বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি স্টেট ও অন্যান্য কয়েকটি দেশেও প্রামাণ্যচিত্রটির প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে।
Advertisement
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ থেকে অংশ-বিশেষ রয়েছে প্রামাণ্যচিত্রে। বর্তমান সময়ের নিউইয়র্ক, ৫০ বছর আগের নিউইয়র্ক এবং কনসার্টের ফুটেজ ব্যবহার করা হয়েছে এতে।
এছাড়া মহান মুক্তিযুদ্ধের ভিডিওচিত্র, পাক-বাহিনীর চালানো ভয়াবহতম হত্যা নির্যাতন, প্রতিরোধ যুদ্ধ এবং শরণার্থী মানুষদের দুর্দশার চিত্র উঠে এসেছে। চমৎকার গ্রাফিক্স ও মিউজিক ব্যবহার করে নির্মাণ করা হয়েছে ‘একটি দেশের জন্য গান’।
কনসার্টের প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্ট অনেকের সাক্ষাৎকার আছে এতে। তাদের জবানীতে উঠে এসেছে সেই সময়ের চিত্র। প্রামাণ্যচিত্রটিতে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, খ্যাতিমান মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা লিয়ার লেভিন, কনসার্টে অংশ নেয়া ওস্তাদ আলী আকবর খানের বড় ছেলে ওস্তাদ আশীষ খান, খ্যাতিমান লেখক জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, আমেরিকান প্রফেসর জেমস অকুয়েন, কনসার্টের প্রত্যক্ষদর্শী অভীক দাশগুপ্ত, কাজি সাহিদ হাসান এবং লিন্ডা এন্তোনুচি।
তাছাড়া আগে ধারণকৃত কনসার্টের দুই উদ্যোক্তা জর্জ হ্যারিসন এবং পণ্ডিত রবিশঙ্করের সাক্ষাৎকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ দেখা যাবে এই প্রামাণ্যচিত্রে। রয়েছে কনসার্টের বিভিন্ন দৃশ্য, গান, ইতিহাস ও প্রতিক্রিয়ার চমৎকার বয়ান।
Advertisement
প্রামাণ্যচিত্রটির পরিচালনা ছাড়াও গবেষণা ও স্ক্রিপ্ট শামীম আল আমিনের। অনেকক্ষেত্রে ক্যামেরার পেছনেও তাকে কাজ করতে হয়েছে। এই প্রামাণ্যচিত্রের অন্যতম আকর্ষণ বাংলাদেশের কিংবদন্তিতুল্য অভিনেতা ও রাজনীতিবিদ আসাদুজ্জামান নূর। ৩৮ মিনিটি দৈর্ঘ্যের এই প্রামাণ্যচিত্রে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি।
প্রামাণ্যচিত্রের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর কবি ও ইয়োগা আর্টিস্ট আশরাফুন নাহার লিউজা। পোস্টার ও টাইটেল অ্যানিমেশন করেছেন শিল্পী মামুন হোসাইন। সাবটাইটেল লিখেছেন সিলেট হযরত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এম শফিকুল ইসলাম। ক্যামেরায় অন্যান্যের মধ্যে কাজ করেছেন নূর হোসেন জুয়েল এবং কায়েস খন্দকার। সম্পাদনার কাজটি করেছেন তানজির ইসলাম রানা।
নির্মাতা শামীম আল আমিন বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক বিদেশি বন্ধু বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বাংলাদেশ সরকার তাদের সম্মাননা জানিয়েছে। এ নিয়ে আরও কাজ করার রয়েছে। ভবিষ্যত প্রজন্ম হয়তো এই প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমে বিদেশি বন্ধুদের অসামান্য একটি উদ্যোগের কিছুটা হলেও জানতে পারবে। বাংলায় নির্মিত হলেও এতে থাকছে ইংরেজি ও বাংলা সাবটাইটেল। তাতে করে পুরো বিষয়টি বুঝতে কারোই অসুবিধা হবে না।
শামীম আল আমিন বলেন, ৫০ বছর আগের এক রোববারে নিউইয়র্কে প্রচণ্ড বর্ষণ হয়েছিল। এ যেনো ভালোবাসার বৃষ্টি হয়েই নেমে এসেছিল একটি দেশের মানুষের প্রতি। একদিকে মানবতা। অন্যদিকে বিশ্ব সঙ্গীতের মহাআয়োজন। ভারতীয় উপমহাদেশের কিংবদন্তি সরোদ শিল্পী পণ্ডিত রবিশঙ্করের অনুরোধে যার আয়োজন করেছিলেন বৃটিশ সঙ্গীত তারকা জর্জ হ্যারিসন। নাম দেওয়া হয়েছিল ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’।
প্রামাণ্যচিত্রটিতে ব্যবহৃত তথ্য, উপাত্ত ও ফুটেজের জন্য বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং ইংল্যান্ডের অ্যাপল ফিল্মস কর্তৃপক্ষের কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন নির্মাতা শামীম আল আমিন।
ঐতিহাসিক সেই কনসার্টটি নিয়ে অনেকদিন ধরেই গবেষণা করছেন তিনি। ২০২১ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অন্যপ্রকাশ থেকে এ নিয়ে তার একটি বইও প্রকাশিত হয়েছে। যার না ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’। বইটি এরই মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
এমআরএম/এএসএম