বাচ্চা হাতিটির বয়স চার বছর। নাম টাইগার। এই বয়সে তার মায়ের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানোর কথা। অথচ তার চার পা মোটা দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে খুঁটির সঙ্গে। পোষ মানাতে প্রাণীটি এভাবে বেঁধে রাখা হয়েছে। প্রশিক্ষকরা বলছেন, যতদিন না পোষ মানছে ততদিন তাকে এভাবেই রাখা হবে। অন্তত তিন মাস বেঁধে রাখা হবে। তাদের আশা, এর আগেই পোষ মানবে শাবকটি।
Advertisement
তবে পশুপ্রেমীরা বলছেন, প্রশিক্ষণের নাম প্রাণীটি এভাবে বেঁধে রাখা অমানবিক। তারা হাতিটির পায়ের বাঁধন খুলে দিতে বলেছেন। সেই সঙ্গে পোষ মানানোর সনাতন এ পদ্ধতির পরিবর্তনও চান তারা।
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার লাটিটিলা এলাকার কুচাইতল গ্রামে বাচ্চা হাতিটি পোষ মানানোর চেষ্টা চলছে। স্থানীয় ভাষায় এ প্রশিক্ষণকে বলা হয় ‘হাতি হাদানি’। পোষ না মানা পর্যন্ত কমপক্ষে তিন মাস এভাবেই চার পা দড়ি দিয়ে বেঁধে খুঁটিতে টানা দিয়ে রাখা হবে।
সোমবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুর থেকে সাত সদস্যের একটি দল এ প্রশিক্ষণ কাজ শুরু করে। প্রশিক্ষণের সময় শারীরিক কসরত, গাছ টানানোসহ মানুষের সঙ্গে সখ্য গড়তে দেওয়া হবে নানান তালিম। তবে এই প্রশিক্ষণ পদ্ধতি সহজ নয়। হাতি শাবকের জন্য কঠিন ও কষ্টদায়ক।
Advertisement
স্থানীয়রা বলছেন, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসেছিলেন। তারা অমানবিক এ প্রশিক্ষণ পদ্ধতি বন্ধ করার কথা বলে গেছেন। তবে বুধবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত থামেনি অমানবিক ওই নির্যাতন।
প্রশিক্ষক আকবর আলী বলেন, ‘বাপ-দাদার আমল থেকে এ পদ্ধতিতে হাতি বশে আনার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ১০-১২ বছর ধরে আমি এ কাজ করে আসছি। এ পদ্ধতি ছাড়া হাতি পোষ মানে না।’
তবে এ ধরনের প্রশিক্ষণ হাতিশাবকের প্রতি অমানবিক ও দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন পশুপ্রেমী মিলটন আহমদ। তিনি বলেন, নিষ্ঠুর এ প্রশিক্ষণ পদ্ধতি পরিবর্তন হওয়া উচিত।
জুড়ী বন বিভাগের ফরেস্টার মো. আলাউদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘হাতিটি ব্যক্তি মালিকানাধীন। আমাদের কিছু করার নেই। তবে হাতিশাবকটির সঙ্গে এ ধরনের আচরণ দুঃখজনক।’ এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘হাতির মালিকরা লাইসেন্স নিয়েই হাতি পোষেন। তারা হাতি বশে আনার জন্য প্রশিক্ষণ দিতে পারেন। তবে নির্যাতনের বিষয়টি দুঃখজনক।’
Advertisement
তিনি বলেন, বিষয়টি জেনে হাতিশাবকের পায়ের বাঁধন খুলে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। আমরাও যোগাযোগ রাখছি। যদি তারা বাঁধন খুলে না দেয় তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আব্দুল আজিজ/এসআর/এমএস