বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২০ জনের মধ্যে ১৭ জনের খালাস চেয়ে করা জেল আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন হাইকোর্ট। আপিল বিষয়ে ডেথ রেফারেন্সের সঙ্গে একসঙ্গে শুনানি হবে বলে আদেশ দিয়েছেন আদালত। বিষয়টি রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম মাসুদ রুমি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন।
Advertisement
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) জেল আপিল আবেদনের গ্রহণযোগ্যতার (অ্যাডমিশন) বিষয়ে শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম মাসুদ রুমি।
তিনি বলেন, যেহেতু আসামিরা জেল আপিল করেছেন, তাই আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। আজ আসামিদের করা জেল আপিলের বিষয়ে শুনানি হয়েছে। আদালত বলেছেন, ডেথ রেফারেন্সের সঙ্গে এই জেল আপিল শুনানি হবে।
এর আগে গত ৬ জানুয়ারি এই মামলার ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে এসে পৌঁছায়। ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে বিচারিক আদালতের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য উচ্চ আদালতে পাঠাতে হয়। এছাড়া দণ্ডিত আসামিরা ফৌজদারি আপিল এবং জেল আপিল করতে পারেন। হাইকোর্টের রায়ের পর সংক্ষুব্ধরা আপিল বিভাগে আবেদন করার সুযোগও পান। এরপর আইনি প্রক্রিয়ার শেষ ধাপ হিসেবে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করতে পারেন সংক্ষুব্ধরা।
Advertisement
গত ১৯ জানুয়ারি বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি এস এম মাহমুদ সেতুর খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল আবেদন করা হয়েছিল। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আসামি সেতুর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ এম জামিউল হক ফয়সাল ও ব্যারিস্টার শারমিন আক্তার শিউলী এ আপিল দায়ের করেন। এরপর হত্যা মামলায় বিচারিক (নিম্ন) আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২০ জনের মধ্যে ১৭ জন জেল আপিল করেন।
আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত ৮ ডিসেম্বর ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। এরপর ওই রায়ের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। তবে যাবজ্জীবন দণ্ডিতরা আপিল করেছেন কি না, সে বিষয়টি জানা যায়নি।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পরদিন ৭ অক্টোবর ১৯ জনকে আসামি করে রাজধানীর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের বাবা বরকত উল্লাহ।
মামলাটি তদন্ত করে পুলিশ বুয়েটের ২৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। তা আমলে নিয়ে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। আসামিরা সবাই বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেতাকর্মী। এরপর দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে গত ৮ ডিসেম্বর রায় দেন বিচারিক আদালত।
Advertisement
রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কারাবন্দি ১৭ আসামি হলেন- মেহেদী হাসান রাসেল (২৪), মো. অনিক সরকার ওরফে অপু (২২), মেহেদী হাসান রবিন ওরফে শান্ত (২৩), ইফতি মোশাররফ সকাল (২০), মো. মনিরুজ্জামান মনির (২১), মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (২৩), মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ (২০), মো. মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ (২১), খন্দকার তাবাকারুল ইসলাম ওরফে তানভির (২১), হোসেন মোহাম্মদ তোহা (২১), মো. শামীম বিল্লাহ (২১), মো. সাদাত এ এস এম নাজমুস সাদাত (২১), মুনতাসির আল জেমী (২০), মো. মিজানুর রহমান মিজান (২২), এস এম মাহমুদ সেতু (২৪), সামসুল আরেফিন রাফাত (২১), মো. মোর্শেদ ওরফে মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম (২০) জেল আপিল করেছেন।
একই সাজাপ্রাপ্ত পলাতক ৩ আসামি হলেন- এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম (২০), মোহাম্মদ মোর্শেদ উজ্জামান মণ্ডল প্রকাশ জিসান (২২) ও মুজতবা রাফিদ (২১)।
এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- অমিত সাহা (২১), ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না (২১), মো. আকাশ হোসেন (২১), মুহতাসিম ফুয়াদ (২৩) ও মো. মোয়াজ ওরফে মোয়াজ আবু হোরায়রা (২১)।
এফএইচ/এমআরআর/এমকেআর/এমএস