মতামত

ভিসির গদি ডিসির যদি

এন্তার আবদার ও প্রস্তাবনায় শেষ হয়েছে ডিসি সম্মেলন। জাতিসংঘে শান্তিমিশনে যাওয়া, ক্ষুদ্রঋণের খবরদারিসহ বিশাল চাহিদাপত্র জেলা প্রশাসকদের। ডিসিদের মতো সম্মেলন হয় না বলে ভিসিদের চাহিদার আনুষ্ঠানিক জানান দেওয়ার পর্বটা নেই। তবে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পক্ষ নিয়ে ৩৪-৩৫ ভিসির ক্রিয়াকাণ্ডে এর কিছুটা রেশ পড়েছে। বাকিটা ভবিষ্যৎ।

Advertisement

ভাইস চ্যান্সেলর-ভিসি পদটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নির্বাহী। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী সবার অভিভাবক তারা। দেশের বাদবাকি সবার জন্যও যারপরনাই মান্যজন। ‘স্যার’ সম্বোধনের তেজে তাদের বাপের দেওয়া নামও তলিয়ে যায়। এর বিপরীতে নিয়মিত এবং অবিরাম শুনতে হচ্ছে তাদের একেকজনের নিম্নমানের যতো দুর্নীতি, অনিয়ম ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের খবর। আজ একজন তো কাল আরেকজন। গত ক’দিন এ তালিকায় ফর্মে আছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।

শাহজালালে তিনি আলোচ্য ছিলেন না। সবজেক্ট-অবজেক্ট কোনোটাই নন। খেয়ে-দেয়ে অনেকটা আনডিস্টার্বেই ছিলেন। মাঝে মধ্যে কিছু ঘটনা ঘটলেও অন্য ঘটনায় তা চাপা পড়ে যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চামেচুমে থাকার আর সুযোগ থাকেনি। সেখানে হল প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনার সূত্র ধরে নিম্নমানের কিছু কথা-কাজের খেসারতে দৃষ্টি চলে যায় তার দিকে। তার পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। তাদের চাপা ক্ষোভটির প্রকাশ ঘটে আরও কিছু কারণে। স্বেচ্ছাচারিতা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ, বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিশেষ লোকদের নিয়োগে প্রাধান্য, উন্নয়ন প্রকল্পে নয়-ছয়সহ অভিযোগগুলো সামনে চলে আসে।

এর আগে এ মিছিলে পড়তে হয়েছে আরও কয়েকজন ভিসিকে। নাকানি-চুবানি খেয়ে বিতাড়িত হয়েছেন। অথবা লাজশরমের মাথা খেয়ে মেয়াদ শেষ করে আসার বিকৃত গর্ব করছেন। গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-বশেমুরবিপ্রবি থেকে ধাওয়া খেয়ে বিদায় নিতে হয়েছে ভিসি অধ্যাপক ড. খন্দকার নাসিরউদ্দিনকে। নিয়োগে-ভর্তিতে দুর্নীতিই নয়, নারী কেলেঙ্কারিসহ আরও নানা অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে।

Advertisement

রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়-বেরোবি থেকে সরে আসতে হয়েছে প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে। অভিযোগ ও কাণ্ডকীর্তি প্রায় একই। তবে একটু ভিন্নতা হচ্ছে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে ইন্ধন দেওেয়ার অভিযোগ ছোঁড়া। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-রাবির সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এম আব্দুস সোবহানও কম যাননি।

শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালার পরিবর্তন করে নিজ মেয়ে ও জামাতাকে নিয়োগ, রাষ্ট্রপতিকে অসত্য তথ্য দিয়ে অবসরগ্রহণ, বিভিন্ন নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতিসহ বিস্তর অভিযোগ মাথায় নিয়ে বিদায় নিতে হয় তাকে। ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে হেনস্তা হওয়া বাড়তি প্রাপ্তি। উন্নয়ন প্রকল্পে ছাত্রলীগকে দুই কোটি টাকা দেওয়াসহ নানান অভিযোগ মাথায় নিয়েও দ্বিতীয় মেয়াদে স্বপদে বহাল আছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়- জাবির ভিসি অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম।

‘চিরকুটের মাধ্যমে’ ভর্তিসহ বেশকিছু অভিযোগ নিয়ে বহাল আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-ঢাবির ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামানও। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়-জবির ভিসি থাকা অবস্থায় ড. মীজানুর রহমানও কম দেখাননি। তবে, ধাওয়া খেতে হয়নি তাকে। ছাত্রলীগের পক্ষ নিয়ে নানা বিতর্কিত মন্তব্য, যুবলীগের চেয়ারম্যান হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশসহ নানা কারণে বিতর্কিত হয়েও দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন শেষে বিদায় নিয়েছেন তিনি।

গত বছর কয়েকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়-চবির ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী,বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়-ববির ড. এসএম ইমামুল হক, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-নোবিপ্রবির ড. এম অহিদুজ্জামান চানরা দেখিয়ে দিয়েছেন ভিসি কাকে বলে! কতো ক্ষমতা-হিম্মত-হেকমত তাদের!

Advertisement

ভিসিদের তুলনায় ডিসিদের প্রভাব-ক্ষমতা-দাপট বরাবরই বেশি। এর জানান তারা মাঝে মধ্যেই দিচ্ছেন। নিজস্ব মোজ-ফুর্তির জন্য সরোবর তৈরি, পাশের রুমে খাটপাতাসহ বিভিন্ন কুকাণ্ডের কারণে ডিসি সুলতানা, আহমেদ কবীর, মাহমুদুল আলমরা হট কেক আলোচনায় এসেছেন। ক’দিন এ নিয়ে হইচই এরপর তাদের তেমন কিছু হয় না।

ভিসিরা কেন গদি বা ক্ষমতার সেই কাতারে যাবেন? শ্রুতিতে-উচ্চারণে ডিসি-ভিসি কাছাকাছি মনে হলেও মোটেই তা নন। ভিসি বা উপাচার্য বলতেই মানসপটে ভেসে ওঠে জ্ঞানতাপস, শান্ত, সৌম্য এক বিচক্ষণ ও বিজ্ঞ ব্যক্তির অবয়ব। সেখানে কেন আজ এতো খরা?

লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন।

এইচআর/জেআইএম