সাহিত্য

সুকান্ত পার্থিবের একগুচ্ছ কবিতা

শতাব্দীর আর্তনাদবুকভাঙা চিৎকার আর্তনাদের প্রতিধ্বনিহয়ে অতীতের মতই ফিরে আসে পামির প্রাচীরে!পৌঁছায় না তা সেই আকাঙ্ক্ষিত শ্রবণানুভূতির জাগরণে কর্ণকুহরে।স্বপ্নরা অকাতরে ঝরে পড়ে দুঃস্বপ্নের মোড়কেপ্রকাণ্ড হিমালয়ের পাদদেশে খণ্ড খণ্ড বরফে!কৈলাসের কোলে কুয়াশার আবরণ ভেদ করে জীর্ণ-শীর্ণঅপরাজিতার বুকে স্পর্শ করতে ব্যর্থ দ্ব্যর্থ আহ্বানেরমহাবিশ্বের আলোকপিণ্ডের তেজোরশ্মি!সালোকসংশ্লেষণের অভাবে তুষারঝটিকায়নিমিষেই চূড়া বেয়ে মাটিরগহ্বরে নিক্ষিপ্ত নীলকণ্ঠের অর্ঘ্য অপ্রস্ফুটিত অপরাজিতা!শতাব্দীর দীর্ঘশ্বাসের দুঃখ-যন্ত্রণা-অপ্রাপ্তিঅবিশ্রান্ত বিবর্ণ রাত্রি জুড়ে আস্ফালন ঘটায় পর্বতশৃঙ্গের পাদদেশে!যেখান থেকে গন্তব্যের ঐ চূড়ায় অজস্র মানুষেরলালিত আকাঙ্ক্ষার প্রার্থনা পারে না পৌঁছাতেনিঃসঙ্গ সময়ে বিমূর্ত স্বরে গহীন অন্ধকারের আহাজারিতে!অগণিত বিদগ্ধ প্রাণের আর্তনাদে মায়াচ্ছন্ন স্বপ্নগুলোদুঃসহ যন্ত্রণার বাহুডোরে অশান্ত ধূলিঝড়েকিংবা ভূকম্পনে আছড়ে পড়ে পর্বতমালার ঝর্ণাধারায়!বিভেদের প্রশস্ত দেয়াল জুড়ে বৈষম্যের কাঁটাতার অর্ধবস্ত্র পরিধেয়জীর্ণ দেহের পরিক্লান্ত হৃদয় ফেটে রক্তময়বিভীষিকায় পর্যায়ক্রমে আবদ্ধ হতে থাকেবিত্ত-বৈভবের পার্থক্যের পরাধীনতার শেকল!নিষিদ্ধ সংলাপপ্রত্যেকটা বাক্য প্রতিটি শব্দ এখন নিষিদ্ধ সংলাপেসোনাইছড়ির পাথুরে ঝর্ণার ভাঙা ভাঙা অংশ!প্রতিটি উচ্চারণ এখন নিয়ন্ত্রণাধীন;সারা বিশ্বের আড়াইশ’ দেব-দেবীর হাতে!আণবিক অস্ত্রের সুসজ্জায় শাস্ত্রীয় ঈশ্বরআজ মহাশূন্য থেকে পৃথিবীর ভূখণ্ডেরঅতিমানবীয় রূপে ত্রাণকর্তা!তবুও গাঙশালিকের বেশেশ্যামল বাংলার প্রান্তরে নীরবেঅঘ্রাণ আসে হলদে ধানখেতেকৃষকের কপালের ভাঁজেভেসে যাওয়া মেঘমালায়। এখানে বসন্ত আসেমানবসত্তার লাল শোণিতের রঙে কৃষ্ণচূড়ায়;মাদারের ফুল কাঁটা হয়ে বিঁধে শ্রমিকের নিথর দেহে...!আর্তের সেবায় বিশ্ব মানবতাএখানে প্রকাশ পায় হাসপাতালে-কোলাহলে আত্মঘাতী হামলায়!সন্ত্রাস নির্মূলের শিরোনামে অনবরতশান্তির ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ হতে থাকেমুক্তাকাশে নিরীহের আবাস ধ্বংসে                       সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্রের বিশ্বরাষ্ট্রনীতি রক্ষায়।শুদ্ধ বাকস্বর    হে আফিমাসক্ত গণতান্ত্রিক অন্ধ রাষ্ট্র-বিষের পেয়ালা হাতে পর্দার আড়ালেদাঁড়িয়ে থেকো না আর তুমি! ঐভাবে ছদ্মবেশেদরজার আড়ালে ক্রীড়ানকের ভূমিকায়দাঁড়িয়ে থাকতে; জানি ধৈর্যচ্যুতি ঘটে তোমার!তাই; সহ্যের সীমা অতিক্রম হবার আগেইরৌদ্রদীপ্ত কিংবা বৃষ্টিস্নাত কিংবা শিশিরভেজা সকালেপরোক্ষ সমর্থন না দিয়ে প্রত্যক্ষভাবে জ্বলে ওঠো তুমি;মধ্যযুগীয় অনাদর্শে মানুষের বিবেকেরমুক্তির আন্দোলন থামাতে ইন্ধনদাতাসাম্রাজ্যবাদী শক্তির কায়দায়...।সোফার টেবিলে নিত্যদিন রক্তাক্ত খবরের পাতারসাথে চুমুক দেয়া চায়ের কাপে দ্বিধাহীনভাবেসুক্রোজ মিশিয়ে তোমার পেয়ালার সবটুকুবিষ অমৃত হিসেবে মুক্তমনাদেরগলায় অনায়াসে ঢেলে দাও তুমি...।প্রত্যাশিত প্রাপ্তিউচ্ছলিত প্রাণের পরশে তানপুরায় সকাল-সন্ধ্যায়ঝংকার তুলে বেজে ওঠে অব্যক্ত হৃদয়ের আত্মিক গান।শিশিরজলে সিক্ত কালো গোলাপের পাপড়িতেশৈল্পিক দৃষ্টি পায় মহাকাব্যিক ধ্বনিপুঞ্জ।পূবের আকাশে নতুন উদ্দীপনার সূর্যচোখ মেলে অনায়াসে। সেই বিস্মিত চাহনিরকিরণ হয়ে পৃথিবীর মৃত্তিকায় ফাগুনেরপাতার মর্মর শব্দে ঝরে পড়ে দীপ্ত আলোকরশ্মি।মানবিক দুঃখবোধ, হৃদয়ের অনর্থক আস্ফালনমিছিলের ভিড় ঠেলে প্রাপ্তির উল্লাসিত চেতনায়ঘটে জাগরণ। আঁধারের সিঁধ কেটেসিঁথির রক্তিম সিঁদুরে জোছনার গালিচায়রাতের তারার আবেশে জ্বলজ্বল হাসেবৃষ্টিস্নাত সাতরঙা রংধনুর নীলিমা।।এসইউ/পিআর

Advertisement