মতামত

লবিস্ট নিয়োগ এবং বিএনপির দেশবিরোধী অপতৎপরতা

১.গত কয়েকদিন ধরে বিএনপির লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। মোটা অংকের টাকা খরচ করে দেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে দলটি। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিএনপির ষড়যন্ত্র নতুন কিছু নয়। বিএনপি বরাবরই প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাসী। সরকারের সমালোচনা করতে গিয়ে বারংবার দেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে।

Advertisement

বিএনপি-জামায়াত লবিস্ট নিয়োগ করে দেশের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে তা তথ্য প্রমাণসহ জাতীয় সংসদে গত ১৭ জানুয়ারি তুলে ধরেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত বিদেশি লবিস্ট নিয়োগে আটটি চুক্তি করেছে। এর মধ্যে তিনটি চুক্তি করেছে বিএনপি। এই তিন চুক্তিতে বিএনপি ৩.৭৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। বিএনপি অফিসের ঠিকানাও চুক্তির কপিতে উল্লেখ করা হয়েছে। জামায়াতের চুক্তির কপিতে প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা দেওয়া নেই। তবে চুক্তির কপিতে তাদের নাম রয়েছে। এ ঘটনার শোনার পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে শোরগোল পড়ে যায়। ঘটনার সঠিক তদন্তের জোরালো দাবি উঠছে।

যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বৈধভাবে লবিস্ট নিয়োগে দেয়ার বিধান রয়েছে। রাষ্ট্রীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য অনেক দেশের সরকার কিংবা কোন প্রতিষ্ঠান লবিস্ট নিয়োগ দিয়ে থাকে। উন্নত দেশসমূহে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতেও লবিস্ট নিয়োগের প্রচলন রয়েছে। বাংলাদেশেরও অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের বাণিজ্যের প্রয়োজনে লবিস্ট নিয়োগ দেন। তবে রাজনৈতিক ভাবে সরকার বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লবিস্ট নিয়োগের প্রচলন কোনো দেশেই খুঁজে পাওয়া যাবে না।ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। এখানে দেশের ভাবমূর্তি বিদেশে নষ্ট করতে বিএনপি-জামায়াতের মত দেশদ্রোহী দল গুলো শুধু নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লবিস্ট নিয়োগ দেয়। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের লবিস্ট নিয়োগ ও

দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার এটাই প্রথম ঘটনা নয়। ২০১৩ সালের ৩০ জানুয়ারি লন্ডনভিত্তিক মার্ক পার্সি নামক একজন এজেন্টের মাধ্যমে ওয়াশিংটন টাইমসে একটি নিবন্ধ লিখেন বেগম খালেদা জিয়া। ‘দ্য থ্যাংকসলেস রোল ইন সেভিং ডেমোক্রেসি ইন বাংলাদেশ' শিরোনামের নিবন্ধে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রদের বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বাতিলের অনুরোধ করেন। নিবন্ধে তিনি এ বিষয় লিখেন, ‘তাদের (যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের)অবশ্যই শেখ হাসিনাকে বোঝাতে হবে যে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বাতিল করা হবে যদি তার রাজনৈতিক মতাদর্শের বিরোধী ও শ্রমিক অধিকার নিয়ে সচেষ্ট ব্যক্তিদের মতামত প্রকাশের সুযোগ দেয়া না হয়। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে জিএসপি সুবিধা বাতিলের পেছনে বিএনপি নেত্রীর প্রত্যক্ষ ষড়যন্ত্র ছিল,তা খালেদা জিয়ার লেখাতেই সুস্পষ্ট ভাবে উঠে এসেছে।

Advertisement

২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে বিএনপি তাদের লবিস্ট ফার্ম ব্লু-স্টার স্ট্র্যাটেজিসের মাধ্যমে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান বন্ধ করতে তদবির করেছিল। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল মার্কিন সিনেট কমিটি, সাব-কমিটি ও হাউজ কমিটির চেয়ারম্যানসহ পাঁচজনকে বাংলাদেশকে দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ও অনুদান বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেয় বিএনপি। এর আগে ১৬ জানুয়ারি বিএনপির নিয়োগ করা লবিস্ট ফার্ম ব্লু-স্টার স্ট্র্যাটেজিস যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক দুইটি অধিদপ্তরকে চিঠি দেয়। এবং চিঠিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওয়াশিংটন সফরের সময় মন্ত্রীকে নির্বাচন নিয়ে জবাবদিহি ও যুক্তরাষ্ট্রের অসন্তোষ জানাতে তদবির করা হয়।

২.২০০৪ সালে বিএনপি সরকারের সময়ে বাংলাদেশ পুলিশের অধীনে র্যাব নামে একটি এলিট ফোর্স তৈরি করা হয়। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী (সেনা,নৌ,বিমান) ও পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত হয় র্যাব। বর্তমানে ঢাকার উত্তরার র্যাব সদর দপ্তর থেকে ১৫টি ব্যাটালিয়ানের মাধ্যমে সারা দেশে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। মূলত দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমন এবং আইনশৃঙ্খলার মানোন্নয়নে গঠন করা হয়েছিল র্যাব। গঠনের পর র্যাবের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই র্যাব কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। অস্ত্র সরবরাহ ও প্রযুক্তিগত সহায়তাও দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বেশ কয়েকটি আলোচিত হত্যাকাণ্ড তদন্তের জন্য র্যাব যুক্তরাষ্ট্রে গোয়েন্দা সংস্থারও সহযোগিতা নিয়েছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনেও র্যাবের সাফল্য আন্তর্জাতিক বিশ্বেও প্রশংসিত। র্যাব দেশের উপকূলীয় এলাকায়, বিশেষ করে সুন্দরবনে বনদস্যু দমন করে প্রশংসিত হয়েছে। ইয়াবাসহ সব ধরনের মাদক প্রতিরোধে র্যাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

র্যাবের কার্যক্রমকে বিতর্কিত করতে এবং বাংলাদেশের জঙ্গী ও সন্ত্রাস বিরোধী কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে দেশি-বিদেশী একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। গত ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে র্যাব এর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট (রাজস্ব বিভাগ) ও পররাষ্ট্র দপ্তর। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ১০টি প্রতিষ্ঠান ও ১৫ জন ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে অভিযোগ করা হয়, এই সব ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠান যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নিপীড়নের সঙ্গে জড়িত। এর আগে গত বছরের ৮ নভেম্বর হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সহ ১২ টি সংগঠন মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন থেকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) বাদ দিতে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যাঁ পিয়েরে ল্যাকরোইক্সকে গোপনে চিঠি দেয়। প্রায় আড়াই মাস পর ২০ জানুয়ারি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) ওয়েবসাইটে চিঠিটির কথা প্রকাশ করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কঠোর প্রতিবাদ করে বাংলাদেশ। যার কারণে নিষেধাজ্ঞার এক সপ্তাহের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পররাষ্ট্র দপ্তর নতুন আরেকটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশে সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে র্যাবের ভূমিকাকে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরা হয়। এবং বলা হয়, র্যাবের ভূমিকায় বাংলাদেশে সন্ত্রাস কমেছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে,২০২০ সালে বাংলাদেশে সন্ত্রাস সংশ্লিষ্ট ঘটনার তদন্ত ও গ্রেপ্তার বেড়েছে, কমেছে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। একদিকে বাহিনী হিসেবে র্যাবের কাজের প্রশংসা করা হয়েছে। অন্যদিকে আবার বাহিনীর শীর্ষ ব্যক্তিদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এই দ্বি-চারিতা সিন্ধান্তে স্পষ্ট এর পিছনে গভীর ষড়ডন্ত্র রয়েছে। ঘটনার কার্যক্রম গুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, একটি শক্তিশালী গ্রুপ মিথ্যা ও বিভ্রান্তমূলক দিয়ে তথ্য বাংলাদেশকে হেয় করার জন্য র্যাব কর্মকর্তাদের বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। র্যাবের অনেক ভালো কাজের মধ্যে দু-একটি বিচ্যুতি যে হয়নি সেটা বলা যাবেনা। তবে তার জন্য গোটা বাহিনীকে দোষারোপ করা যায় না। যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে তাদের দেশের প্রচলিত আইনেই বিচার করা হয়েছে। কাউকে কোন প্রকার ছাড় দেয়া হয়নি।

Advertisement

বিএনপি জন্মলগ্ন থেকেই ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে আসছে। হত্যা,ক্যু আর ষড়যন্ত্র তাদের রাজনৈতিক শক্তি। ষড়যন্ত্রের রাজনীতি আগে দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও বেশ কয়েক বছর ধরে দেশের বাইরেও ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তৃত করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পুত্র জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়কে হত্যা করার উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি নেতারা এফবিআই এজেন্ট ভাড়া করেছিল। পরিকল্পনা ফাঁস হলে সেই এজেন্টকে যুক্তরাষ্ট্রে জিজ্ঞাসাবাদ ও বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব আসলাম চৌধুরী সরকারকে উৎখাত করার লক্ষ্যে ইসরাইলের লিকুদ পার্টির সদস্য মেন্দি এন সাফাদির সাথে গোপন বৈঠকের ছবি বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হলে ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে যায়। এছাড়াও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে বাধাগ্রস্ত করতে একাধিক দেশে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করে বিএনপি-জামায়াত চক্র।

বিএনপি রাজনৈতিক ভাবে ব্যর্থ হয়ে ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে। আওয়ামী লীগ কিংবা সরকারকে ক্ষতি করতে গিয়ে প্রকারান্তরে বাংলাদেশকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে। লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন,সমৃদ্ধির পথকে বাধাগ্রস্ত করারই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। বিএনপির ক্রমাগত নেতিবাচক রাজনীতির কারণেই দিন দিন তারা জনগণের কাছ থেকে আরো দূরে সরে যাচ্ছে।

লেখক: সদস্য,সম্প্রীতি বাংলাদেশ ও সাবেক ছাত্রনেতা।haldertapas80@gmail.com

এইচআর/এমএস