স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও স্বীকৃতি পাননি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন। দেশের জন্য যে যোদ্ধা নিজের জীবনকে বাজি রেখেছিলেন তার এখন ঠাঁই মিলেছে ঢাকার মিরপুরের বস্তিতে। ছেলে-মেয়েদের গার্মেন্টেসের আয়ের অর্থ দিয়ে কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে বৃদ্ধ আমির হোসেনের।বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার খুড়িয়াখালী গ্রামের আদম আলী হাওলাদারের ছেলে আমির হোসেন ৭১ সালের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ৯নং সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) জিয়া উদ্দিনের প্রত্যায়নপত্র নিয়ে প্রায় ১৫ বছর ঘুরেও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় স্বীকৃতি মেলেনি তার নাম। বাম পায়ে ঘাতকের বুলেটের আঘাত নিয়ে ৪৫ বছর পরও জীবদ্দশায় তিনি স্বীকৃতি পেতে চান।যুদ্ধাহত আমির হোসেন বলেন, ‘১৯৭১ এ জীবন বাজি রেখে বাংলার স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনার জন্য যুদ্ধ করেছিলাম। সেই যুদ্ধে বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিতে হয়েছে। দরিদ্র পরিবারে জন্ম হওয়ায় ভালো চিকিৎসা নিতে পারিনি। আজও চলাফেরা করতে কষ্ট হয়। বয়স প্রায় ৮০-৮২, এখনও তালিকায় নাম লেখাতে পারিনি। অনেকের কাছে ধর্না ধরেছি। কোনো কাজে আসে না। মনে হয় মৃত্যুর পর নাম তালিকায় আসতে পারে।’তিনি আরও বলেন, অভাব অনটনের কারণে, ‘ঢাকা মিরপুরের উত্তর কালশিরা বস্তিতে বুড়া-বুড়ি কোনোমতে বেঁচে আছি। দেশ স্বাধীনের সঙ্গে শরীক হলেও চার মেয়ে তিন ছেলেকে ভালোভাবে মানুষ করতে পারিনি। তারা কী আয় করবে আর আমাকে কতদিন খাওয়াবে জানি না। সরকারের কাছে আমার শেষ চাওয়া যদি আমার নামটি তালিকায় আসে তাহলে হয়তো মাসে মাসে কিছু টাকা পেতাম।’যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেনের ছেলে হারুন বলেন, বৃদ্ধ বয়সে বাবার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে কি-না জানি না। তার স্বপ্ন যদি বাস্তবায়ন হয় তাহলে নিজেদের মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে এই বাংলায় গর্বের সঙ্গে পরিচয় দিতে পারবো।বৃদ্ধ বাবার মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতির জন্য নবম সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) জিয়া উদ্দিনের প্রত্যায়নপত্রসহ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডারের সুপারিশ নিয়ে বিভিন্ন দফতরে ১৯৯৬ সাল থেকে ঘুরেও কোনো ফল পাইনি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আকুতি, যাতে বাবার নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করে প্রাপ্য সম্মানটুকু দেয়া হয়।সৈকত বাবু/বিএ
Advertisement