উখিয়া উপজেলার প্রতিবাদী যুবক আব্দুল হামিদ। পেশায় সরকারি চাকরি। অভিজাত পরিবারের ছেলে হিসেবে চাকরির পাশাপাশি করেন ব্যবসা বাণিজ্যও। এলাকায় থাকেন বিধায় সামাজিক কর্মকাণ্ডেও নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। শিক্ষিত-সচেতন যুবা হিসেবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে ভোলেন না কখনো। এ কারণে নিজেকে জড়ান সাম্প্রতিক সময়ের বড় ব্যাধি উপকূল দিয়ে মানবপাচার প্রতিরোধে। গড়ে তেলেন উখিয়া উপজেলা মানবপাচার প্রতিরোধ কমিটি।সবার সম্মতিতে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হয়ে গত দুই বছরে মানবপাচারবরোধী সচেতনতামূলক অন্তত শ’খানেক সভা, সমাবেশ করেছেন তিনি। এসব বিষয় নিয়ে দেশীয় গণমাধ্যম ছাড়াও ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ এর মতো আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমেও স্থান পেয়েছে আব্দুল হামিদের কৃতিত্বের কথা।কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আব্দুল হামিদ আজ পুলিশের তালিকায় আসামি। গ্রেফতারের হুলিয়া মাথায় নিয়ে ঘরছাড়া হামিদ লোকালয়ে আসতেও ভয় পাচ্ছেন।উপকূলের শীর্ষ মানবপাচারকারী হিসেবে গণমাধ্যমে ফলাওভাবে প্রচার পাওয়া রেজিয়া আকতার ওরফে রেবি মেডাম তাকে (হামিদকে) মামলার আসামি বানিয়েছেন। তার মানবপাচারের বিরুদ্ধে জনসমর্থন তিরি করায় নিজ মেয়েকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে হামিদের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা করেছেন তিনি। জুড়িশিয়াল তদন্তে বাদীর সাক্ষ্যে রিপোর্ট পেশ করায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।অথচ মানবপাচারের একাধিক অভিযোগ থাকার পরও, বীরদর্পে রেবিরা ঘুরছে প্রকাশ্যে। এদেরসঙ্গে সখ্যতা রয়েছে অসাধু পুলিশ কর্তাদের। এ কারণে ‘রেবি মেডামরা’ এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন এবং মানবপাচারবিরোধী লোকজনকে প্রতিনিয়তই হুমকি ধমকি ও মামলার ভয় দেখাচ্ছেন।আব্দুল হামিদের নামে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদ ও প্রত্যাহার চেয়ে বুধবার বিকেলে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা তুলে ধরেছেন উপজেলা মানবপাচার প্রতিরোধ কমিটি। এতে লিখিত বক্তব্য পেশ করেন সংগঠনের সভাপতি ও বেসরকারি সংস্থা ‘হেল্প কক্সবাজার’র নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেম।তিনি বলেন, জেলায় শক্তিশালী মানবপাচারকারী চক্র তাদের করাল থাবায় দরিদ্র অসহায় ও বেকার যুবকদের গ্রাস করছে। জেলার উপকূলীয় এলাকা টেকনাফ, উখিয়, কক্সবাজার সদর, মহেশখালী ও রামু উপজেলার সমুদ্র উপকূল দিয়ে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষ মানবপাচার চক্রের প্রলোভনে পড়ে নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় মালয়েশিয়া যেতে গিয়ে বিপদগামী হচ্ছেন। মালয়েশিয়া নেয়ার পথে অনেক যুবককে হত্যা করে সাগরে নিক্ষেপ করা হয়েছে।তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার পার্শ্ববর্তী দেশ থাইলান্ডের গহীন অরণ্যে অনেককে আটক রেখে অভিভাবকদের কাছ হতে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বর্তমানে অনেকে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশের কারাগারে অথবা ক্যাম্পে বন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। অনেকে এখনো খবরহীন রয়েছে। তাদের পরিবার পরিজনের আহাজারি ও অবর্ণনীয় দুর্ভোগের কাহিনী এলাকার আকাশ ভারী করছে।কাশেম বলেন, জেলার বাইরের লোকজন আমাদেরকে পাচারকারী সংশ্লিষ্ট মনে করে ঘৃণা করতে শুরু করে। বদনাম ঘুচাতে সচেতন যুব সমাজ নিয়ে ভলান্টারি সার্ভিসেস হিসেবে মানবপাচার প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়। আমরা জেলার বিভিন্ন স্থানে মানবপাচারবিষয়ক ভয়াবহতা নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচরণা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের কর্মসূচিতে ব্যাপক জনসমর্থন সৃষ্টি হয়। ধীরে ধীরে জনসচেতনতা বৃদ্ধি পেতে থাকায় মানবপাচারকারীরা আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে।তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের ১৮ জুলাই মানবপাচার প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হামিদকে মোবাইল ফোনে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি প্রদানসহ অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে রেবি মেডাম। এ বিষয়ে পরদিন ১৯ জুলাই উখিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়।এরই মধ্যে ওই বছরের ২৩ জুলাই জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে হামিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হয়। যার-নং জিআর ৩৩৭/১৪। উখিয়া থানা মামলা নং-১৩, তাং-১৩.১১.১৪ইং। নারী ও শিশু মামলা নং-৯৬৪/১৫।তিনি বলেন, আবদুল হামিদকে দমাতে না পেরে আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের সদস্য রেবী মেডাম আপন মেয়ে শারমিন নুরী পাপিয়াকে শ্লিলতাহানির অভিযোগ এনে মিথ্যা মামলা করেন। মামলাটি ফৌজদারি বিধান কোষের ১৭৩ নং ধারামতে উখিয়া থানা পুলিশ মিথ্যা মামলা হিসাবে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রদান করে। তাতে বাদী পক্ষ নারাজি দিলে বিচার বিভাগীয় তদন্তের আদেশ হয়।এরপর উখিয়া কোর্টের জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুশান্ত প্রসাদ চাকমা একতরফা বাদিও সাক্ষ্যগ্রহণ করে মামলার সত্যতা আছে মর্মে প্রতিবেদন দিলে মামলা আমলে নিয়ে হামিদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা ইস্যু করেন আদালত।তিনি বলেন, মামলার কোনো প্রকার সত্যতা নেই। এই মামলার বাদীর মা রেজিয়া বেগম রেবী ও বাবা নুরুল কবির শীর্ষ মানবপাচারকারী হিসেবে প্রশাসনের কাছে চিহ্নিত। তাদের বিরুদ্ধে প্রায় ডজন খানেক মানবপাচার মামলা বর্তমানে বিদ্যমান।তাদের বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বহুল প্রচলিত দৈনিক ও অনলাইন পত্রিকায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিবেদনে তাদের শীর্ষ মানবপাচারকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ ছাড়াও রেজিয়া আক্তার রেবীর ছেলে রেজাউল কবিরকে দিয়ে হামিদের বিরুদ্ধে ১৯/১৪নং মামলা করা হয়। এ মামলায় আবদুল হামিদ জামিনে আছেন।সায়ীদ আলমগীর/বিএ
Advertisement