ধর্ম

কথা ও কাজের মিল যে কারণে খুবই জরুরি

কথা ও কাজের মিল খুবই জরুরি বিষয়। কাউকে নসিহত করে নিজে না মানলে এর শাস্তি হবে খুবই ভয়াবহ। এ সম্পর্কে কোরআনুল কারিমে রয়েছে যেমন সুস্পষ্ট সতর্কতা তেমনি হাদিসে পাকে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কঠিন শাস্তির কথাও তুলে ধরেছেন। আল্লাহ তাআলা এ সম্পর্কে কোরআনুল কারিমে ঘোষণা করেন-اَتَاۡمُرُوۡنَ النَّاسَ بِالۡبِرِّ وَ تَنۡسَوۡنَ اَنۡفُسَکُمۡ وَ اَنۡتُمۡ تَتۡلُوۡنَ الۡکِتٰبَ ؕ اَفَلَا تَعۡقِلُوۡنَ‘তোমরা কি মানুষকে ভাল কাজের আদেশ দিচ্ছ আর নিজদেরকে ভুলে যাচ্ছ? অথচ তোমরা কিতাব তেলাওয়াত কর। তোমরা কি বুঝ না?’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৪৪)

Advertisement

এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানুষকে সতর্ক করছেন যে, তোমরা শুধু অন্যকে ভালো কাজের উপদেশ দিয়ে থেকে থেকো না বরং তোমরাও ভালো কাজ করো। আয়াতটি নাজিল প্রসঙ্গে জানা যায়-মূলত ইয়াহুদি আলেমদের উদ্দেশ্য করে আয়াতটি নাজিল হয়। উম্মতে মুসলিমার জন্য আয়াতটিতে রয়েছে অনেক বড় শিক্ষা ও আমলের প্রশিক্ষণ। ইসলামের আগমনের পর ইয়াহুদি আলেমরা তাদের বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ করতে এবং ইসলামের উপর স্থির থাকতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু তারা নিজেরা কুপ্রবৃত্তির কামনা ও প্রভাবে ইসলামকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত ছিল না। এ আয়াতে তাদের ভৎসনা করেই নাজিল করা হয়েছে।

ভালো কাজের উপদেশ দিয়ে নিজেরা আমল না করার শাস্তি কী?হাদিসে পাকে এ শ্রেণির লোকদের ভয়াবহ শাস্তি ও করুণ পরিণতির কথা ওঠে এসেছে। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একাধিক হাদিসে এ সম্পর্কে ইরশাদ করেন-‘কিছুসংখ্যক জান্নাতবাসী অপর কিছুসংখ্যক জাহান্নামবাসীদের অগ্নিদগ্ধ হতে দেখে জিজ্ঞাসা করবেন যে, তোমরা কিভাবে জাহান্নামে প্রবেশ করলে? অথচ আল্লাহর কসম! আমরা তো সেসব সৎকাজের মাধ্যমেই জান্নাত পেয়ে ধন্য হয়েছি; যা তোমাদের কাছেই শিখেছিলাম? এবার জাহান্নামবাসীরা বলবে, আমরা মুখে অবশ্য বলতাম (উপদেশ দিতাম) কিন্তু নিজেরা তা কাজে পরিণত করতাম না।’ (বুখারি, মুসলিম)

হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মেরাজের রাতে আমি এমন কিছুসংখ্যক লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম, যাদের জিহ্বা ও ঠোঁট আগুনের কাঁচি দিয়ে কাটা হচ্ছিল। আমি জিবরিল আলাইহিস সালামকে জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কারা? জিবরিল আলাইহিস সালাম বললেন, এরা আপনার উম্মতের পার্থিব স্বার্থপূজার উপদেশদানকারী। যারা অন্যদের সৎকাজের নির্দেশ দিতো ঠিকই কিন্তু নিজের খবর রাখতো না।’ (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে হিব্বান)

Advertisement

আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে সে বিষয়টি সতর্কতাস্বরূপ এভাবে উল্লেখ করেছেন-اَتَاۡمُرُوۡنَ النَّاسَ بِالۡبِرِّ وَ تَنۡسَوۡنَ اَنۡفُسَکُمۡ وَ اَنۡتُمۡ تَتۡلُوۡنَ الۡکِتٰبَ ؕ اَفَلَا تَعۡقِلُوۡنَ‘তোমরা কি মানুষকে ভাল কাজের আদেশ দিচ্ছ আর নিজদেরকে ভুলে যাচ্ছ? অথচ তোমরা কিতাব তেলাওয়াত কর। তোমরা কি বুঝ না?’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৪৪)

অর্থাৎ তোমরা মানুষদের সৎ কাজের আদেশ দিয়ে থাক। অথচ আল্লাহ তাআলা তোমাদের কিতাব তাওরাতে শেষ নবি ও তাঁর প্রতি প্রেরিত গ্রন্থ কুরআনের উপর ঈমান আনার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন, সে নির্দেশ তোমরা পালন করছো না। এবং যে সত্য প্রকাশ করতে নির্দেশ দিয়েছেন তা মানুষের মাঝে প্রকাশ করছো না। তাই এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাদের প্রশ্ন করে বলেন, এই স্ববিরোধী নীতি যে কত বড় অন্যায়, তা কি তোমরা উপলব্দি কর না?

সুতরাং আয়াতের শিক্ষা হচ্ছে-শুধু অন্যকে ভালো কাজের উপদেশ দিলেই চলবে না বরং নিজেদেরও সে উপদেশ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করতে হবে। তবেই দুনিয়া ও পরকালের সফলতা সুনিশ্চিত হবে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে কথা ও কাজের মধ্যে যথাযথ মিল রেখে উপদেশ দেওয়ার পাশাপাশি উপদেশ মেনে জীবন গড়ার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও পরকালের সফলতা পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Advertisement

এমএমএস/এমএস