জান্নাত মুমিনের সর্বশেষ আবাসস্থল। মর্যাদা অনুযায়ী মুমিন ব্যক্তি জান্নাতের অধিকারী হবে।কিন্তু আল্লাহ তাআলা সব জান্নাতির জন্যই সমভাবে বিশেষ কিছু জিনিস প্রস্তুত করে রেখেছেন। যা সব জান্নাতি ব্যক্তিই পাবেন। আল্লাহ তাআলা মুমিনদের সবার জন্য জান্নাতের মধ্যে যা প্রস্তুত রেখেছেন; সে সব জিনিসগুলো কী?
Advertisement
মুমিন বান্দা জান্নাতের চিরস্থায়ী জীবনে সমভাবে ভোগ করবে। যা সবার জন্য সমান হবে। হাদিসে পাকে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ বিষয়গুলো সম্পর্কে এভাবে ঘোষণা দেন-
হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু ও আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জান্নাতিরা (সবাই) যখন জান্নাতে প্রবেশ করে যাবে; তখন একজন ঘোষণাকারী (সব জান্নাতিদের প্রাপ্তি সম্পর্কে) ঘোষণা করবে যে-
> ‘তোমাদের জন্য এখন অনন্ত জীবন; তোমরা আর কখনো মরবে না।’
Advertisement
> ‘তোমাদের জন্য এখন চির সুস্বাস্থ্য; তোমরা আর কখনো অসুস্থ হবে না।’
> ‘তোমাদের জন্য এখন চির যৌবন; তোমরা আর কখনো বৃদ্ধ হবে না।’
> ‘তোমাদের জন্য এখন চির সুখ ও পরমানন্দ; তোমরা আর কখনো দুঃখ-কষ্ট পাবে না।’ (মুসলিম, তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ, দারেমি)
আল্লাহ তাআলা মুমিন বান্দার জন্য কত চমৎকারভাবেই না বানিয়েছেন! জান্নাতের প্রতিট কাছের কাণ্ডই হবে স্বর্ণ দ্বারা নির্মিত। স্বর্ণ ও রৌপ্যের ইম দ্বারা নির্মিত জান্নাত। চুন-সুরকি ও সিমেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে সুগন্ধি মৃঘনাভি এবং জাফরানের মাটি ও মনি মুক্তার কংকর ব্যবহৃত হয়েছে জান্নাত নির্মাণে। এসবই সব মুমিন বান্দা ভোগ করবে। এই জান্নাতে মুমিন বান্দারা কী করবেন?
Advertisement
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জান্নাতে প্রবেশকারী লোক অত্যন্ত সুখ-স্বাচ্ছন্দে থাকবে; কোনো দুঃখ-কষ্ট ও অভাব-অনটন তাকে স্পর্শ করবে না। সে অনন্তকাল জান্নাতে অবস্থান করবে আর কখনো সে মৃত্যুবরণ করবে না। কখনো তার পরনের পোশাক পুরাতন হবে না এবং তার যৌবনকালও শেষ হবে না। জান্নাতিরা হবে অনন্তযৌবনা।’ (তিরমিজি)
মুমিন বান্দা জান্নাতে আরও যা পাবে-
হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মহান প্রভু জান্নাতিদের সম্বোধন করে বলবেন- ‘হে জান্নাতের অধিবাসীরা!’
তারা জান্নাতিরা উত্তরে বলবে- ‘হে আমাদের প্রভু! আমরা উপস্থিত আছি; যাবতীয় সুখ ও কল্যাণ তোমার হাতে আছে।’
তখন আল্লাহ তাআলা বললেন- ‘তোমরা কি সন্তুষ্ট হয়েছো?’
তারা বলবে- হে আমাদের প্রভু! ‘আমাদের কি হয়েছে যে, সন্তুষ্ট হব না? তুমি তো আমাদের সেই সব জিনিসই দান করেছ, যা তুমি তোমার কোনো সৃষ্টিকে দান করনি।’
তখন আল্লাহ বলবেন, ‘এর চেয়েও উত্তম কিছু তোমাদেরকে দান করব না কি?’
তারা বলবে- ‘এর চেয়েও উত্তম বস্তু আর কি হতে পারে?’
মহান প্রভু জবাবে বলবেন, ‘তোমাদের উপর আমার সন্তুষ্টি অনিবার্য কররো। এরপর আমি তোমাদের প্রতি কখনো অসন্তুষ্ট হব না।’ (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ)
হজরত জারির ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, এক রাতে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে ছিলাম। হঠাৎ তিনি পূর্ণিমার রাতের চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘শোন! নিশ্চয়ই তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে তেমনি স্পষ্ট দেখতে পাবে, যেমন স্পষ্ট ঐ চাঁদকে দেখতে পাচ্ছ। তাঁকে (আল্লাহকে) দেখতে তোমরা কোনো ভিড়ের সম্মুখীন হবে না।’ (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, রিয়াদুস সালেহিন)
সব জান্নাতিরাই এ সুবিধাগুলো ভোগ করবে। কিন্তু সর্বনিম্ন জান্নাতের অধিকারী বান্দা কী পাবে?
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে নিম্নতম জান্নাতির মর্যাদা হবে এই যে- আল্লাহ তাআলা তাকে বলবেন, ‘তুমি কামনা-আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ কর- (আমি এই এই জিনিস চাই কিংবা অমুক বস্তু চাই ইত্যাদি) সুতরাং সে কামনা করবে আর কামনা করতেই থাকবে।
আল্লাহ বলবেন, ‘তুমি কামনা করলে কি?’
সে উত্তর দেবে- ‘হ্যাঁ’।
আল্লাহ ওই বান্দাকে বলবেন- ‘তোমার জন্য সেই পরিমাণ রইলো; যে পরিমাণ তুমি কামনা করেছো আর তার সাথে সাথে তার সমতুল্য আরও কিছু রইলো।’ (মুসলিম, রিয়াদুস সালেহিন)
মহান আল্লাহর কাছে জান্নাতিরা পাবেন অনেক নেয়ামত; যার বর্ণনা দিয়ে শেষ করা যাবে না। সুতরাং মুমিন বান্দার চাওয়া-পাওয়া হোক মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি। যে সন্তুষ্টির মাধ্যমেই তারা মহান আল্লাহর কাছে পাবেন চিরস্থায়ী জান্নাত।
আল্লাহ তাআলা মুমিন বান্দাকে জান্নাতের নেয়ামত দিয়ে ধন্য করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস