সময়টা ১৯৪৫ সাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। দক্ষিণ চীনের কুনমিং থেকে ১৩ জন যাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে সি-৪৬ পরিবহন বিমানটি। তবে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনি। মাঝ পথেই নিখোঁজ হয়। দিন, মাস, বছর কেটে গেলেও খোঁজ মেলেনি সেই বিমানের। সবাই আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন।
Advertisement
সেসময় পুরো বিশ্বে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা চলছে। যে কারণে আরও বেশি নজর এড়িয়ে যায় বিমানটি। যুদ্ধের সময় কয়েকশ বিমান ভারত, মিয়ানমার ও চীনে হারিয়ে গেছে। এর মধ্যে কিছু বিমানকে গুলি করে ধ্বংস করেছে জাপানি সেনারা। আর বাকি বিমানগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগে পড়ে চিরতরে হারিয়ে গেছে।
অবশেষে ৭৭ বছর পর খোঁজ মিলল বিমানটির। আস্ত বিমান পাওয়ার আশা কেউই করেনি। ভারতের অরুণাচল রাজ্যের পার্বত্য এলাকায় পাওয়া গেছে সি-৪৬ পরিবহন বিমানটির ধ্বংসাবশেষ।
বিমানটি উড্ডয়ন পথে ভারতের অরুণাচল রাজ্যের পার্বত্য এলাকায় ঝড়ের কবলে পড়ে নিখোঁজ হয়। বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে সব আরোহী মারা গিয়েছিলেন। একটি অনুসন্ধানী দল এই বিধ্বস্ত বিমান শনাক্ত করেছে।
Advertisement
এই বিমানটির হতভাগ্য এক যাত্রীর সন্তান বিল শেরারের অনুরোধের পর বিমানটি উদ্ধারে নামে একটি অনুসন্ধানী দল। অভিযানকালে অংশ নেওয়া ৩ গাইডের মৃত্যু হয়েছে।
অনুসন্ধান মিশনের প্রধান ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের অভিযাত্রী ক্লেটন কুহলেস। তারা বিমানের নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারে তেমন কোনো তথ্যই পাননি শুরুর দিকে। কেবল জানতে পারেন বিমানটি অদৃশ্য হয়ে গেছে।
বিমানটির শেষ অবস্থান থেকেই তারা অনুসন্ধান শুরু করেন। স্থানীয় লিসু নৃগোষ্ঠীর একদল গাইড নিয়ে বরফশীতল নদীর হাঁটু ও গলা সমান পানি পেরিয়ে পর্বতের উচ্চতায় হিমায়িত তাপমাত্রায় তাদের ক্যাম্প করতে হয়েছিল। গত সেপ্টেম্বরে তুষার ঝড়ের সময় প্রাথমিক পর্যায়ে প্রকল্পের তিন গাইড হাইপোথার্মিয়ায় মারা যায়।
দলটি শেষ পর্যন্ত গত মাসে একটি তুষার ঢাকা পর্বত চূড়ায় পৌঁছায়। যেখানে বিমানটি ধাক্কা খেয়েছিল, সেখানে বিমানের ধ্বংসাবশেষ দেখে হারিয়ে যাওয়া বিমানটি শনাক্ত করেন। বিমানটি পাওয়া গেলেও এটি অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়নি। অনুসন্ধানকারী দল হিমালয়ের একটি পাহাড়ের চূড়ায় এটির ধ্বংসাবশেষ পায়।
Advertisement
ধ্বংসাবশেষের মধ্যে মানুষের কোনো দেহাবশেষ পাওয়া যায়নি।এতদিন পর আর কেউ বেঁচে থাকবে না এটি জানা ছিল সবার। তবে আশা ছিল দুর্ঘটনার শিকার হওয়া মানুষগুলোর চিহ্ন হয়তো পাওয়া যাবে কিন্তু বিমানটিতে এর কিছুই পাওয়া যায়নি।
বিল শেরার এই অনুসন্ধানের জন্য কুহেলসকে দায়িত্ব দেন। শেরারের অফিসার বাবা এই বিমানটির যাত্রী ছিলেন। শেরার বলেন, আমি শুধু বলতে পারি যে আমি আনন্দিত, শুধু জেনেছি তিনি কোথায় আছেন। এটা দুঃখজনক কিন্তু তারপরও আনন্দের।
সূত্র: আল-জাজিরা
কেএসকে/এমএস