উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে অনশনরত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এ পর্যন্ত অসুস্থ হয়েছেন চারজন। চিকিৎসক এসে তাদের সেবা দিচ্ছেন।
Advertisement
এর আগে বুধবার (১৯ জানুয়ারি) রাতে বাংলা বিভাগের মোজাম্মেল হক ও সমাজকর্ম বিভাগের দীপান্বিতা বৃষ্টি নামের দুই শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের অ্যাম্বুলেন্সযোগে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে বুধবার বিকেল থেকে আমরণ অনশন শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। ২৪ জন শিক্ষার্থী অনশনে অংশ নিয়েছেন। তারা ক্যাম্পাসে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার থেকে কোনো সহযোগিতা পাননি। বিভিন্ন হাসপাতালে যোগাযোগ করেও সাড়া মেলেনি। পরে ব্যক্তিগতভাবে ফোন করে বৃহস্পতিবার সকালে রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসককে নিয়ে আসা হয়। মানবিক কারণে তিনি ব্যক্তিগভাবে সাড়া দেন। এ চিকিৎসককে অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা দিতে দেখা গেছে।
Advertisement
অনশনরত শিক্ষার্থী জাহিদুল হাসান অপূর্ব বলেন, ‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা অনশন চালিয়ে যাবো। কোনো প্রতিবন্ধকতাই আমাদের টলাতে পারবে না। শুধু ওয়াশরুমের প্রয়োজন ছাড়া আমরা এই জায়গা থেকে উঠবো না। কোনো ধরনের খাবারও গ্রহণ করবো না।’
আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘অনশনকারীরা দুর্বল হতে শুরু করেছেন। এরই মধ্যে চারজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমরা ভার্সিটির মেডিকেল সেন্টার থেকে কোনো সহায়তা পাইনি, অ্যাম্বুলেন্স পাইনি। রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগাযোগ করলে তারা সরাসরি বলে দেন, তারা এটার সঙ্গে যুক্ত হবেন না। আমরা মাউন্ট অ্যাডোরায়ও যোগাযোগ করি। তারা বলেন তাদের নাকি রিসোর্স নেই। ওসমানী হাসপাতালেও ফোন করা হয়। কিন্তু তারা ফোন রিসিভ করেননি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের একটাই দাবি, আমরা ভিসির পদত্যাগ চাই।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘অনশনকারীদের কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তারপরও উপাচার্য গদি ছাড়ছেন না। এই ২৪ জনের কিছু হলে আরও ২৪ জন আসবে। এরপর আরও ২৪ জন। দেখি তিনি পদত্যাগ না করে কিভাবে থাকেন।’
প্রক্টরিয়াল বডি ও ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টার পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবি থাকলেও আন্দোলনকারী এখন উপাচার্যের পদত্যাগকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টায় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের জন্য বুধবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুর ১২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। অন্যথায় আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন।
Advertisement
বুধবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তার পদত্যাগের অপেক্ষায় ছিলেন। তবে উপাচার্য পদত্যাগ না করায় শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে আমরণ অনশন শুরুর সিদ্ধান্ত নেন।
বুধবার বিকেল ৩টা থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশন শুরু করেন ১৫ ছেলে ও ৯ মেয়ে শিক্ষার্থী। অনশনে বসা শিক্ষার্থীরা হলেন-শাহরিয়ার আবেদিন, আবদুল্লাহ আল রাফি, রাকিব, ফয়জুর রহমান, আসিফ ইকবাল, কাজল দাশ, সাদিয়া নওরিন মিথিলা, জান্নাতুল নাইম নিশাত, জাহিদুল ইসলাম, এস এম আহসান উল্লাহ, আসাদুজ্জামান, মরিয়ম আক্তার, আবু রাকিব হাসানসহ আরও ১৩ জন।
অনশনকারী জাহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা অনশন চালিয়ে যাবো। এতে যদি আমাদের মৃত্যু হয় তাহলে দায়ভার উপাচার্যের ওপরই বর্তাবে।’
এদিকে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল বিকেল ৪টায় প্রায় আড়াইশ শিক্ষকের সঙ্গে জুম মিটিং করেন উপাচার্য। মিটিং শেষে রাত ৮টার দিকে শতাধিক শিক্ষক আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে তাদের আন্দোলন স্থগিত করার অনুরোধ করেন। তবে আন্দোলন স্থগিতে রাজি হননি শিক্ষার্থীরা।
এসআর/এএসএম