দেশজুড়ে

খানজাহানের বসতভিটা খননে মিলছে পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন

প্রায় ৬০০ বছর আগের খানজাহানের বসতভিটা খননে বেরিয়ে আসছে সুলতানি আমলের পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন। ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর খনন কাজ শুরু হয়ে চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সাত কর্মকর্তা ও ১৪ শ্রমিক খনন কাজে অংশ নিচ্ছেন।

Advertisement

খনন কাজে অংশ নেয়া কর্মকর্তা ও শ্রমিকরা জানান, মাসব্যাপী খননের সময় সেখান থেকে বেরিয়ে আসছে ৬০০ বছরের পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা জানান, খানজাহানের বসতভিটা এলাকার ভূমির স্তর বিন্যাস, স্থাপত্য শৈলি ও কালানুক্রমিক সময় বের করাই এ খননের মূল উদ্দেশ্য।

তিনি আরও বলেন, ২০২১ সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে শুধুমাত্র বাগেরহাট সদর উপজেলায় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ হয়। জরিপ চালিয়ে আমরা ১৫০টির বেশি পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন রেকর্ড করেছি। যা ৫০০ বছর ও তার বেশি আগেকার। সম্প্রতি যে খনন কাজ চলছে সেখান থেকে মধ্যযুগের মানুষের বসবাসের বিভিন্ন স্থাপনার নিদর্শন বেরিয়ে আসছে।

Advertisement

সরেজমিনে দেখা যায়, ভোর সাড়ে ৬টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত খননসহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় পার করেছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের লোকজন। ইতোমধ্যে একটি বড় অংশ খননের ফলে সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছে সুলতানি আমলের বিভিন্ন পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন। প্রাচীন আমলের দেওয়াল, টেরাকোটা, তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আলামত পাওয়া যাচ্ছে। এসব দেখতে ভিড় করছেন মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে গড়ে ওঠা খানজাহানের মুসলিম শহর খলিফাতাবাদের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারে সর্বপ্রথম ২০০১ সালে স্বল্প পরিসরে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খনন কাজ শুরু করে। এরপর ২০১১ সালে প্রথমে বসতভিটা থেকে শুরু করে পূর্ব দিকে (৯৫৭ মিটার দৈর্ঘ্য ০.২৭ মিটার প্রস্থ) দেশের একমাত্র প্রাচীন সড়কটি খননের মাধ্যমে আবিষ্কৃত হলে দেশব্যাপী সাড়া পড়ে যায়। দুর্লভ দেশের একমাত্র প্রাচীন এ সড়কটি তখনই সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয় সরকার। পরে দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করার চিন্তা-ভাবনাকে সামনে রেখে এগিয়ে আসে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে দক্ষিণ এশিয়া পর্যটন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পুরাতন ওই সড়কের অবয়ব ঠিক রেখেই তার পাশ দিয়ে সড়ক তৈরি ও সংস্কার কাজ শুরু হয়। ওই বছরের শেষের দিকে দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য সড়কটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

পরের বছরর ২০১৬ সালের শেষ দিকে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ১৩ লাখ টাকা দিয়ে শুরু হয় খানজাহানের বসতভিটায় একটি বড় অংশের খনন কাজ। প্রায় ১০ একর জমির খানজাহানের বসতভিটায় খননকৃত অংশ থেকে বেরিয়ে আসে সুলতানি যুগের ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের সৌখিন তৈজসপত্র, মৃৎশিল্প, চুন দিয়ে তৈরি স্টোন ওয়্যার, পলিক্রম ওয়্যার, গেলইজড ওয়্যার, স্লিপযুক্ত ওয়্যার, সেলাডন, চাইনিজ পোরসেলিন, এগশেল মৃৎপাত্র।

প্রায় তিনমাস ধরে চলা ওই খনন কাজে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোকাম্মেল হোসেন ভূঁইয়াসহ ওই বিশ্ব বিদ্যালয়ের ৪০ শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। খননের সময়ে ব্যতিক্রমী চুন-বালি মিশ্রিত একটি আঁধার পাওয়া যায়। একটি সেপটিক ট্যাংকসহ পাকা শৌচাগার, পানি সরবরাহের কাজে ব্যবহৃত ১৭ মিটার পোড়া মাটির তৈরি পাইপ, পানি নিষ্কাশন নালা ও ইটের তৈরি কার্ভাড নালা ছিল। সুলতানি যুগে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের রঙিন টালি, ফুলের নকশাকৃত ও লতাপাতার নকশা করা ইট।

Advertisement

এ বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বাগেরহাটের কাস্টোডিয়ান মো. যায়েদ বলেন বিশ্ব ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ সুলতানি আমলে বাগেরহাটে পুরাকীর্তিগুলো বিশ্বের দরবারে সমাদৃত। ষাটগম্বুজ মসজিদসহ হযরত খানজাহানের (রহ.) বিভিন্ন পুরাকীর্তি দেখতে প্রতিনিয়ত বাগেরহাটে আসেন দেশি-বিদেশি হাজার হাজার দর্শনার্থীর।

আরএইচ/এমএস