জাতীয়

সপ্তাহের ব্যবধানে শনাক্ত বেড়েছে ২২৮ শতাংশ

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’র প্রভাবে সারাদেশে অতি দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। এক মাস আগেও দৈনিক শনাক্তের হার ২ শতাংশ বা তারও কম ছিল। ওমিক্রন অতি দ্রুত ছড়ায় বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মত দিলেও সাধারণ মানুষ অবহেলা করেই চলছিলেন। তবে দেশে সংক্রমণের হার ও শনাক্ত রোগী বাড়ায় ফের আতঙ্ক ফিরছে জনমনে।

Advertisement

নতুন বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের প্রথম দিন থেকেই সংক্রমণের হার ও শনাক্ত রোগী বাড়তে শুরু করে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৩৭ হাজার ৮৩০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে সাড়ে ৯ হাজার রোগী শনাক্ত হয়। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ২৫ দশমিক ১১ শতাংশ। জানুয়ারির শুরুতে সংক্রমণ বাড়লেও মৃতের সংখ্যা তুলনামূলক কম ছিল। তবে গত সপ্তাহ থেকে সংক্রমণের পাশাপাশি মৃত্যুও বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গেল এক সপ্তাহে (১২ থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত) সারাদেশে দুই লাখ তিন হাজার ১২২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। আগের সপ্তাহের (৫ থেকে ১১ জানুয়ারি) তুলনায় এ সপ্তাহে ৪৩ হাজার ৪৩৫টি নমুনা বেশি পরীক্ষা করা হয়। আর গত এক সপ্তাহে ৩৪ হাজার ৪০৫ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন, যা আগের সপ্তাহের (৫ থেকে ১১ জানুয়ারি) চেয়ে ২৩ হাজার ৯৩১ জন বেশি। শতাংশের হিসাবে আগের সপ্তাহের চেয়ে এ সপ্তাহে ২২৮ শতাংশ বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছেন।

অন্যদিকে, নতুন রোগী শনাক্ত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মৃতের সংখ্যাও বেড়েছে। গত ৫ জানুয়ারি থেকে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে করোনায় মারা যান ২০ জন। গত সপ্তাহ অর্থাৎ ১২ জানুয়ারি থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত মারা গেছেন ৫৭ জন, যা আগের সপ্তাহের চেয়ে ৩৭ জন বেশি। শতাংশের হিসাবে চলতি সপ্তাহে আগের সপ্তাহের চেয়ে ১৮৫ শতাংশ মৃত্যু বেড়েছে।

Advertisement

দেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত ও ১৮ মার্চ প্রথম করোনা আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়। বুধবার (১৯ জানুয়ারি) পর্যন্ত দেশে মোট এক কোটি ১৯ লাখ ৬৬ হাজার ২৮৯টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৬ লাখ ৪২ হাজার ২৯২ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে।

আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ২৮ হাজার ১৭৬ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ১৮ হাজার ১৬ ও নারী ১০ হাজার ১৬০ জন। করোনায় মৃত রোগীদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ২৩ হাজার ৯৩৮ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালে তিন হাজার ৪২৬ জন মারা গেছেন। এছাড়া বাড়িতে মারা গেছেন ৭৭৮জন ও হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয় ৩৪ জনকে।

এদিকে, করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তথা সরকার। করোনা প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সুপারিশে সরকার মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে এবং সবাইকে দ্রুত টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। সংক্রমণ রুখতে ১১ দফা নির্দেশনা জারিও করেছে সরকার। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সরকারের জারি করা এসব নির্দেশনা মানা হচ্ছে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বুধবার দুপুরে ভার্চুয়ালি ব্রিফিং করেন। ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বিশ্বজুড়ে বর্তমানে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে বাংলাদেশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই এখনও বেশি।’

Advertisement

ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট যে তাণ্ডব চালিয়েছে, তা মাথায় রেখে সবাইকে সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মেনে চলা উচিত। পাশাপাশি যারা এখনও করোনার টিকা নেননি, তাদের দ্রুত টিকা নিতে হবে।’

এমইউ/এএএইচ/জিকেএস