দেশজুড়ে

রেডজোনে রাঙ্গামাটি: পুলিশ দেখলেই মাস্ক পরেন পর্যটকরা

করোনা সংক্রমণ দ্রুত বেড়ে চলায় ঢাকার সঙ্গে এখন রেড জোন পাহাড়ি জেলা রাঙ্গামাটি। রাঙ্গামাটিকে রেড জোন ঘোষণার পর সাধারণ জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে প্রশাসন আরো কঠোর হয়েছে। পর্যটন স্পটগুলো খোলা রাখা হলেও অর্ধেক পর্যটক প্রবেশ এবং স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণের নির্দেশনা দিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু নির্দেশনা পালনে আগ্রহ নেই পর্যটকদের। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে মাস্ক ছাড়াই ঘুরে বেড়াচ্ছেন পর্যটকরা। ট্যুরিস্ট পুলিশের বিষয়টি তদারকি করার কথা থাকলেও আগ্রহ নেই তাদেরও।

Advertisement

পর্যটন কর্পোরেশনের ঝুলন্ত সেতু ঘুরে দেখা যায়, পর্যটকরা ঝুলন্ত সেতু ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ কেউ হ্রদে নৌ বিহারও করছেন। কারো কারো মুখে মাস্ক থাকলেও বেশিরভাগ পর্যটকের মুখে মাস্ক ছিল না। দূরত্ব মেনে চলার নির্দেশনা থাকলেও সেটাও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। মাস্ক ছাড়া প্রবেশের অনুমতি না থাকলেও বেশিরভাগ পর্যটকের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি।

এদিকে মুখে মাস্ক না পরার ব্যাপারে পর্যটকরা নানান ব্যাখা দিচ্ছেন। কারো মনে নেই মাস্ক আনতে। আবার কেউ মাস্ক গাড়িতে রেখে এসেছেন। কেউ কেউ বলছেন ছবি তোলার সময় মাস্ক খুলে রেখেছেন।

মাস্ক না পরার বিষয়ে জানতে চাইলে মো. ইলিয়াছ জানান, মাস্ক পরে ছবি তুললে চেহারা দেখা যায় না। তাই ছবি তোলার জন্য মাস্ক খুলে পকেটে রেখেছি। ছবি তোলা শেষ হলে আবার পরবো। আরেক পর্যটক মো. সোহেল মিয়া বলেন, গাড়ি থেকে নামার পর মাস্ক হারিয়ে গেছে। সরকারি নির্দেশনাতো অনেকেই মানছেন না, মাস্ক পরা উচিত ছিল বলে স্বীকারও করেন তিনি।

Advertisement

কুমিল্লা থেকে বেড়াতে আসা সোহেল রানা বলেন, এখানের প্রকৃতি খুবই সুন্দর, তবে বেশিরভাগ পর্যটকরা অসচেতনভাবে ঘুরাফেরা করছে তাতে আমিও ঝুঁকিতে পড়ছি। এই ব্যাপারে নিজ তাগিদে সচেতন হলে সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব হবে।

ঢাকার উত্তরা থেকে বেড়াতে আসা আরেক পর্যটক মো. জাবেদ খান অভিযোগ করে বলেন, যাদের এই বিষয়গুলো দেখার দায়িত্ব তাদের আমার চোখে পড়েনি। ট্যুরিস্ট পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন থাকলে পর্যটকরা আরও সচেতন থাকতো বলে মনে হয়। বেড়াতে এসে নিজেকে ঝুঁকিতে ফেলছি বলে মনে হচ্ছে।

রাঙ্গামাটি পর্যটক বোট ঘাট ইজারাদার রমজান আলী বলেন, রেড জোন ঘোষণার প্রভাব পড়েছে। বিগত বন্ধের দিনে যে পরিমাণ পর্যটক আসে সেই তুলনায় কিছুটা কম। সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করেই হ্রদ ভ্রমণের জন্য বোট ভাড়া দেওয়া হচ্ছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, যতক্ষণ আমরা পর্যটকদের সামনে থাকি, ততক্ষণ তারা মুখে মাস্ক পরে, সরে গেলে তারা আবার খুলে ফেলে। নিজেরা সচেতন না হলে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করানো কঠিন হয়ে যাবে।

Advertisement

রাঙ্গামাটি পর্যটন কর্পোরেশন ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া বলেন, রেড জোন ঘোষণার পর অনেক বুকিং বাতিল হয়েছে। পর্যটকের সংখ্যাও কমে এসেছে। এরইমধ্যে আমাদের পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।

পর্যটকদের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা মাস্ক ছাড়া ঝুলন্ত সেতুতে কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছি না। তবে প্রবেশের পর অনেকেই মাস্ক খুলে ফেলছেন। লোকবল সংকটের কারণে পর্যটকদের স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে বেগ পেতে হচ্ছে। তবে হোটেলে সরকারি বিধি অনুসরণ করে রুম ভাড়া দেওয়া হচ্ছে।

রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, স্থানীয় অর্থনীতির বিষয়টি বিবেচনা করে পর্যটন স্পটগুলি এখনই বন্ধ ঘোষণা হয়নি। তবে পর্যটন কেন্দ্রে ধারণক্ষমতার অর্ধেক প্রবেশের ব্যবস্থা রাখতে হবে। জেলা প্রশাসনের মোবাইল টিম মাঠে কাজ করছে।

শংকর হোড়/এফএ/এমএস