দেশজুড়ে

এই দিনে নিহত হয় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা

আজ ঐতিহাসিক ৬ জানুয়ারি। স্বাধীনতার উষালগ্নে দেশের সকলেই যখন আনন্দে আত্মহারা ঠিক সেই মুহূর্তে ১৯৭২ সালের এই দিনে দিনাজপুরে মাইন বিস্ফোরণে শহীদ হয়েছিলেন শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীন বাংলাদেশে এত বড় মর্মান্তিক ঘটনা আর কোথাও ঘটেনি। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা দিনাজপুর মুক্ত করে। এরপর বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তানিদের পুতে রাখা মাইন, লুকিয়ে রাখা ও ফেলে যাওয়া অস্ত্রশস্ত্র, বোমা এবং গোলাবারুদ উদ্ধারের জন্য মহারাজা গিরিজানাথ উচ্চ বিদ্যালয় ট্রানজিট ক্যাম্পে ২০ ডিসেম্বর থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের গোলাবারুদ উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। ভারতের পতিরাম, হামজাপুর, বাঙ্গালবাড়ী, তরঙ্গপুর, বাংলাদেশের নবাবগঞ্জ, ঘোড়াঘাট, ফুলবাড়ী, হাকিমপুর, কোতয়ালী, ঠাকুরগাঁও, পীরগঞ্জ, রাণীশংকেল ও হরিপুর এলাকার ৬ ও ৭ নং সেক্টরের প্রায় ১ হাজার মুক্তিযোদ্ধা এই ট্রানজিট ক্যাম্পে অবস্থান নেন। মুক্তিযোদ্ধারা জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ট্রাক বোঝাই করে অস্ত্রশস্ত্র, গ্রেনেড, মর্টারের ২ ও ৩ ইঞ্চি সেল, এ্যান্টি ট্যাংক মাইন, এ্যান্টি পারসোনাল মাইনসহ প্রচুর গোলাবারুদ মহারাজা স্কুল ট্রানজিট ক্যাম্পে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে জড়ো করে। ১৯৭২ সালের ৬ জানুয়ারি বিকেলে ঘোড়াঘাট ও নবাবগঞ্জ এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা দুই ট্রাক অস্ত্রশস্ত্র, মাইন, বোমা ও গোলাবারুদ উদ্ধার করে মহারাজা স্কুল ক্যাম্পে নিয়ে আসে। বিকেল আনুমানিক সোয়া  ৫টার দিকে দ্বিতীয় ট্রাক থেকে অস্ত্র খালাসের সময় অস্ত্র-গোলাবারুদ হাত বদলের এক পর্যায়ে একজন মুক্তিযোদ্ধার হাত থেকে একটি এ্যান্টি পারসোনাল মাইন মাটিতে পড়ে যায়। ফলে ব্যাংকারে স্তুপীকৃত বিপুল পরিমাণ মাইন, বোমা বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। প্রচণ্ড বিস্ফোরণে বিদ্যালয়ের কক্ষে এবং মসজিদে নামাজ আদায়কারী মুক্তিযোদ্ধারা নিহত হয়। ব্যাংকার সংলগ্ন এলাকা ২০ থেকে ২৫ ফুট গভীর পুকুরে পরিণত হয়।পরের দিন বড় ময়দানে বিপুল সংখ্যক লোকের উপস্থিতিতে ৯৬ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয় এবং পরে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় মুক্তিযোদ্ধাদের লাশ পূণ্যভূমি দিনাজপুর চেহেলগাজী মাজার প্রাঙ্গণে দাফন করা হয়। পরে ওই স্থানে আরও ৩৯ জনসহ মোট ১৩৫ জনকে সমাহিত করা হয়। এছাড়াও অনেকের লাশ তাদের আত্মীয়-স্বজনেরা নিয়ে যায় এবং অনেকের দেহ একেবারেই ছিন্ন ভিন্ন হয়ে পড়ায় মৃতর সংখ্যা হিসাব করা দুরূহ হয়ে পড়ে। দুর্ঘটনার পরের দিন মহারাজা বিদ্যালয় এলাকা থেকে শরীরের হাত-পাসহ প্রায় ৫০ মণের মত মাংসপিণ্ড উদ্ধার করা হয়। দিবসটি স্মরণে ৬ জানুয়ারি স্মৃতি পরিষদ প্রতি বছরের মত এবারও কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ৯ টায় চেহেলগাজী মাজারে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণসমাধি ও মহারাজা স্কুলের শহীদ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, সকাল ১০ টায় প্রেসক্লাবে আলোচনা সভা এবং বাদ আসর মহারাজা স্কুল জামে মসজিদে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ও বর্তমানে সদস্য আজহারুল আজাদ জুয়েল জানান, পরিষদের পক্ষ থেকে কর্মসূচি গ্রহণ করা হলেও প্রশাসনিকভাবে এই দিবসটি পালন করার জন্য কোনো কর্মসূচি নেই। আমাদের দাবি এই দিবসটি যেন প্রশাসনিকভাবে কর্মসূচির মাধ্যমে পালন করা হয়। এমদাদুল হক মিলন/এসএস/আরআইপি

Advertisement