স্বাস্থ্য

‘চিকিৎসকদের মাঝে পেশাদারিত্বের অভাব প্রকট’

দেশের অধিকাংশ চিকিৎসকের মাঝে পেশাদারিত্বের অভাব রয়েছে। চিকিৎসক হিসেবে যে সকল শপথবাক্য ও নীতিনৈতিকতার প্রতি মুহূর্তে তাদের মেনে চলার কথা তা মানছেন না তারা। চিকিৎসকদের অনেকেই সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।তারা পেশার মূল দায়িত্ব ও কর্তব্য ভুলে রাজনৈতিক নেতাকর্মীর মতো আচরণ করছেন। ফলে মেডিকেল সেক্টর চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।মঙ্গলবার জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ শীর্ষ পরিপাকতন্ত্র ও লিভারবিশেষজ্ঞদের একজন বাংলাদেশি চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. বিএম আতিকুজ্জামান এ কথা বলেন। তিনি বর্তমানে কলেজ অব মেডিসিন সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা ইউনিভার্সিটির পরিপাকতন্ত্র ও লিভার বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তার মতে, চিকিৎসকরা সরাসরি মানবসেবার সঙ্গে জড়িত। প্রকৃত মানবসেবার জন্য সততা ও কাজের স্বচ্ছতা অত্যাবশ্যক। কিন্তু বেশিরভাগ চিকিৎসকের কাজে সততা ও স্বচ্ছতা নেই। রোগীকে যতটুকু সময় নিয়ে দেখার কথা সেভাবে দেখছেন না। কমিশনের লোভে অনৈতিকভাবে একগাদা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বাধ্য করাচ্ছেন।  দেশে ব্যাঙ্গের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা মেডিকেল কলেজ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ২৮তম ব্যাচের মেধাবী এ চিকিৎসক বলেন, রোগীরা চিকিৎসকের কাছে অনেক আশা ও বিশ্বাস নিয়ে আসেন। কিন্তু অনেক চিকিৎসক বিনা প্রয়োজনে দামি এন্টিবায়োটিক, অতিরিক্ত ক্লিনিক্যাল ও ল্যাবরেটরি টেস্ট করান। অনেক সময় রোগীর বিশ্বাস ভঙ্গ করে কমিশনের লোভে অনৈতিক কাজ করেন। মেডিকেল অডিট রিপোর্ট না থাকায় এমনটি করা সম্ভব হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। ডা. আতিক আরো বলেন, অভিযোগ রয়েছে চিকিৎসকরা বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি থেকে উপঢৌকন নেন। দেশ-বিদেশে সেমিনার, সিম্পোজিয়ামের জন্য স্পন্সরশিপ নেন। ফলে রোগীর চেয়ে উপঢৌকন প্রদানকারী ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রতি চিকিৎসকের বেশি দায়বদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রানে কঠোর আইন প্রণয়ন করা উচিত।  তিনি  আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে আইন করে এ সব অপকর্ম বন্ধ করা হয়েছে। এক সময়  বাংলাদেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকরাও অনৈতিক কাজ করতেন। কিন্তু ওই দেশে রোগীরা এখন চিকিৎসকদের মূল্যায়ন করেন। নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান ডাক্তারদের পারফরমেন্স দেখে ক্রমানুসার তালিকা তৈরি ও তা প্রকাশ করে।রোগীর চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ প্রমাণিত হলে মোটা অঙ্কের আর্থিক জরিমানা ও অনেক সময় ডাক্তার লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল করা হয়। বাংলাদেশে আধুনিক চিকিৎসার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি থাকলেও সেগুলো সঠিকভাবে পরিচালনার দক্ষ জনবল নেই বলে মনে করেন ডা. আতিক। নানা হীন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে এসব যন্ত্রপাতি কেনা হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।   গবেষণা কার্যক্রমে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইসিডিডিআরবিসহ হাতেগোনা কিছু প্রতিষ্ঠানে গবেষণা কার্যক্রম চলছে। গবেষণাসহ উৎসাহিত করতে চিকিৎসকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ডা. আতিক বলেন, দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অধিকতর উন্নয়নে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ তৈরি ও গবেষণায় অধিকতর গুরত্ব দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে কোন বয়সে কোন শ্রেণির মানুষ কি কি রোগে আক্রান্ত হতে পারে তা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা নির্ণয় করেন। নির্দিষ্ট বয়সে তারা এসে ওই সব রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান। তবে নানা সমস্যা থাকলেও বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সেক্টরে এগিয়ে চলেছে বলে স্বীকার করেন তিনি। সম্প্রসারিত টিকা দান কর্মসূচি (ইপিআই), মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যু হ্রাসসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য আন্তর্জাতিক মহলেও প্রশংসিত হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ একটি ট্রান্সজিসন প্রিয়ড পার করছে। আগামী দুই তিন দশকে সব ভুলত্রুটি শুধরে চিকিৎসাসেবায় প্রভূত উন্নতি করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি এই পরিপাকতন্ত্র ও লিভার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এমইউ/এএইচ/পিআর

Advertisement