জাতীয়

টিকার সনদে অনীহা হোটেল-রেস্তোরাঁয়

করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন সংক্রমণ রোধে বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার। চলমান বিধিনিষেধে করোনার টিকা নেওয়া ছাড়া রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়ায় নিষেধ। কিন্তু বাস্তবে তার কোনো প্রয়োগ বা প্রভাব নেই। নজরদারিও করছে না কেউ। যারা খাচ্ছেন তাদের যেমন বিষটি নিয়ে মাথাব্যথা নেই, পাশাপাশি রেস্তোরাঁর মালিকরাও এ আইন মানতে চরম অনীহা দেখাচ্ছেন।

Advertisement

এখনও রাজধানীর প্রায় সব রেস্তোরাঁয় করোনার টিকা সনদ ছাড়াই বসে খাওয়া যায়। সনদ আছে কি না জিজ্ঞাসাও করে না কেউ। এমনকি সনদ না থাকলে বিব্রতকর পরিস্থিতিতেও পড়তে হয় না কোথাও।

মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) রাজধানীর বেশ কয়েকটি হোটেল-রেস্তোরাঁ ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

এসব হোটেল-রেস্তোরাঁয় খেতে যারা খেতে এসেছেন তাদের অনেকের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। তাদের অধিকাংশরই সঙ্গে টিকার সনদ ছিল না। আবার এমন অনেক মানুষ রয়েছেন, যারা টিকাই নেননি কিন্তু প্রতিদিন রেস্তেরাঁয় খাচ্ছেন।

Advertisement

এদিকে যারা নিয়ম মেনে সঙ্গে সনদ রেখেছেন তারা বলছেন, কখনও সনদ দেখানোর প্রয়োজন হয়নি তাদের।

মালিবাগ আবুল হোটেলে খেতে এসে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সুবহা বিন সাদিক বলেন, নির্দেশনার পর থেকেই টিকার কার্ড (টিকার সনদ) রেখেছি ব্যাগে। কিন্তু কোনো রেস্তোরাঁয় কখনও দেখতে চায়নি।

একই কথা বলেন শান্তিনগর একটি হোটেলে খেতে আসা বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা ফরিদ হোসেন। প্রতিদিন সেখানে দুপুরের খাবার খান তিনি। ফরিদ হোসেন বলেন, কেথায় কিসের নির্দেশনা। একটা কাগজে ‘টিকার সনদ সঙ্গে রাখুন’ লিখে দিয়ে মালিকরা দায় সেরেছেন। কিন্তু খুঁজে দেখুন, বেশিরভাগ মানুষের কাছে সনদ নেই।

এদিকে ওই হোটেলে কর্তব্যরত ম্যানেজার বলেন, টিকাকার্ড দেখানোর ওপর কড়াকড়ি করলে হোটেল ব্যবসায় লস হবে। কেউ আসবে না। এমন নিয়মে খাবার বেচা যাবে না। আর যারা খেতে আসছেন তাদের কাছে কার্ড দেখতে চাইলে বিরক্ত হন।

Advertisement

এদিকে গুলশান-বানানী এলাকায় অল্প কিছু অভিজাত হোটেলে নির্দেশনা মানতে ব্যানার, সাইনবোর্ড আর নোটিশ টাঙানো দেখা গেছে। তবে যারা খাচ্ছেন তারা সবাই সনদধারী কিনা সেটা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক একটি অভিজাত হোটেলের ম্যানেজার ইসরাফিল হোসেন বলেন, আমরাতো বলছি। কিন্তু জনে জনে চেক করাটা আমাদের দায়িত্ব নয়। সেটা সম্ভবও নয়। এখানে সবাই এলিট পারসন। প্রয়োজনে আইন-শৃঙ্খখলা বাহিনী সেটা করুক।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর করোনা প্রতিরোধে সরকারের দেওয়া ১১ দফা নির্দেশনার একটিতে বলা হয়, রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ এবং আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য অবশ্যই করোনা টিকা সনদ প্রদর্শন করতে হবে।

এ পরিস্থিতিতে রেস্তোরাঁ মালিকরা বলছেন, রাজধানীতে অর্ধেক মানুষ এখনও পুরোপুরি টিকা কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারেননি। তাদের সনদ নেই। এ অবস্থায় এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা সম্ভব নয়। কার্যকর হলে ব্যবসা কমে যাবে, লোকসান গুণতে হবে তাদের।

এদিকে কিছু কিছু রেস্তোরাঁ মালিক জানিয়েছেন, টহল পুলিশ রেস্তোরাঁয় কার্ড ছাড়া খাওয়াতে নিষেধ করে যাচ্ছেন। তবে কার্ড চাইলে ক্রেতারা সেটা দেখাচ্ছেন না। ফলে তারাও তোড়জোড় করছেন না।

মগবাজার মোড়ে ক্যাফে ডি তাজের এক কর্মকর্তা বলেন, যারা হোটেলে আসেন তাদের কেউ টিকা কার্ড নিয়ে আসেন না। ঢুকতে না দিলে বিক্রি বন্ধ করে বসে থাকতে হবে। এর আগে দুদিন টিকা কার্ড চাওয়া হয়েছে। তখন কেউ হোটেলে ঢোকেননি। আমরা চেষ্টা করে দেখেছি।

এদিকে সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয় বলে দাবি বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির। সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাসান বলেন, বেশিরভাগ কাস্টমারের টিকাকার্ড নেই। আমরা কাস্টমারকে তো আর আটকাতে পারবো না। সেটা একটা ভোগান্তি হবে এবং এই ভোগান্তি আমরা নিতে পারবো না।

তিনি বলেন, আমরা আমাদের সব সদস্যভুক্ত রেস্তোরাঁকে এ নির্দেশনা মানতে বলেছি। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। তারপরও আমরা অ্যাওয়ারনেস ডেভেলপ করছি। আমরাও চাই না সরকারের নির্দেশনার ব্যত্যয় হোক। কিন্তু সেটা কঠিন।

ইমরান হাসান আরও বলেন, সব চাপ রেস্তোরাঁর ওপরে আসে। এসব নির্দেশনা গুলশান-বনানীতে মানানোর জন্য। সবখানে একভাবে চলে না। সাধারণ মানুষ যেখানে খান, তারা কোনো নিয়ম মানতে চান না।

এনএইচ/ইএ/এমএস