জাতীয়

যুক্তরাষ্ট্রে লবিংয়ে তিন বছরে প্রায় দুই মিলিয়ন ডলার দিয়েছে বিএনপি

গত পাঁচ বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লবিংয়ের জন্য বিএনপি-জামায়াতের টাকা দেওয়ার প্রমাণ আছে বলে দাবি করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।

Advertisement

সোমবার (১৭ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ দাবি করেন।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগের ব্যাপারে আমার কাছে প্রথম যে ডকুমেন্ট আছে সেটি হলো- ২০১৫ সালে একিন কোম্পানি অ্যাসোসিয়েটসের সঙ্গে। বিএনপির নয়াপল্টনের অফিসের ঠিকানা দিয়ে তাদের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। মাসিক ৫০ হাজার ডলারের বিনিময়ে এবং এটি তিন বছর অব্যাহত ছিল। বছরে ছয় লাখ ডলার দেওয়া হয়েছে। তিন বছরে প্রায় দুই মিলিয়ন ডলার হয়। এ ধরনের ১০টি ডকুমেন্ট আমার কাছে আছে।

সংসদে ডকুমেন্টগুলো দেখান তিনি। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনে তাদের হিসাব প্রকাশ করে। বিএনপিকে জিজ্ঞেস করতে হবে, এই টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে গেছে কি না? তা না হলে এতিমের টাকা মেরে খেয়ে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। সেই টাকার ব্যবহার এখানে করা হয়েছে কি না, আমরা সেই তদন্ত চাই।

Advertisement

পৃথিবীর যত শক্তিধর রাষ্ট্রই হোক না কেন, তারা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে ক্ষমতা রাখে না বলে উল্লেখ করেন শাহরিয়ার আলম।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে দেশের ১৬ কোটি মানুষ। আমাদের সমস্যা যদি থাকে আমরা এই পার্লামেন্টে আলোচনা করবো। রাজপথে যাবো। আমরা সেখানে সেটার সমাধান করবো। নির্বাচন কমিশনে যাবো। মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যাবো।

এর আগে পবিত্র কোরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে সত্য কথা ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার দাবি জানান বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ।

এর জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, পবিত্র কোরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি (হারুন) বলেছেন, জানা সত্ত্বেও মিথ্যাকে গোপন করিও না। আমি দাবি করবো এই বক্তব্যটি তার রাজনৈতিক জীবনে পালন করছেন কি না তা প্রমাণ করে দেখাবেন। নিজেকে সত্যিকারের মুসলমান হিসেবে যদি দাবি করেন তাহলে সেই মিথ্যাগুলো যেন গোপন না করেন। অন্ততপক্ষে ভবিষ্যতে এবং এই সংসদে ২০২২ সালের শীতকালীন অধিবেশনে তার দলের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের কুকর্মগুলো যেন প্রকাশ করেন।

Advertisement

শাহরিয়ার আলম আরও বলেন, আমরা তো জানি বিএনপি স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন করেছে। তাহলে তিনি তার প্রার্থী, আমার এলাকা, এসব বলছেন কেন? তাহলে তিনি দল পাল্টেছেন? জাতীয়তাবাদী দল থেকে তিনি কি নতুন কোনো রাজনৈতিক দলের সূচনা করেছেন? সেটা আমাদের জানতে হবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিএনপি না কি স্থানীয় সরকার নির্বাচন পরিহার করেছে। আমি তো রাজশাহীতে দেখেছি প্রতিটি উপজেলায়ই বিএনপির প্রার্থী ছিল। তারপরও রাজশাহীর মতো জায়গায় আমার নির্বাচনী এলাকায় নৌকার প্রার্থীর বিজয় হয়েছে ছয়টি জায়গায়। নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থীর বিজয় হয়েছে দুটি জায়গায় এবং তাদের (বিএনপি) দলের একজন নির্বাচিত হয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে অভূতপূর্ব নির্বাচন হয়েছে উল্লেখ করে মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশে ইভিএম আছে। ইভিএমের মাধ্যমে স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক নির্বাচন করা সম্ভব সেটি মাহবুব তালুকদারের মতো নির্বাচন কমিশনারও কিন্তু গতকাল স্বীকার করেছেন।

বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, তারেক রহমানকে এখনো কীভাবে তারা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বলেন। একজন দুর্নীতিবাজ সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি কীভাবে দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন? পবিত্র কোরআনের আলোকে আমি তার (হারুন) কাছে এ বিষয়ে জানতে চাই।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১০ সালের ৩০ জানুয়ারি বেগম খালেদা জিয়া ওয়াশিংটন টাইমসে আর্টিকেল লিখেছিলেন। কিন্তু এটি প্রকাশ পাওয়ার পর বিএনপির সব নেতাকর্মী অস্বীকার করেছিলেন যে, এটা খালেদা জিয়ার লেখা নয়।

হারুনকে উদ্দেশ করে শাহরিয়ার আলম আরও বলেন, অন্ততপক্ষে এখন সংসদে দাঁড়িয়ে পবিত্র কোরআনের আলোকে সত্যটা বলেন। আজ সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন যে, তখন মিথ্যা বলেছিলাম আমি ক্ষমা চাচ্ছি মহান আল্লাহর কাছে।

খালেদা জিয়ার অসুস্থতার প্রসঙ্গ টেনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ। তার সুস্থতা কামনা করি। তিনি বয়োজ্যষ্ঠ মানুষ। অসুস্থ মানুষের প্রতি আমাদের দিল কেন জানি নরম হয়ে যায়। কিন্তু সেই মানুষটি গ্রেনেড হামলা করে আমার দলের নেতাকর্মীকে সিএমএইচ যেতে দেননি, বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করতে দেননি।

এইচএস/জেডএইচ/জিকেএস