ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসের সূত্র ধরেই অনেকে তার প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার এক লন্ডন প্রবাসীর সহযোগিতায় তার বাড়িতে দুটি গরু নিয়ে হাজির হয় কয়েকজন সংবাদকর্মী। সেই গরু পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন তিনি। স্ট্যাটাসের সূত্র ধরে শুধু গরু আর সহযোগিতা নয়, স্বামীর শেষ চাওয়া মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিও তিনি পেয়েছেন। এখন তিনি মুক্তিযোদ্ধার ভাতাও পাচ্ছেন প্র্রতিমাসে। দুঃখের পরে সুখ পাওয়া এই মানুষটি হলেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভেলাজান গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা পাকুরামের স্ত্রী নিঢালী বেওয়া।ফেসবুকের স্ট্যাটাসের সূত্র ধরেই নিঢালীর জীবন কাহিনী নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয় দেশের প্রথম সারির কিছু জাতীয় দৈনিকে। নিউজটি প্রকাশ হয় অনলাইন মিডিয়াতেও। মঙ্গলবার বিকেলে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে ওই সহযোগিতার অর্থ দিয়ে ২টি গরু প্রদান করা হয়েছে। গরু ২টি তুলে দেয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন- সাইফুর রহমান বাদশা, ছবি লাল রায়, দৈনিক ইত্তেফাকের জেলা প্রতিনিধি তানভীর হাসান তানু, জাগো নিউজের ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি রবিউল এহসান রিপন, শামসুজ্জুহা।স্থানীয়ভাবে জানা যায়, নিঢালী বেওয়ার স্বামী পাকুরাম ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু তখন তার ভাগ্যে মেলেনি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। তারই চোখের সামনে স্থানীয় এক রাজাকার মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম লিখিয়ে গলায় ঝুলিয়েছে গৌরবের মালা। বুকটা ভেঙে যায় পাকুরামের। এতো ছোট বুকে পাহাড় সমান কষ্ঠ হয়তো সইতে পারেনি। তাই পাগল হয়ে যান। এক পর্যায়ে কষ্টগুলো বুকে ধারণ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। সর্বশেষ মৃত্যু তাকে সব যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেয়। মুক্তিযোদ্ধা পাকুরামের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাকুরাম মাত্র ২১ বছর বয়সে দেশকে স্বাধীন করতে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। যুদ্ধ করেন ৯ নং সেক্টরে মেজর জলিলের নেতৃত্বে। যুদ্ধ শেষে তার সঙ্গীরা সবাই মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হলেও নিজের নাম শেষ পর্যন্ত গেজেটে উঠাতে পারেননি পাকুরাম। অন্যদিকে তার এলাকার কিছু ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে নাম অন্তর্ভুক্ত করেন। বিভিন্ন জায়গায় অনেক ধরনা দিয়েও কোনো লাভ হয়নি পাকুরামের। শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি না পেয়ে পাগল হয়ে মারা যান তিনি। বিভিন্ন পত্রিকায় মুক্তিযোদ্ধা পাকুরামের পরিবারের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর অবশেষে স্ত্রী নিঢালী বেওয়া মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাওয়া শুরু করেছে। এখন তাকে ভিক্ষা করতে হচ্ছে না।নিঢালী বলেন, পত্রিকায় খবর প্রকাশের পর অবশেষে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা হয়েছে। তাই এখন ভিক্ষা করতে হচ্ছে না। কিন্তু থাকার ঘরটি কখন যে ভেঙে পড়ে সেজন্য দুচিন্তায় আছি। এখন এই ২টি গুরু বড় করে দুধ বিক্রি করে বাকি জীবনটা চালিয়ে নিবো।রবিউল এহ্সান রিপন/এসএস/পিআর
Advertisement