জাতীয়

নিজামীর রায়কে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা জোরদার

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর আপিল মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সুপ্রিমকোর্ট এলাকাসহ রাজধানীজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।রায়কে কেন্দ্র করে যাতে কেউ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড না ঘটাতে পারে সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।বুধবার সকাল থেকে সুপ্রিমকোর্টে প্রবেশের প্রতিটি গেটে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। আদালতের উদ্দেশ্যে আসা সবার ব্যাগ তল্লাশি করা হচ্ছে। সন্দেহভাজনদের তল্লাশি করতে ব্যবহার করা হচ্ছে মেটাল ডিটেক্টর।এর আগে বুধবার সকাল ৯টার দিকে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দেন। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আসামিপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন নিজামীর প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের এডিসি এসএম জাহাঙ্গির আলম সরকার জাগো নিউজকে বলেন, রায়কে ঘিরে রাজধানীতে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে অবনতি না ঘটে সেজন্য তিন স্থানেই বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। বিভিন্ন স্থানে লাগানো সিসি টিভি ক্যামেরাও মনিটরিং করা হচ্ছে। তল্লাশিও চালানো হচ্ছে। র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জাগো নিউজকে জানান, রায়কে কেন্দ্র করে যাতে কেউ নাশকতা সৃষ্টি করতে না পারে এজন্য সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকবে র‌্যাব। র‌্যাবের প্রতিটি ব্যাটালিয়নকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সারাদেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে প্রয়োজনীয় সংখ্যক র্যাব সদস্য মোতায়েন করা হবে।এ আপিলের শুনানি গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে চলে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত। পরে ৩০ নভেম্বর নিজামীর আপিলের যুক্তিতর্ক শুরু করে ২ ডিসেম্বর আসামিপক্ষ যুক্তিতর্ক পেশ শেষ করে। ট্রাইব্যুনালে নিজামীর বিরুদ্ধে প্রমাণিত আটটি অভিযোগে সাক্ষ্য-প্রমাণ বিষয়ে তিন কার্যদিবস যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে আসামিপক্ষ। এর বিপরীতে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।এর আগে আপিল বিভাগ এক আদেশে ৩০ নভেম্বর, ১ ও ২ ডিসেম্বর আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ধার্য করে দেন। রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ৭ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন। এরপর যুক্তিখণ্ডনের জন্য ৮ ডিসেম্বর দিন ধার্য করে দেয়া হয়। আপিল মামলাটির শুনানির শুরুতে গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ কার্যদিবস মামলার পেপার বুক উপস্থাপন করা হয়।মুক্তিযুদ্ধকালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড সীমাহীন অপরাধ বলে উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসিই এ অপরাধের একমাত্র সাজা। ফাঁসি ছাড়া এর অন্য কোনো বিকল্প সাজা নেই। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যে সব মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায় দিয়েছে তা যেন বহাল থাকে এর স্বপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন তিনি।নিজামীর বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং হত্যা-গণহত্যাসহ সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) মোট ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে ৮টি অর্থাৎ ১, ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৮ ও ১৬ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয় ট্রাইব্যুনালের রায়ে।প্রমাণিত চারটি অর্থাৎ সাঁথিয়া উপজেলার বাউশগাড়িসহ দু’টি গ্রামে প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে গণহত্যা ও প্রায় ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ (২ নম্বর অভিযোগ), করমজা গ্রামে ১০ জনকে গণহত্যা, একজনকে ধর্ষণসহ বাড়ি-ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ (৪ নম্বর অভিযোগ), ধুলাউড়ি গ্রামে ৫২ জনকে গণহত্যা (৬ নম্বর অভিযোগ) এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ও সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (১৬ নম্বর অভিযোগ) দায়ে নিজামীকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়।অন্য চারটি অর্থাৎ পাবনা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাওলানা কছিমুদ্দিন হত্যা (১ নম্বর অভিযোগ), মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে পাকিস্তানি সেনা, রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর ক্যাম্পে নিয়মিত যাতায়াত ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র (৩ নম্বর অভিযোগ), বৃশালিখা গ্রামের সোহরাব আলী হত্যা (৭ নম্বর অভিযোগ) এবং রুমী, বদি, জালালসহ সাত গেরিলা যোদ্ধা হত্যার প্ররোচনার (৮ নম্বর অভিযোগ) দায়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ৫ ও ৯ থেকে ১৫ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এসব অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন তিনি।জেইউ/এসকেডি/পিআর

Advertisement