জাতীয়

এক কেজি বোরো ধান চাষে প্রয়োজন ৬৫০ লিটার পানি

প্রতিকেজি বোরো ধান উৎপাদনে পানির প্রয়োজন ৫৫০-৬৫০ লিটার। অথচ দেশের নিয়ন্ত্রিত সেচ ব্যবস্থার কারণে অপচয় হচ্ছে পানি। বর্তমানে এক হাজার থেকে ১৬শ’ লিটার পানি দিয়ে বোরো ধান উৎপাদন করছেন কৃষকরা।

Advertisement

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) গবেষণায় উঠে এসেছে এ তথ্য। রোববার (১৬ জানুয়ারি) ওয়েবিনারে ‘উত্তর-পশ্চিম বাংলাদেশের ভূগর্ভস্থ পানির স্থায়িত্ব ও ধান উৎপাদন’ শীর্ষক এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশন, ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন কুইসল্যান্ড, এসিএআইআর ও অস্ট্রেলিয়ান এইডের সহযোগিতায় এই গবেষণা হয়।

গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, বিগত ১০ বছরে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বোরোর এলাকা বাড়েনি। তবে উন্নত জাতসহ অন্যান্য কারণে বোরোর ফলন বাড়ছে। এছাড়া বোরো ধানের উচ্চ ফলনশীল জাতের ব্যবহার ও ‘ক্রপিং প্যাটার্ন বেইজড’ ফসল চাষাবাদের মাধ্যমে জমির উৎপাদনশীল ও ফসলের পানি ব্যবহার দক্ষতা আরও বাড়ানো সম্ভব।

Advertisement

ওয়েবিনারে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বোরো ধানে পানির অপচয় নিয়ে যে বিভ্রান্তি সমাজে প্রচলিত ছিল ব্রি ও সহযোগী সংস্থাসমূহের এই গবেষণা ফলাফলের মাধ্যমে তার অবসান হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের উচিত এই ধরনের বিভ্রান্তি নিরসনে একযোগে গবেষণা পরিচালনা করা।

বিশেষজ্ঞ প্যানেলের আলোচনায় প্রফেসর ইমিরেটাস ড. এম এ সাত্তার মণ্ডল বলেন, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার জন্য বোরো ধানের আবাদই একমাত্র দায়ী নয়। শুষ্ক মৌসুমে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নদী-নালা, খাল-বিলে পানির প্রবাহ কম থাকায় বেজ ফ্লো হিসেবে ভূ-গর্ভস্থ পানির একটি অংশ নদীতে চলে যাচ্ছে। ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে বন্যার পানি প্রথমে ভূ-গর্ভস্থ পানির সেই খালি জায়গা পূরণ করার ফলে বন্যার তীব্রতা হ্রাস পাচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রাক্তন মহাপরিচালক ড. হামিদুর রহমান বলেন, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্থায়িত্ব ম্যানেজমেন্ট করতে হলে সমন্বিত উদ্যোগসহ ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। নদী-নালা, খাল-বিলে পানির সংরক্ষণের পরিমাণ ব্যবহার বাড়াতে পারলে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সাফল্যজনকভাবে ধানসহ অন্যান্য ফসল চাষাবাদ সম্ভব হবে।

সভাপতির বক্তব্যে ব্রি মহাপরিচালক ড. শাহজাহান কবীর বলেন, সারাদেশে বোরো ধান চাষে সেচের পানির ব্যবহারের ফলে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে নেতিবাচক প্রচারণা ঠিক নয়। শুধুমাত্র ঠাটা বরেন্দ্র অঞ্চলে কিছু এলাকায় এটি হতে পারে। ভূ-গর্ভস্থ একুয়াফায়ারগুলো পানির রিজার্ভার হিসেবে কাজ করে। সুতরাং এসব নেতিবাচক প্রচারণায় বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই।

Advertisement

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে জুম প্লাটফর্মে আরও যুক্ত ছিলেন- কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মো. বখতিয়ার, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান এ এফ এম হায়াতুল্লাহ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. বেনজীর আলম এবং বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক মো. আব্দুর রশীদ।

এনএইচ/জেডএইচ/জেআইএম