ধর্ম

অহেতুক ‘ধারণা’য় যেসব অশান্তি সৃষ্টি হয়

এক মুমিন অন্য মুমিনের ব্যাপারে খারাপ ধারণা করা পাপ। বরং পরস্পরের প্রতি ধারণা হবে ভালো ও উত্তম। তাই কোনো মুমিন ব্যক্তির ব্যাপারে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো সংবাদ শুনেই খারাপ বা মন্দ ধারণা করা যাবে না; বরং এটি থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ। কেননা কারো ব্যাপারে মন্দ ধারণায় ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে অনেক অশান্তির সৃষ্টি হয়। এ কারণেই মহান আল্লাহ বলেন-يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ ۖ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا ۚ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَّحِيمٌহে মুমিনগণ! তোমরা বহুবিধ অনুমান থেকে দূরে থাকো; কারণ অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ আর তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান করো না এবং একে অপরের পেছনে নিন্দা করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের মাংস খেতে চায়? বস্তুত তোমরা তো এটাকে ঘৃণাই মনে করো। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ তাওবাহ গ্রহণকারী, পরম দয়ালু।’ (সুরা হুজরাত : আয়াত ১২)

Advertisement

এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের অহেতুক কারো ব্যাপারে বেশি বেশি কু-ধারণা করা থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। কারণ বেশি বেশি ধারণায় সৃষ্টি হয় পাপ ও অশান্তি। আর তাহলো-১. অধিকাংশ ধারণাই পাপ;২. এতে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়;৩. সুসম্পর্ক বিনষ্ট হয়;৪. যার সম্পর্কে খারাপ ধারণা করা হয় তাকে নিয়ে গীবত ও নিন্দা করা হয়;৫. পরস্পরের মধ্যে শত্ত্ররুতা সৃষ্টি হয়;৬. সমাজে অশান্তি সৃষ্টি হয়।

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-إِيَّاكُمْ وَالظَّنَّ فَإِنَّ الظَّنَّ أَكْذَبُ الْحَدِيْثِ وَلاَ تَحَسَّسُوا وَلاَ تَجَسَّسُوا وَلاَ تَبَاغَضُوا وَلاَ تَدَابَرُوا وَكُونُوا عِبَادَ اللهِ إِخْوَانًا‘তোমরা ধারণা থেকে বেঁচে থাকো, কেননা ধারণা করা বড় মিথ্যা। অন্যের প্রতি কু-ধারণা পোষণ করো না এবং অন্যের দোষ-ত্রুটির খোঁজে লিপ্ত হয়ো না। তোমরা পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ করো না এবং পরস্পর সম্পর্ক ছিন্ন করো না বরং হে আল্লাহর বান্দাগণ! পরস্পর ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে জীবন-যাপন করো।’ (বুখারি, মুসলিম)

আবার কেউ কারো ব্যাপারে কোনো কথা প্রচার করলেই তাতে বিশ্বাস বা সাড়া দিয়ে নিজেরাও এ কাজে জড়ানো থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। এমনটি ঘটেছিল হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহুর ব্যাপারে। মুনাফিকরা তাঁর ব্যাপারে মিথ্যা রটনা করেছিল।মুনাফিকরা যখন খারাপ কথা প্রচার শুরু করলো তখন কিছু মুমিনও তা বিশ্বাস করে খারাপ ধারণা করেছিল। আল্লাহ তাআলা তাদের তিরস্কার করে বললেন-لَوْلَا إِذْ سَمِعْتُمُوهُ ظَنَّ الْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بِأَنفُسِهِمْ خَيْرًا وَقَالُوا هَذَا إِفْكٌ مُّبِينٌ‘তোমরা যখন একথা শুনলে, তখন ঈমানদার পুরুষ ও নারীগণ কেন নিজেদের লোক সম্পর্কে উত্তম ধারণা করনি এবং বলনি যে, এটা তো নির্জলা অপবাদ?’ (সুরা নুর : আয়াত ১২)

Advertisement

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, ‘ধারণা’ করা থেকে বিরত থাকা। অহেতুক ধরণার গুনাহ থেকে নিজেদের হেফাজত করা। ধরণা করার ক্ষতি ও অশান্তি থেকে মুক্ত থাকা। আর একান্তই যদি কেউ অনুমান করে অনেক কথা বলেন কিংবা মন্তব্য করেন তবে সঙ্গে সঙ্গেই এ কথা বলা-وَاللهُ اَعْلَمُউচ্চারণ : ‘ওয়াল্লাহু আঅলামু’অর্থ : আর আল্লাহ তাআলাই (বিষয়টি সম্পর্কে) বেশি (ভালো) জানেন।’

আল্লাহ তাআলার প্রিয় বান্দা এবং ইসলামের সঠিক জ্ঞানের অনেক অনুসারীই এসব ক্ষেত্রে বলে থাকেন- وَاللهُ اَعْلَمُ : ‘ওয়াল্লাহু আঅলামু’ অর্থাৎ আর আল্লাহ তাআলাই (বিষয়টি সম্পর্কে) বেশি (ভালো) জানেন।’

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অহেতুক ধরণা করা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। কোরআনের উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস

Advertisement