পঞ্চাশোর্ধ্ব রাশিদা বেগম। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে রোববার সকালেই ছুটে আসেন নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ ভোটকেন্দ্রে। অল্প সময় লাইনে দাঁড়িয়ে নির্বিঘ্নে ভোট দেন তিনি।
Advertisement
পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে কেন্দ্র থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় রাশিদা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, এবার নিয়ে তিনবার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট দিলাম। এর আগে ব্যালট পেপারে সিল মেরে ভোট দিয়েছি। এবারই প্রথম ইভিএম মেশিনের মাধ্যমে ভোট দিলাম।
তিনি বলেন, ইভিএমে ভোট দেওয়া খুবই সহজ। ভোট দিতে কোনো সমস্যা হয়নি। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরেছি। আশা করি আমার পছন্দের প্রার্থীরাই পাস করবেন। আগের পদ্ধতির থেকে এখনকার মেশিনের ভোটের পদ্ধতিই ভালো। ভোট দিতে কোনো ঝামেলা নেই।
রাশিদা বেগমের মতই ইভিএমে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ভোটাররা। ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে এবং ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট ১৯২টি কেন্দ্রে ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৭ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
Advertisement
এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৪ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫১৯ জন। আর তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৪ জন। সবকটি কেন্দ্রেই ইভিএমে ভোট হচ্ছে।
বয়স্কদের পাশাপাশি তরুণরাও ইভিএমে ভোট দিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ভোট দিতে আসা মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সানজিদা ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ইভিএমে খুব সহজেই ভোট দিয়েছি। কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি। ভোটকেন্দ্রে ভিড় কম। তাই কেন্দ্রে আসার সঙ্গে সঙ্গে ভোট দিতে পেরেছি।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আমার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছি। আশা করি মেয়র ও কাউন্সিলর পদে যাদের ভোট দিয়েছে সবাই পাস করবেন।
নারীদের পাশাপাশি পুরুষরাও বলছেন, ইভিএমে ভোট দেওয়া সহজ। ভোট দিতে আসা সুজন নামে একজন জাগো নিউজকে বলেন, এ নিয়ে দুবার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট দিলাম। এবারের প্রথম ইভিএমে ভোট দিয়েছি। আমার কাছে মনে হয়েছে ইভিএমে ভোট দেওয়া খুবই সহজ।
Advertisement
এদিকে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিচ্ছেন নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দারা। ভোট ঘিরে নারায়ণগঞ্জে এক ধরনের উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। প্রতিটি কেন্দ্রের সামনেই প্রার্থীদের সমর্থক ও ভোটারদের ভালো উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে।
এবারের নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি বিএনপি থেকে অব্যাহতি পাওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার।
ভোটে জিতলে নারায়ণগঞ্জের মেয়র হিসেবে হ্যাটট্রিক করবেন আইভী। ২০১১ সালে নির্দলীয় ভোটে এ কে এম শামীম ওসমানকে এক লাখের বেশি ভোটে হারিয়ে দেশের প্রথম নারী মেয়র হয়েছিলেন তিনি।
পরের বার ২০১৬ সালে দলীয় প্রতীকে আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে আইভী বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানকে পৌনে এক লাখ ভোটে হারিয়ে দেন। নারায়ণগঞ্জের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আগে আইভী আট বছর নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
এবারের নির্বাচনে এই হেভিওয়েট প্রার্থীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি থেকে অব্যাহতি পাওয়া হাতি প্রতীকের তৈমূর আলম খন্দকার। এবার নির্বাচনে নেমে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদ হারানো তৈমূর ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে পরে দলের নির্দেশে ভোট থেকে সরে দাঁড়ান।
বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় ২০১৮ সালে গ্রেফতার হওয়া এই বিএনপি নেতা এবার দলীয় নির্দেশ অমান্য করেই প্রথমবারের মতো নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নগরপিতা হওয়ার আশায় নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন।
সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং তৈমূর আলম খন্দকারের পাশাপাশি মেয়র পদে আরও চার প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এদিকে মেয়রের পাশাপাশি ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত করতেও ভোট দিচ্ছেন ভোটাররা। সিটি করপোরেশনের ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন এবং সংরক্ষিত ৯ ওয়ার্ডে ৩৪ জন নারী প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে রয়েছেন।
এমএএস/ইএ/এএসএম