তেলের দাম বাড়ার প্রতিবাদে কাজাখস্তানে বিক্ষোভ-সহিংসতা এবং সরকারপতনের জেরে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২৫ জনে। নিহতদের মধ্যে ১৯ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যও রয়েছেন। স্থানীয় সময় শনিবার (১৫ জানুয়ারি) দেশটির প্রোসিকিউটর কার্যালয়ের এক প্রতিনিধি সেরিক শালাবায়েভ সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।
Advertisement
তিনি এটিকে ‘সন্ত্রাসী’ হামলা উল্লেখ করে বলেন, নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে নিহত হন ‘সশস্ত্র ডাকাতরা’। তিনি আরও বলেন, দুর্ভাগ্যজনক যে এতে বেসামরিক লোকও নিহত হয়েছেন।
এর আগে দেশটির কর্তৃপক্ষ জানায়, সহিংসতায় ৫০ জনের কম মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ২৬ জন ‘সন্ত্রাসী’ এবং ১৮ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। গত সপ্তাহে একটি স্থানীয় গণমাধ্যম থেকে জানা যায়, ১৬৪ জন নিহত হয়েছেন সহিংসতার ঘটনায়।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আসেল আর্তাকশিনোভা জানান, সহিংসতার পর দুই হাজার ছয়শ মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে ৬৭ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
Advertisement
কাজাখস্তানের কর্তৃপক্ষ বলছে, বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা বহিরাগত ‘সন্ত্রাসী’। তারা বৃহত্তম শহর আলমাতিতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ‘সন্ত্রাসী’ কর্মকাণ্ড চালায়।
তেলের দাম বাড়ার প্রতিবাদে কাজাখস্তানের সবচেয়ে বড় শহরে ৬ জানুয়ারি নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সেখানে যান রাশিয়ার প্যারাট্রুপারসরা।
কাজাখ প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট টোকায়েভ এর আগে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে, ‘বিদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সন্ত্রাসীদের’ নেতৃত্বে চলা বিক্ষোভ থামাতে তিনি সিএসটিও-ভুক্ত (কালেক্টিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশন) দেশগুলোর কাছে সহায়তা চান। এর পরই প্রতিবেশী দেশে সৈন্য পাঠানোর পদক্ষেপ নেয় রাশিয়া। সাবেক সোভিয়েতভুক্ত দেশ রাশিয়া, আর্মেনিয়া, বেলারুশ, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান এবং তাজিকিস্তানের মধ্যকার একটি সামরিক চুক্তি হচ্ছে সিএসটিও।
সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় দেশটিতে সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভের জেরে কাজাখস্তানে সরকারের পতন ঘটে গত বুধবার ( ৫ জানুয়ারি)। প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট টোকায়েভ দেশটির প্রধানমন্ত্রীসহ পুরো মন্ত্রিসভাকে বরখাস্ত করেন। একই সঙ্গে দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়।
Advertisement
সহিংস আন্দোলনের মধ্যে আলমাতি শহরের রাস্তায় পুড়িয়ে দেওয়া হয় বহু যানবাহন, আগুন দেওয়া হয় সরকারি ভবনগুলোতে। দেশটির প্রেসিডেন্টের আবাসিক ভবনের আশপাশের এলাকাতেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় বুলেটের খোসা। ঘটে লুটপাটের ঘটনাও। দেশটির স্বাধীনতার ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বড় সহিংসতার ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে।
সূত্র: আল-জাজিরা
এসএনআর/এএসএম