সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। চলতি সপ্তাহে চালু হতে পারে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন সুবিধা। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ উচ্চ পর্যায়ে একাধিক প্রতিনিধি দল কয়েক দফায় স্থলবন্দর পরিদর্শন করেছেন। এখন শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অপেক্ষা। উদ্বোধনের ১৮ বছর পর সংশ্লিষ্টদের আশা, চলতি সপ্তাহে এই শুল্কবন্দর দিয়ে শুরু হবে মানুষ পারাপার। ইমিগ্রেশন সুবিধা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।জেলা প্রশাসন ও বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর সূত্র জানায়, ত্রিদেশীয় ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে ১৯৯৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের পথচলা শুরু। এরপর সীমিতভাবে শুরু হয় নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে পণ্য আমদানি-রফতানি। ২০০৪ সালের ২২ মে স্থলবন্দরের ওয়ারহাউজের উদ্বোধন এবং ২০১১ সালের ২২ জানুয়ারি ভারতের তৎকালীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখ্যার্জী ও বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ত্রিদেশীয় এই শুল্ক স্টেশনের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের সময় উভয় দেশের শীর্ষ নেতারা পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে এই বন্দরে ইমিগ্রেশন সুবিধার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর থেকে শুরু হয় বাংলাদেশ, ভারত এবং নেপালের মধ্যে ত্রিদেশীয় পণ্য আনা নেওয়া। অন্যদিকে, শুরু হয় ইমিগ্রেশন সুবিধার জন্য অপেক্ষার পালা। ইতিমধ্যে ইমিগ্রেশন বিভাগের পুলিশ কর্মকর্তা নিয়োগসহ সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। দীর্ঘদিন পর হলেও যে কোনো মুহূর্তে ইমিগ্রেশন সুবিধার খবরে বেশ খুশি বন্দর সংশ্লিষ্টরা।জানা গেছে, ভারত, নেপাল এবং ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্যিকভাবে সুবিধাজনক স্থানে এই বন্দর অবস্থিত। এখান থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে ভারতের শিলিগুড়ি, ১০ কিলোমিটার দূরে জলপাইগুড়ি, ৫৮ কিলোমিটার দার্জিলিং, ৬১ কিলোমিটার নেপালের মিচি শহর এবং ৬৮ কিলোমিটার দূরে ভুটানের ফুয়েন্টসলিং শহর। সঙ্গত কারণে এই বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রফতানির পাশাপাশি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট চালু হলে উত্তরাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটবে এবং দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশে ব্যাপক অবদান রাখবে। পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় বাড়বে বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।বাংলাবান্ধা ইউপি চেয়ারম্যান ও পঞ্চগড় চেম্বার নেতা কুদরত-ই-খোদা মিলন বলেন, বেশ কিছুদিন হলো বাংলাবান্ধা স্থল বন্দরে ইমিগ্রেশন সুবিধা চালুর জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। উভয় দেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা কয়েক দফায় বন্দর পরিদর্শন করেছেন। শুনেছি চলতি সপ্তাহে বাংলাবান্ধা দিয়ে মানুষ পারাপার শুরু হবে। এখানে ইমিগ্রেশন সুবিধা চালু হলে স্থানীয় উন্নয়নের পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিক চেহারা পাল্টে যাবে।বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মো. নাসিমুল হাসান নাসিম বলেন, ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য আমাদের প্রায় ভারতে যেতে হয়। এজন্য প্রায় ১২০ কিলোমিটার ঘুড়ে বুড়িমারি-চেংরাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত যেতে হয়। এতে অধিক সময় নষ্ট হয়। পাশাপাশি আমরা আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হই। এই বন্দর দিয়ে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট চালু হলে আমাদের বেশ সুবিধা হবে।পঞ্চগড় আমদানি-রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী হাসান খান বাবলা বলেন, নানা কারণে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দেশের অন্য স্থলবন্দরের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি আঞ্চলিক ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে এই শুল্ক স্টেশন। আমাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত ইমিগ্রশন সুবিধা চালু এখন সময়ের ব্যপার মাত্র। এখানে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট চালু হলে উত্তরাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটবে এবং দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশে অবদান রাখবে এই স্থলবন্দর। এতে করে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় বাড়বে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট চালুর জন্য উভয় দেশের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন দফতরে প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ হয়েছে। এখন শুধু উদ্বোধনের পালা। গত ডিসেম্বরের মধ্যে বন্দরটিতে ইমিগ্রেশন সুবিধা চালুর কথা ছিল। কিন্তু নানা কারণে হয়নি। তবে শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে এই বন্দর দিয়ে মানুষ পারাপার শুরু হবে।সফিকুল আলম/এআরএ/আরআইপি
Advertisement