ড. মোস্তাক আহমেদ গালিব, গণচীন
Advertisement
চীনের সঙ্গে ঠিক কবে যে আমার পরিচয় তা হলফ করে বলা মুশকিল। আমাদের ছেলেবেলাজুড়ে ছিল মজার মজার সব চীনা বই। চীনের বিদেশি ভাষা প্রকাশনালয়ের ছাপা শিশুতোষ বইগুলো তখন ঢাকায় দেদারসে পাওয়া যেত। চাচা চৌধুরী, নন্টে-ফন্টের সঙ্গে ওসব বইয়েরও বেশ সমঝদার ছিলাম। মোটা চীনে কাগজের বই, ভেতরে সুন্দর গন্ধ আর পেল্লায় পেল্লায় সব ছবি। চীনের শিশুরা কাপড়ের জুতো পায়ে দিয়ে এটা করে ওটা করে, সবার গালে কেমন যেন মায়াময় গোলাপি গোলাপি আভা।
দেখতাম আর ভাবতাম; আহা, দেবশিশু বুঝি একেই বলে! সেই দেবশিশুদের দেশ চীন, আমাদের খুবই কাছের বন্ধুরাষ্ট্র। দু’দেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কটি যদিও ১৯৭৬ সালের জানুয়ারি মাসে স্থাপিত তথাপি চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কয়েকদিনের বা কয়েক যুগের কিংবা কয়েক শতাব্দীরও নয়। এই সম্পর্ক, এই বন্ধুত্ব বহু শতাব্দী প্রাচীন। হাজার বছরের আস্থার ইটে তৈরি এই সম্পর্কের মজবুত ‘গ্রেট ওয়াল’।
চীনের গ্রেট ওয়াল/ছবি সংগৃহীত
Advertisement
খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে চীনের মহাপরাক্রমশালী হান সম্রাট ঊ এর আমলে তার রাজদূত চাং ছিয়েন সর্বপ্রথম সিন্ধু অববাহিকার ভারতীয় সভ্যতার বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করেন বলে চীনা ঐতিহাসিক সি মা ছিয়েনের বিবরণীতে জানা যায়। রাজদূত চাং ছিয়েন ব্যাকট্রিয়া অঞ্চলের দক্ষিণ পূর্বে ‘শেন তু’ নামক একটি উর্বর মহাজনপদের বিষয়ে উল্লেখ করেন এবং পরবর্তীতে চীনের সিছোয়ান প্রদেশ হয়ে সেই ‘শেন তু’ এর ‘মো জিয়ে থোও’ নামক মহাজনপদে যাওয়ার জন্য বহুবার চেষ্টা করেন।
একটু খেয়াল করলেই বোঝা যাবে ‘শেন তু’ এবং ‘মো জিয়ে থো’ বলতে প্রাচীন সিন্ধু (শেন তু) সভ্যতার অন্তর্গত মগধকেই (মো জিয়ে থোও) বোঝানো হয়েছে।
এই চাং ছিয়েনকে প্রাচীন রেশম পথের উদ্ভাবক হিসেবে এখনও চীনে পরম শ্রদ্ধভরে স্মরণ করা হয়। বৌদ্ধ ধর্মের আকর গ্রন্থ মহাবস্তু মতে প্রাচীন ভারতে মগধসহ এ রকম আরও ষোলটি মহাজনপদের উল্লেখ পাওয়া যায়। তাহলে প্রশ্ন জাগতেই পারে এতো জনপদ থাকার পর মহান হান সম্রাট ঊ সেই খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকেই কেন আগ্রহী ছিলেন মগধের বিষয়ে (তখনকার দিনে মগধ বলতে অঙ্গ বা বর্তমান বাংলাদেশের একটা বড় অংশকেও বোঝানো হতো), কেন সিছুয়ানের পাহাড় ডিঙিয়ে তাকে খুঁজতে হবে মগধের পথ?
তবে কি অন্য অনেকের মতো সুজলা, সুফলা, শস্য, শ্যামলা, অপরূপ এই ভূমির গুণমুগ্ধ ছিলেন মহাপরাক্রমশালী হান সম্রাটও? উত্তর সম্ভবত হারিয়ে গেছে মহাকালের গর্ভে। তবে হান সম্রাট ঊ ও তার রাজদূত চাং ছিয়েন যে কাজটি শুরু করেছিলেন সেটিকে আরও এগিয়ে নেন পরবর্তীকালের বৌদ্ধ সাধক ফা শিয়েন (তিনি আমাদের দেশে ফা হিয়েন নামে জনপ্রিয়), গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের আমলে তিনি রাজধানী পাটালিপুত্রে আসেন এবং একাদিক্রমে দশ বছর এখানে অবস্থান করেন।
Advertisement
ফা হিয়েন/ছবি সংগৃহীত
পরবর্তীতে থাং সম্রাটের আমলে ফা শিয়েনের পথ ধরেই এদেশে আসেন সুবিখ্যাত বৌদ্ধ সাধক সুয়েন চাং (ইনি আমাদের দেশে হিউয়েন সাং নামে পরিচিত)। সুয়েন চাং এর সরাসরি গুরু ছিলেন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মহাস্থবির আচার্য শীলভদ্র। চিরকুমার শীলভদ্র বাঙালি (সুবিখ্যাত ঐতিহাসিক শ্রী কৈলাসচন্দ্র সিংহের মতে শীলভদ্রের আদি নিবাস ছিল কুমিল্লার চান্দিনার কৈলাইন গ্রামে। কৈলাসচন্দ্রের বর্ণনা মতে সুয়েন চাং স্বীয় গুরুর জন্মভিটা পরিদর্শন করতে কুমিল্লায় এসেছিলেন) ছিলেন বিধায় সুয়েন চাংকে একটি বাংলা নামও দেন।
নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়/ছবি সংগৃহীত
সুয়েন চাং-এর বাংলা (আদপে সংস্কৃত) নাম ছিল মোক্ষদেব। শুধু যে চীনারাই এখানে আসতো তা নয়, আমরাও চীনে যেতাম। ফা শিয়েন বুদ্ধভদ্র নামক এক শ্রমণকে তার সঙ্গে করে চীনে নিয়ে গিয়েছিলেন। কালে বুদ্ধভদ্র চীনাভাষায় অসাধারণ ব্যুৎপত্তি লাভ করেন ও অবতংশ সূত্রের চীনা অনুবাদ করেন। আমরা অনেকেই হয়ত জানি আজ থেকে প্রায় এক হাজার বছর পূর্বে বিক্রমপুরের অতীশ দীপঙ্কর দুর্গম হিমালয় পেরিয়ে পদব্রজে চীনে পদার্পণ করেছিলেন।
তিনি সেখানে গিয়ে বুদ্ধবাণী প্রচারের ফাঁকে ফাঁকে চীনের মানুষের সঙ্গে বাংলার সংস্কৃতির পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। অতীশ দীপঙ্কর ১০৫৪ সালে তিব্বতে মারা যান। বন্ধুত্বের নিদর্শন স্বরূপ চীন ১৯৭৮ সালে তার দেহভষ্ম ফিরিয়ে দেয় বাংলাদেশকে।
অতীশ দীপঙ্কর/ছবি সংগৃহীত
মধ্যযুগে বাংলার স্বাধীন সুলতানগনের আমলে দু’দেশের যোগাযোগ অনন্য মাত্রা লাভ করে। ১৪০৪-৩৯ সাল পর্যন্ত ৩৪ বছরে ইলিয়াসশাহী সুলতানদের মোট ১৪টি মিশন চীনে গমন করে এবং চীন থেকে সমুদ্রপথে ৪টি বৃহৎ মিশন মুলুক-ই-বাংলায় আসে (চীনের এ মিশনগুলোই অ্যাডমিরাল চেং হ’র জাহাজ যাত্রা নামে ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছে, চারটি মিশনের ভেতর অ্যাডমিরাল চেং হ কমপক্ষে দুটি মিশনে নিজে নেতৃত্ব দেন)।
এ সময়ই প্রথম বাংলার চীনা নামকরণ ‘পাং গে লা’ করা হয়, যা পরবর্তীকালে পরিবর্তিত হয়ে বর্তমান ‘মুং চিয়া লা’ নাম ধারন করে। এ সময় চীনে সর্বশেষ হান রাজবংশ মিং সাম্রাজ্যের শাসন চলছিল। মুলুক-ই-বাঙ্গালা থেকে মিং সম্রাট ইয়ুঙ্গ ল্য-কে বন্ধুত্বের নিদর্শন স্বরূপ সোনার পাতে চিঠি লিখে পাঠানো হয় এবং আফ্রিকা থেকে আনা জিরাফ উপহার পাঠানো হয়। মিং সম্রাট ইয়ুঙ্গ ল্য-ও বিভিন্ন দলিল দস্তাবেজে মুলুক-ই-বাঙ্গালার কথা দু’হাত ভরে লিখে রেখে গেছেন।
মিং রাজবংশীয় দরবারি ইতিহাস মিং শী লু- এর ১৪তম অংশে লিখিত ইতিহাস থেকে জানা যায় ইতোপূর্বে বেশ কয়েকবার মুলুক-ই- বাঙ্গালায় অতর্কিত আক্রমণকারী ও শান্তি বিনষ্টকারী পার্শ্ববর্তী জৌনপুরের সুলতান ই পু লা জিনকে (ইব্রাহীম শার্কী) রাজকীয় দূত মারফৎ মূল্যবান উপহার পাঠিয়ে খোদ সম্রাট ইয়ুঙ্গ ল্য অনুরোধ করেন প্রতিবেশী অর্থাৎ মুলুক-ই-বাঙ্গালার সঙ্গে সুশীল আচরণ করতে। প্রবল প্রতাপ সম্রাট ইয়ুঙ্গ ল্য আজ বেঁচে নেই, কিন্ত প্রতিবেশীর বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়ানোর যে দৃষ্টান্ত তিনি রেখে গেছেন ছয়শ বছর পেরিয়েও গণপ্রজাতন্ত্রী চীন তা থেকে বিচ্যুত হয়নি। বাংলাদেশের সঙ্গে অটুট রয়েছে চীনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।
গণপ্রজাতন্ত্রী চীন/ছবি সংগৃহীত
স্বাধীন বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকেই দ্রুতগতিতে এগিয়েছে বাংলাদেশ চীন মৈত্রী। ভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শ এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থার ভিন্নতা সত্ত্বেও এই দুই দেশের মধ্যকার চমৎকার কূটনৈতিক সম্পর্ক সত্যিকার অর্থেই একটি রোল মডেল। এ দু’দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক ‘উইন উইন’ সম্পর্কের একটি আদর্শ উদাহরণ হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশি রাজনীতির চক্রনেমিতে ঢাকায় যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, বেইজিং এর সঙ্গে সম্পর্ক সব সময়ই দৃঢ় ও মজবুত থেকেছে।
দু’দেশের বন্ধুত্বের নিদর্শন হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেই আশির দশক থেকে একের পর এক নির্মিত বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুগুলো। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও দুই দেশ পরস্পরকে সমর্থন করেছে। ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক ও সামরিক সম্পর্কের পাশাপাশি চীন এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার ও উন্নয়ন সহযোগী।
এটি এখন আর অজানা নয় যে, ভারত মহাসাগরের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁকে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক, ভূ-কৌশলগত ও ভূ-অর্থনৈতিক অবস্থান আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে পৌনে দুশো মিলিয়ন জনসংখ্যার বাংলাদেশকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশে পরিণত করেছে। এমনকি বৈশ্বিক কৌশলগত সহযোগিতার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের অবস্থান বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ থেকেই সার্ক এর শেষ এবং আসিয়ানের শুরু বিধায় বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার সংযোগ-সেতু হিসেবে বিবেচিত।
সে হিসাবে পৌনে দুশো মিলিয়ন জনসংখ্যার বাংলাদেশই বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাজারে প্রবেশের চাবি। এসব কারণেই চীনের ‘এক অঞ্চল এক পথ’ (বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ) উদ্যোগের অতি গুরুত্বপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ। এমনকি পৃথিবীর প্রায় ১৫০টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত গোটা উদ্যোগে থাকা সর্বমোট ছয়টি অর্থনৈতিক করিডোরের একটি, বাংলাদেশ-ভারত-মিয়ানমার-চীন অর্থনৈতিক করিডোরটিও সরাসরি গেছে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে।
এক অঞ্চল এক পথ/ছবি সংগৃহীত
২০১৬ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তার সফরকালে দুই দেশের মধ্যে ২৭টি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়ে। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং/ছবি সংগৃহীত
এর মধ্যে ১৫টি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি হয়েছে দুই দেশের সরকার পর্যায়ে (জিটুজি)। বাকি ১২টি ছিল ঋণ চুক্তি ও সমঝোতা চুক্তি। চুক্তি অনুযায়ী বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ বর্তমানে চলমান রয়েছে, কিছু প্রকল্প শুরু হওয়ার অপেক্ষায় আছে আর কিছু প্রকল্পের কারিগরি ও অর্থনৈতিক দিকগুলো আবার বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার সহযোগিতার সম্পর্কটি আসলে প্রতিদিনই পরিণত হচ্ছে, পাচ্ছে বহুমাত্রিকতার ছোঁয়া। আশির দশকে যে সম্পর্কটি কেবলই ছিল কিছু প্রকল্প সহযোগিতাকেন্দ্রিক সেটি এখন ডালপালা মেলেছে আরও অনেক বিভাগে। সরকারি বিনিয়োগের পাশাপাশি একটি বড় সংখ্যক বেসরকারি চীনা বিনিয়োগকারীও এদেশে আছেন। এটা একটা ভালো দিক, কেননা ‘এক অঞ্চল এক পথ’ উদ্যোগের পাঁচটি মৌলিক উদ্দেশ্য রয়েছে–সেখানে পঞ্চম ও সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো ‘পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধিকরণ’।
কেবলমাত্র সরকারি উদ্যোগকে ভিত্তি করে দু’দেশের মানুষে মানুষে পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করা কঠিন এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে অসম্ভবও। এক্ষেত্রে উভয় দেশের বেসরকারি খাতকেই সামনে এগিয়ে আসতে হবে। বেসরকারি চীনা বিনিয়োগকারীরা সেই পথে যাত্রাটি শুরুও করেছেন। বাংলাদেশ সরকারও এক্ষেত্রে সাগ্রহে এগিয়ে এসেছে, সরকার সারাদেশে একশোটি ইপিজেড নির্মাণের পাশাপাশি চট্টগ্রামে একটি চীনা শিল্পাঞ্চলও নির্মাণ করছে। নিঃসন্দেহে এই পদক্ষেপগুলো সার্বিকভাবে দেশের বেকার সমস্যা সমাধানের সঙ্গে সঙ্গে পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
এরই মধ্যে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের ভাষা শিক্ষাকেন্দ্রগুলোতে বেড়ে গেছে চীনা ভাষা শিখতে আসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা। চাহিদা বেশি থাকায় সারাদেশেই বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে এমন নানা ভাষা শিক্ষা কেন্দ্র। আমার ছেলেবেলার দেবশিশুদের দেশ এখন সাধারণ মানুষের কাছে মোটেই আর কোনও অচেনা দেবশিশুদের দেশ নয়।
বলা হয়ে থাকে বিপদেই বন্ধুর পরিচয়। সম্পর্কের বহুমাত্রিকতার আরেকটি উদাহরণ হলো দু’দেশের মধ্যকার কোভিড-১৯ প্রটোকলের আওতাধীন সহযোগিতা। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাথমিক টিকা প্রয়োগ পরিকল্পনায় বলা হয়েছিল, দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা কার্যক্রমের আওতায় আনা হবে। এর অর্থ হলো সাড়ে ১৩ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনা। তাদের সবাইকে দুই ডোজ করে টিকা দিতে ২৭ কোটি ডোজ দরকার ছিল।
একটা পর্যায়ে কোভিড-১৯ সংক্রমণ অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়ে টিকা কূটনীতির শিকার হয়ে প্রায় কোণঠাসা অবস্থায় পড়ে আমাদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ঠিক সেই সময়ই বাংলাদেশের সাহায্যে এগিয়ে আসে চীন। চীনের সিনোফার্মের টিকা এখন পর্যন্ত আমাদের দেশের কোভিড-১৯ প্রতিরোধ টিকার প্রধান উৎস হয়ে আছে। চীনের পক্ষ থেকে এটি নিঃসন্দেহে একটি সাধুবাদ পাওয়ার মতো উদ্যোগ। আমরা জানি করোনা মহামারি পরবর্তী চীনে ‘হেলথ সিল্ক রুট’ প্রকল্পের আওতায় স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিশাল দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে।
চীনের বাজার অর্থনীতি ও বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা/ছবি সংগৃহীত
যার ফলে বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নের ক্ষেত্রে এখানে সহযোগিতার একটি ভালো সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও সার্বিক দারিদ্র্য বিমোচনেও চীনের অভিজ্ঞতাও কিন্তু কাজে লাগাতে পারে বাংলাদেশ। করোনা পরবর্তী সময়ে চীন সরকারের নেওয়া অর্থনৈতিক প্যাকেজগুলোর কারণেই বৃহৎ অর্থনীতিগুলোর ভেতর এখনও সতেজ রয়েছে কেবল চীনের অর্থনীতি। বাংলাদেশ নিজেও এই কাজটি এখন পর্যন্ত বেশ সফলতার সঙ্গেই করতে পেরেছে।
এখানে একটা কথা কিন্ত না বললেই নয় যে করোনা মহামারির মধ্যেও চীন কিন্ত সফলভাবেই দারিদ্র্যতাকে ঝেটিয়ে বিদায় করতে পেরেছে। ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দরিদ্রমুক্ত হয়েছে চীন। শত কোটির বেশি জনসংখ্যার দেশ চীনে কাজটি কিন্তু মোটেই সহজ ছিল না। ১৯৭৮ সালে কমরেড দেং শিয়াও পিং এর ‘খোলা দরজা নীতির’ ফসল হিসাবে চীনে দারিদ্র্য বিমোচনের গতি বাড়তে থাকে।
দারিদ্র্য বিমোচনে চায়না কৌশল কাজে লাগাতে পারে বাংলাদেশ/ছবি সংগৃহীত
এরই ধারাবাহিকতায় একটি বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পেলেও চীনের জন্য শতভাগ দরিদ্র বিমোচন ছিল কঠিন, কেননা এতো কিছুর পরেও কিন্ত কিছু লোক দারিদ্র্যসীমার নিচেই থেকে যাচ্ছিল। পরবর্তীতে চীন সরকার ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ পাঁচশালা পরিকল্পনায় গ্রামভিত্তিক উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষা করে টেকসই উন্নয়নের নীতিমালা প্রণয়ন করে। এই পরিকল্পনাটিকেই বলা হয়ে থাকে প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং-এর ‘গ্রামাঞ্চল পুনরুজ্জীবিতকরণ’ কর্মপরিকল্পনা।
গ্রামাঞ্চল পুনরুজ্জীবিতকরণ কর্মপরিকল্পনার আলোকে সরকার হাতে নেয় ‘টার্গেটেড পোভার্টি এলিভিয়েশন’ প্রকল্প। এই প্রকল্পের মূলকথা হলো দারিদ্র্য দূরীকরণে নানাবিধ প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও দেখা গেছে কিছু লোক এর সুফল ভোগ করা থেকে বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছে। বঞ্চিত এই জনগোষ্ঠীর জন্য আসলেই কোথাও তেমন কোনও পরিকল্পনা নেওয়া হয় না, আবার কখনও কখনও ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলা হয় কিছু লোকের নিয়তিই হয়তো দরিদ্র অবস্থায় থাকা।
ফলে কিছু লোক উপায়ন্তর না পেয়ে, সারাজীবন দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রেই ঘুরপাক খেতে থাকেন। প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং সরকার ভাঙতে চাইল দারিদ্র্যের এই দুষ্টচক্র। তারা সারা চীনজুড়ে এমন ৮৩২টি কাউন্টি (ধরা যাক আমাদের উপজেলা) চিহ্নিত করলো যেখানে ইতোপূর্বে নেওয়া সকল দারিদ্র্য দূরীকরণ প্রকল্পের পরেও দরিদ্রের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাননি সাধারণ মানুষ। দ্রুততার সঙ্গে মেধাবী সরকারি কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রেষণে পাঠানো হলো এসব অঞ্চলে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বিধায় আমিও নিজেও কিছু সময় সেখানে গিয়ে হাতে কলমে কাজ করেছি, কাছে থেকে দেখেছি সে বিশাল কর্মযজ্ঞ। প্রতিটি গ্রামের ‘টার্গেটেড পোভার্টি এলিভিয়েশন’ প্রকল্প কর্মকর্তার দফতরে টানানো থাকে সেই গ্রামের সকল দরিদ্র পরিবারের খুঁটিনাটি তথ্য। সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে পরিবারভিত্তিক পরিকল্পনা নেওয়া ও বাস্তবায়ন করা হয়।
একটা সময় পরিবারটি দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে বের হয়ে এলেও প্রকল্প কর্মকর্তার কাজ শেষ হয় না। কারণ পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে চীনারা দেখেছেন প্রথমবার দারিদ্র্যসীমা পেরুনো এরা অনেকটাই দুর্বল শিশুর মতো, কিছুদিন ঠিকঠাকভাবে খেয়াল না রাখলে এরা অনেকেই হয়তো নানাবিধ কারণে আবারও দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যেতে পারেন।
তাই প্রকল্প কর্মকর্তা সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখেন ও কেস টু কেস পদক্ষেপ নিয়ে টেকসই দারিদ্র্য বিমোচন নিশ্চিত করেন, যার ফলে সরকার নিশ্চিত হতে পারে দারিদ্র্যসীমা পেরুনো মানুষটি সহসা আর দারিদ্র্যসীমার নিচে নামবেন না। দারিদ্র্য বিমোচনে চীনের যে মহাসাফল্যের কথা বলে হয়ে থাকে, সে সাফল্যের পেছনে আসলে ক্যাটালিস্ট হিসেবে কাজ করেছে এই ‘গ্রামাঞ্চল পুনরুজ্জীবিতকরণ’ কর্মপরিকল্পনা।
বাংলাদেশসহ বেশ কিছু উন্নয়নশীল দেশ যদিও দারিদ্র্য বিমোচনে সাফল্যের দাবি করে থাকে, কিন্ত প্রবল পশ্চিমা নীতির ওপর দণ্ডায়মান বাস্তবতাবর্জিত এই দারিদ্র্য বিমোচন পদ্ধতি টেকসই নয় বিধায় ঘূর্ণিঝড়, বন্যাসহ বড় যে কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর দেখা যায় একটা ব্যাপক সংখ্যক জনগোষ্ঠী হুটহাট আবারও দারিদ্র্যরেখার নিচে চলে যায়।
ইদানীং আমাদের অনেক প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদই বিভিন্ন গণযোগাযোগ মাধ্যমে করোনা পরবর্তী এ সমস্যাটির দিকে বারবার আলোকপাত করেছেন। আমি মনে করি ‘এক অঞ্চল এক পথ’ উদ্যোগের ‘পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধিকরণ’ নীতির আলোকে চীনের পুনরুজ্জীবিত গ্রাম সরকারগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের দারিদ্র্যপীড়িত গ্রামগুলোর যোগাযোগ বৃদ্ধি করে এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণের একটা সুযোগ খোঁজা গেলে মন্দ হয় না।
বিশেষত জলবায়ু পরিবর্তনের বড় শিকার বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের গ্রামগুলো কিভাবে চীন বাংলাদেশ বন্ধুত্বের নিদর্শন পদ্মা সেতু নির্মাণের সর্বোচ্চ সুফল ঘরে তুলতে পারে সে বিষয়ে চীনের ‘সান নং’ (তিন গ্রাম নীতি, কৃষি-গ্রাম-কৃষক) নীতির সফল প্রয়োগের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। অনেকেই বলে থাকেন চীনের তৈরি পদ্মা সেতু জাগিয়ে তুলবে দেশের পিছিয়েপড়া ২১ জেলার মানুষকে। কিন্তু এই বৃহৎ কর্মযজ্ঞটি আসলে কিভাবে সাধিত হতে পারে?
জলবায়ু পরিবর্তন এবং বাংলাদেশের কৃষি/ছবি সংগৃহীত
সেক্ষেত্রে অবশ্যই চীনের ‘তিন গ্রাম’ নীতির আলোকে গ্রামীণ উৎপাদন, গ্রামীণ উৎপাদক ও গ্রামাঞ্চলভিত্তিক বিশেষ পরিকল্পনা বিষয়ে নজর দেওয়া যেতে পারে। চীনা অভিজ্ঞতার আলোকেই হয়তো সমাধান সম্ভব বাংলাদেশের এই সমস্যার। পদ্মা সেতুর কথা যখন এলোই, তখন চীনকে একটা ধন্যবাদ না দিলে বড় অন্যায় হবে।
সেতু নিয়ে বহু টালবাহানা করে অনেক দিন পার করে, প্রকল্প ব্যয় কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়ে বিশ্বব্যাংক যখন ভালোমানুষির মুখোশ ঝেড়ে ফেলে দিয়ে প্রকল্পটিকে গলা টিপে মেরে ফেলতে উদ্যত তখন কিন্ত চীনই বাড়িয়ে দিয়েছিল বন্ধুত্বের হাত।
চীন: বন্ধুত্বের চিন্ময় এক উদাহরণ/ছবি সংগৃহীত
চীনা প্রকৌশলীরা করোনা মহামারির সময়ও লালফৌজের মতো দাঁতে দাঁত চেপে পড়ে থেকে প্রকল্পটিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, বাংলাদেশের স্বপ্নের প্রকল্পটি যেন সঠিক সময়ে সমাপ্ত হয়।
জলবায়ুর কথা প্রসঙ্গে বলি, বাংলাদেশের জন্য এটি কিন্ত একটি বড় হুমকি। আবার এই হুমকি মোকাবিলায় বিদেশি সহযোগিতা প্রাপ্তির জন্য বাংলাদেশকে দ্রুত কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করার পশ্চিমা বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। একটি জনবহুল উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জেরও। উদাহরণ স্বরূপ ধরা যাক, বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা।
এমনিতেই বাংলাদেশে প্রাকৃতিক উৎস থেকে প্রাপ্ত জ্বালানি অপ্রতুল, তার ওপর বিগত কয়েক দশকে পশ্চিমা জ্বালানি কোম্পানির খামখেয়ালীপনা, অদক্ষতা ও অপচয়ের দরুন বিপুল পরিমাণ জ্বালানি স্রেফ নষ্ট হয়ে গিয়ে বাংলাদেশ এখন কার্যত বিপদে। উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ অত্যাবশ্যক, আবার বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য চাই জ্বালানি-যে জ্বালানি আবার যেন তেন হলে চলবে না, হওয়া চাই পরিবেশবান্ধব।
আমাদের দেশটি মোটের ওপর সমতল ভূমি বিধায় এখানে জলবিদ্যুতের সম্ভাবনা অপ্রতুল আবার জ্বালানি পুড়িয়ে যেনতেনভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে কার্বন দূষণের খাঁড়াও থাকছে ঠিক মাথার ওপর, এই শাঁখের করাতের হাত থেকে বাঁচতে নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক প্রকল্পগুলো একটি ভালো পদক্ষেপ হতে পারে। আমরা আশান্বিত যে বাংলাদেশ চীন উভয়েই এ বিষয়ে সচেতন এবং চীনের সহযোগিতায় বেশ কিছু সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বর্তমানে চলমান। আরও কিছু পরিবেশবান্ধব অন্যান্য প্রকল্পও পাইপলাইনে আছে।
এখানে একটা কথা না বলে পারছি না, আজকাল অনেকেই আবার চীনা প্রকল্প ঋণের ভেতর ‘ঋণের ফাঁদের’ জুজু দেখেন। প্রথমেই বলছি ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে চীন তিনটি বিষয়ে কক্ষনোই আপস করে না, বিষয় তিনটিকে চীনা ভাষায় একত্রে বলা হয় ‘সান কুং’ এগুলো হলো ‘সমন্বিত আলোচনা (ডিসকাস টুগেদার বা কুং সাং), সমন্বিত বিনির্মাণ (বিল্ড টুগেদার বা কুং জিয়েন) ও শেয়ারিং (শেয়ারিং টুগেদার বা কুং শিয়াং)’।
কাজেই বিষয়টি মোটেই ‘শেয়াল আর কুমিরের’ গল্পের মত নয় যে এখানে কেউ চাইলেই কাউকে বোকা বানিয়ে ফাঁদে ফেলবে কারণ এখানে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো কাজটিই দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে হয়ে থাকে।
সর্বোপরি আমাদের দেশের দক্ষ অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা চুলচেরা বিশ্লেষণ করেই কেবল একটি প্রকল্পকে গ্রিন সিগন্যাল দিলেই কেবল চীনা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করে।
প্রসঙ্গত, চীনা কোনও আর্থিক প্রতিষ্ঠানই এককভাবে ঋণ সরবরাহ করে না, এক্ষেত্রে (এআইআইবি) (এনডিবি) ইত্যাদির মতো এক বা একাধিক বহুপাক্ষিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের আকার ভেদে এতে অংশ নিয়ে থাকে। সর্বোপরি বাংলাদেশ সরকারের পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) নীতির আলোকে অংশীদারিভিত্তিক প্রকল্পগুলোতে যৌথভাবেই প্রকল্প পরিচালনা হচ্ছে বিধায় এখানে সেসব ঝুঁকির বালাই নেই। প্রসঙ্গত বিদ্যুৎ খাতে চীন ও বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে গঠিত ‘বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড’ এক্ষেত্রে একটি আদর্শ উদাহরণ।
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব কর্তৃপক্ষ/ছবি সংগৃহীত
সবশেষে যে কথাটি না বললেই নয় সেটি হলো উন্নয়নের পথে চীনের এই দীর্ঘযাত্রাটিতে চীনকে পার হতে হয়েছে অনেক চড়াই উৎরাই। এগুলো সবই কিন্ত বাংলাদেশসহ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স, কেননা চীন যে পথখানি আজ পেরিয়ে গেল হয়তো কাল বা পরশু বাংলাদেশকে পাড়ি দিতে হবে সেই পথ।
কাজেই বাংলাদেশের উচিৎ হবে চীনের কাছ থেকে সেই পথ সম্পর্কে যত বেশি সম্ভব জ্ঞান আহরণ করে নেওয়া। আমি মনে করি, বাংলাদেশের উন্নতির পথে বাংলাদেশ ও চীনের ভেতরকার সহযোগিতাকে একটি বা দুটি ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ না রেখে আরও সম্প্রসারিত করলে তা উভয় দেশের জন্যই সুবিধা বয়ে আনবে, পাশাপাশি উভয় দেশের বন্ধুত্বকে আরও নিবিড় করে মানুষে মানুষে ‘পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করে’ সফল করে তুলবে ‘এক অঞ্চল এক পথ’ উদ্যোগেটিকে।
লেখক: ড. মোস্তাক আহমেদ গালিব পরিচালক, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও ‘এক অঞ্চল এক পথ’ গবেষণা কেন্দ্র, ঊহান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গণচীন।dr.ahmed.galib@whut.edu.cn
এমআরএম/এএসএম