শহরের একটি ছোট ফ্লেক্সি লোডের দোকানে মাসিক বেতনে চাকরি করেন। পরিবারে আছে মা, স্ত্রীসহ ভাই বোন। সকলকে নিয়ে খেয়ে পরে বেঁচে আছেন তিনি। তবে যেকোনো সংকটে নিজের চিন্তা না করে মানবসেবায় ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। নিজের কিংবা পরিবারের চিন্তা না করে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।
Advertisement
পটুয়াখালী শহরে মানবিক কাজ করে ইতোমধ্যে সকল মহলের প্রসংশা কুড়িয়েছেন শহরের পার্কপাড়া এলাকার বাসিন্দা মাহমুদুল হাসান রায়হান (২৮)।
মাহমুদ হাসান রায়হান ছোটবেলা থেকেই সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী কাজ করেন। তবে রায়হানের কাজে বিশেষ কিছু ভিন্নতা রয়েছে। তিনি নিজেই সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা নিয়ে বিভিন্ন কাজে নেতৃত্ব দিয়ে মানবসেবামূলক কাজ করছেন। এসব কাজে ইতোমধ্যে সারাদেশে মডেল হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছেন।
রায়হান এসব মানবিক কাজ করার জন্য ‘পটুয়াখালী বাসী’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তৈরি করেছেন। আর এ কারণে পটুয়াখালীর মানুষের কাছে রায়হান ‘মানবিক রায়হান’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
Advertisement
কথা হয় রায়হানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই মানুষের দুঃখে আমার মন কাঁদে। যখনই একটু সুযোগ পাই এক গ্লাস পানি দিয়ে হলেও অসহায় মানষুকে সেবা করার চেষ্টা করি। এখনও নিজের কাজের পাশপাশি যেটুকু সময় পাই সেই সময় মানবসেবামূলক কাজ করার চেষ্টা করি।
তিনি বলেন, আমার সঙ্গে মানবিক বোধ সম্পন্ন অনেক যুবক যোগ হয়েছে। তাদের নিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করি। আগে বিভিন্ন দুর্যোগে ত্রাণ সহায়তা কিংবা শীতের সময় শীতবস্ত্র বিতরণ করলেও এখন কিছু ভিন্ন কাজ করছি। অসহায় মানুষগুলোকে পুনর্বাসন করার চেষ্টা করছি। এজন্য আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করছি। সম্প্রতি আমরা শহরের বিভিন্ন এলাকার অসহায় মানুষকে বীনামূল্যে ভ্যান দিয়েছি। এসব ভ্যানে তারা শাকসবজি বিক্রি করছেন। এছাড়া অসহায় নারীদের পূনর্বাসনের জন্য সেলাই মেশিন বিতরণ করছি। যাতে বাড়িতে বসেই তারা দৈনন্দিন আয় করে সংসার চালাতে পারে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে রায়হান বলেন, আমি চাই প্রতিটি পরিবারের সন্তানরা যেন মানবসেবামূলক কাজ করে, বিশেষ করে স্বেচ্ছাসেবী কাজে নিয়োজিত থাকে। এতে করে সমাজের অসহায় মানুষগুলো ভালো থাকবে।
রায়হানের এসব স্বেচ্ছাসেবী কর্মকাণ্ড শহরের সকল মহলেই প্রশংসা কুড়িয়েছে। পটুয়াখালীর সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসরিন মোজাম্মেল এমা বলেন, রায়হানের মধ্যে কিছু ক্রিয়েটিভিটি রয়েছে। বিশেষ করে ওর উদ্ভাবনী শক্তিগুলো আমাদের প্রেরণা যোগায়। গত রমজান মাসেই রায়হান একটি কাজ শুরু করেছিলো। প্রতিদিন বিকেলে সড়কের পাশে ইফতার সাজিয়ে রাখতো। যার প্রয়োজন হতো সে একটি ইফতারের প্যাকেট নিয়ে যেত। রায়হানের এমন উদ্যোগ পরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া রায়হান পটুয়াখালী শহরে প্রথম অক্সিজেন ব্যাংক কার্যক্রম শুরু করে। আমি সেসময় ওকে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে সহযোগিতা করেছিলাম। পরবর্তীতে রায়হানের দেখাদেখি অনেকেই অক্সিজেন সেবা কার্যক্রম শুরু করে।
Advertisement
পটুয়াখালী পৌরসভার মেয়র মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর সরকার যখন লকডাউন ঘোষণা করে সেসময় অসহায় মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জন্য আমরা হটলাইন সেবা কার্যক্রম শুরু করি। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো ত্রাণের লাইনে দাঁড়াতে পারতো না। এমন মানুষগুলো ফোন করলে রাতের আঁধারে সেসব বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেয়া হতো। আর এই পুরো প্রক্রিয়াটি রায়হান তার স্বেচ্ছাসেবী টিম নিয়েই করেছে।
এছাড়া করোনা সংক্রমণ শুরুর দিকে শহরের হোটেল রেস্তোরাঁগুলো যখন বন্ধ ছিলো তখন শহরের কুকুরগুলো অভুক্ত থাকতো এবং বিভিন্ন মানুষকে আক্রমণ করতো। এমন পরিস্থিতিতে রায়হানের টিম পটুয়াখালী পৌরসভার সহযোগিতায় শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে ঘুরে অভুক্ত কুকুরদের খিচুড়ি বিতরণ করতো বলেও জানান মেয়র। মানবসেবামূলক কার্যক্রমের পাশপাশি দেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিষয়ে নতুন প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানাতে কাজ করেন রায়হান। প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চ এবং ৮ই ডিসেম্বর পটুয়াখালী মুক্তদিবস উপলক্ষে তরুণ প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মুখে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা শোনার আয়োজন করেন।
এফএ/এমএস