বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানির (বেক্সিমকো) ‘সুকুক’-এর লেনদেন শুরু হয়েছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)। এর মাধ্যমে দেশের শেয়ারবাজারে প্রথম কোনো সুকুকের লেনদেন শুরু হলো।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের নিকুঞ্জ ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সুকুকের লেনদেন শুরু করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান ফজলুর রহমান।
ডিএসই-এর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমানের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম।
ডিএসই জানিয়েছে, ‘এন’ ক্যাটাগরিভুক্ত বেক্সিমকো গ্রীন সুকুক আল ইস্তিসনা বন্ডের ডিএসইতে ট্রেডিং কোড হচ্ছে- ‘BEXGSUKUK’ এবং কোম্পানি কোড ২৬০০৮।
Advertisement
বেক্সিমকো লিমিটেডের টেক্সটাইল ইউনিটের কার্যক্রম বাড়ানো এবং বেক্সিমকোর দুটি সরকার অনুমোদিত সাবসিডিয়ারি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের (তিস্তা সোলার লিমিটেড এবং করতোয়া সোলার লিমিটেড) বাস্তবায়নের পাশাপাশি পরিবেশ উন্নয়ন এবং সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে গত বছরের জুনে বিএসইসি প্রতিষ্ঠানটির তিন হাজার কোটি টাকার গ্রিন সুকুক অনুমোদন করে।
পাঁচ বছর মেয়াদি সিকিউরড কনভার্টেবল অথবা রিডেম্বল অ্যাসেট ব্যাকড এই সুকুক বিএসইসি থেকে অনুমোদন পাওয়া প্রথম গ্রিন সুকুক। তিন হাজার কোটি টাকার এই গ্রিন সুকুকের ৭৫০ কোটি টাকা আইপিওতে উত্তোলনের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়। বাকি দুই হাজার ২৫০ কোটি টাকা প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর বেক্সিমকো তিন হাজার কোটি টাকার সুকুক বন্ডের মধ্যে পাবলিক অফারে ৭৫০ কোটি টাকা সংগ্রহের জন্য গত বছরের ১৬ আগস্ট চাঁদা সংগ্রহ শুরু করে। যার জন্য প্রথম দফায় নির্ধারিত সর্বশেষ সময় ছিল ২৩ আগস্ট বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত।
প্রথম দফায় বন্ডটির চাহিদার ৭৫০ কোটি টাকার বিপরীতে ৭১ জন বিনিয়োগকারী আবেদন করেন। এই বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আবেদন আসে ৫৫ কোটি ৬১ লাখ ৫৫ হাজার টাকার বা ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ।
Advertisement
চাহিদার মাত্র ৭ শতাংশের কিছু বেশি আবেদন পড়ায় সাবস্ক্রিপশনের বা আবেদনের সময় ১০ কার্যদিবস বাড়ায় বেক্সিমকো, যা শেষ হয় ৬ সেপ্টেম্বর। এ দফাতেও বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে খুব একটা সাড়া মেলে না। মাত্র একজন বিনিয়োগকারী ১০ লাখ টাকার আবেদন করেন। এর মাধ্যমে বন্ডটিতে মোট আবেদন পড়ে ৫৫ কোটি ৭১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, যা চাহিদার (৭৫০ কোটি টাকা) মাত্র ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
ডেবট সিকিউরিটিজ রুলসের ১২(২) এ ধারায় অনুযায়ী, পাবলিক অফারের যে কোনো সিকিউরিটিজে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ আবেদন জমা পড়তে হবে। এছাড়া আন্ডাররাইটারের (অবলেখক) ২০ শতাংশ আবেদনের পড়লেও যদি ৫০ শতাংশের কম হয়, তাহলে ইস্যুটি বাতিল হবে।
আইনের এই বিষয়টি তুলে ধরে সাবস্ক্রিপশনের মেয়াদ আরও এক মাস সময় বাড়িয়ে দেয় পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন।
নতুন করে সময় পেয়ে গত বছরের ২১ ডিসেম্বর সুকুকের জন্য তিন হাজার কোটি টাকার সংগ্রহ শেষ করে এর উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো লিমিটেড।
তিন হাজার কোটি টাকার মধ্যে ২৬টি প্রতিষ্ঠান দিয়েছে দুই হাজার ১০৩ কোটি টাকা। এছাড়া দুই কোটি টাকা পাওয়া গেছে বর্তমান শেয়ারধারীদের কাছ থেকে। ১৩৫ কোটি টাকা সংগ্রহ হয়েছে আন্ডাররাইটার, ৪২৩ কোটি টাকা এসেছে পাবলিক সাবক্রিপশন থেকে এবং ৩৩৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা পাওয়া গেছে বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে।
সুকুকের বিনিয়োগকারীরা চাইলে তাদের ইউনিটগুলো বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারে রূপান্তর করে নিতে পারবেন। প্রতি বছর সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ হারে এটি করা যাবে। এজন্য নির্ধারিত রেকর্ড ডেটের আগের ২০ দিনে বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারের দামের যে ভারিত গড় হবে, তার ২৫ শতাংশ কমে এ শেয়ার পাবেন সুকুকধারীরা।
অর্থাৎ উল্লিখিত সময়ে বেক্সিমকোর শেয়ারের গড় দাম ১০০ টাকা হলে রূপান্তর মূল্য হবে ৭৫ টাকা। তার মানে এক হাজার টাকার সুকুকের বিপরীতে মিলবে ১৩ দশমিক ৩৩টি শেয়ার। কেউ প্রথম বছর রূপান্তর না করলেও পরবর্তী বছরে এ সুযোগ নিতে পারবে। কেউ একেবারেই রূপান্তর না করলে, মেয়াদ শেষে নিয়ামানুযায়ী বিনিয়োগ করা টাকা ফেরত পাবেন।
এই সুকুকের প্রতি ইউনিটে অভিহিতমূল্য নির্ধারণ করা হয় ১০০ টাকা। সুকুকটির নূন্যতম সাবস্ক্রিপশন পাঁচ হাজার টাকা ও ন্যূনতম লট ৫০টি। সুকুকটির সর্বনিম্ন প্রিয়ডিক ডিস্ট্রিবিউশন রেট ৯ শতাংশ। এর ট্রাস্টি ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। আর ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে কাজ করে সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্সেস ও অগ্রণী ইক্যুইটি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট।
এমএএস/এএএইচ/জেআইএম